পেঁয়াজের বাজারে ‘সিঁদুরে মেঘ’

পেঁয়াজ
পেঁয়াজ

দাম বাড়ার মিছিলে সাড়ম্বরে যোগ দিল পেঁয়াজ। মাত্র দুই দিনে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে। সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে দেশি পেঁয়াজ।

ঢাকার কাজীপাড়া বাজারে গত বৃহস্পতিবার যে দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গিয়েছিল, সেটি গতকাল শনিবার ৬৫ টাকা চেয়েছেন বিক্রেতারা। বাছাই করা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আর ৪০ টাকা কেজির ভারতীয় পেঁয়াজের দাম উঠেছে ৬০ টাকায়।

আরেকটু পেছনে তাকালে দেখা যাবে, পেঁয়াজের বাজারে কতটা সুসময় ছিল। এক মাস আগেই দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। আর ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

দেশের বাজারে হঠাৎ লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার কারণ, ভারতে মূল্যবৃদ্ধি। ভারতীয় গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, দেশটিতে বৃষ্টিতে মজুত থাকা পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই কারণে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতেও বিলম্ব।

কারওয়ান বাজার থেকে গতকাল দুই হাতে ২০ কেজি পেঁয়াজ নিয়ে ফিরছিলেন কামরুল ইসলাম। থামিয়ে জানতে চাইলে বললেন, গত বছর তাঁকে ২৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এবার আগেই কিনে রাখছেন।

ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলেই আতঙ্কিত হয়, ক্রেতার অবস্থাও হয়েছে তেমন। গত বছর দেশে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। মূল্যবৃদ্ধির শুরুটা হয়েছিল ভারত থেকে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়।

ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য প্রতি টন ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রপ্তানিই নিষিদ্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে শতক হয়, দ্বিশতক হয়। নভেম্বরে ৩০০ হাঁকায় পেঁয়াজ। তখন আকাশপথেও আমদানি করতে হয়।

কারওয়ান বাজারে পাইকারি দোকানে চার ধরনের দেশি পেঁয়াজ রয়েছে। রাজশাহী ও পাবনার দেশি পেঁয়াজের দাম ৬২ থেকে ৬৪ টাকা কেজি। ফরিদপুরের দেশি জাতের পেঁয়াজের কেজি ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা। কিং নামের একটি জাতের দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। আর ভারতীয় বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা কেজি।

কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মাসুদ হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ ধরেই বাজার একটু বাড়তি ছিল। গত দুই দিনে বেশি বেড়েছে।

ভারতের পত্রিকা ‘ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস’-এর অনলাইন সংস্করণে গতকাল ‘অন দ্য রাইজ: অনিয়ন প্রাইসেস থ্রেটেন টু স্কাই-রকেট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গত শুক্রবার ভারতের সবচেয়ে বড় পাইকারি পেঁয়াজের বাজার মহারাষ্ট্রের লাসালগাঁওয়ে প্রতি কেজির সর্বনিম্ন দাম ওঠে ১০ রুপি ও সর্বোচ্চ ২৪ রুপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ আগামী অক্টোবরে বাজারে আসবে। এমন পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষি সমিতির সভাপতি ভারত দিঘোলে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর চাষিরা ন্যায্য দাম পেতে শুরু করেছেন। সরকার দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো পদক্ষেপ নিলে আমরা প্রতিরোধ করব।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, বাংলাদেশে গত মৌসুমে সাড়ে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। অবশ্য উৎপাদন ও চাহিদার হিসাব নিয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। আমদানি হওয়া পেঁয়াজের প্রায় ৯৫ শতাংশ আসে ভারত থেকে। কোনো কারণে ভারত থেকে আমদানিতে বিঘ্ন হলে অন্য দেশে পেঁয়াজের খোঁজ করেন আমদানিকারকেরা।

পেঁয়াজের দাম এমন সময় বেড়ে গেল, যখন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশ চড়া। চাল, ভোজ্যতেল, সবজি, আলু, ডিম, আদা ইত্যাদির দাম বেড়েছে। অন্যদিকে করোনা ও বন্যা মানুষের আয় কমিয়েছে। তবে একটা ভালো খবরও দিলেন পুরান ঢাকার শ্যামবাজারকেন্দ্রিক আমদানিকারক আবদুল মাজেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ মোটামুটি ভালো।