পৌনে দুই বছরে এক লাখ কোম্পানির সন্ধান

এনবিআরের করপোরেট কমপ্লায়েন্স টাস্কফোর্স গত পৌনে দুই বছরে ৮৯ হাজার ৬৭২টি টিআইএনবিহীন কোম্পানি চিহ্নিত করেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত পৌনে ২ বছরে ৮৯ হাজার ৬৭২টি টিআইএনবিহীন কোম্পানির সন্ধান পেয়েছে। এসব কোম্পানি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নিলেও এনবিআর থেকে কর শনাক্তকরণ নম্বর নেয়নি। এ নিয়ে এনবিআরের করপোরেট-বিষয়ক টাস্কফোর্স কাজ শুরু করে ২০২০ সালের আগস্টে। প্রথমে আরজেএসসি থেকে তালিকা নিয়ে টিআইএনবিহীন কোম্পানিগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর তাদের টিআইএন নিতে বাধ্য করে এনবিআর।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জুনে সব মিলিয়ে ৭৬ হাজার ৭৫৬টি কোম্পানির টিআইএন ছিল। ১১ এপ্রিল সোমবার পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২৮। এর মানে ২১ মাসে ৮৯ হাজার ৬৭২টি নতুন কোম্পানির সন্ধান পেয়েছে এনবিআর। এসব কোম্পানিকে নোটিশ পাঠিয়ে টিআইএন দিয়েছে এনবিআর। এত দিন এই কোম্পানিগুলো লাভ-লোকসান-নির্বিশেষে বার্ষিক রিটার্ন ও কর দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়নি।

কর্মকর্তারা জানান, এসব কোম্পানির অর্ধেকের বেশিই রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। সেখান থেকে ঠিকানা ও পরিচালকদের নাম সংগ্রহ করা হয়। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোম্পানির নামে টিআইএন ইস্যু করা হয়। এখন থেকে কোম্পানিগুলোকে প্রতিবছর রিটার্ন দিতে হবে। লাভ-ক্ষতি-নির্বিশেষে ন্যূনতম করও দিতে হবে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের আগস্টে গঠিত এনবিআরের করপোরেট কমপ্লায়েন্স-বিষয়ক টাস্কফোর্স প্রথম এক বছর কাজ করার পর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দেয়। তাতে দেখা যায়, বহু কোম্পানি বছরের পর বছর রিটার্ন দেয় না, এমনকি তাদের টিআইএন পর্যন্ত নেই। এ ছাড়া একই ঠিকানা ব্যবহার করে আরজেএসসি থেকে একাধিক কোম্পানি নিবন্ধন নিয়েছে। বাস্তবে ওই ঠিকানায় কোম্পানিগুলো নেই। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কারওয়ান বাজারের মাত্র দুটি ঠিকানা ব্যবহার করে ১ হাজার ৪০০ কোম্পানি নিবন্ধন নেয়। মূলত আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করেই এসব কোম্পানি নিবন্ধন নিয়েছে।

আবার বেশ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী একাধিক কোম্পানি খুলে পরিচালনা করলেও টিআইএন নেয়নি। যেমন চট্টগ্রামের একটি শিল্পগোষ্ঠীর অধীন সেবা, ট্রেডিং ও উৎপাদনের খাতে ৪৬টি কোম্পানি থাকলেও মাত্র ৪টির নামে টিআইএন রয়েছে বলে এনবিআর টাস্কফোর্স জানতে পেরেছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, টাস্কফোর্সের কার্যক্রম থামানো যাবে না। টিআইএন দিয়েই কাজ শেষ করা যাবে না। কোন কোন কোম্পানি টিআইএন নিয়েও রিটার্ন দিচ্ছে না, তা-ও তদারকিতে আনতে হবে। টিআইএন নিয়েও রিটার্ন জমা দেয় না, এমন ১০টি কোম্পানিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে বাকিরা এমনিতেই রিটার্ন দেবে।

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আরও বলেন, আরজেএসসি থেকে নিবন্ধন নিয়ে টিআইএন না নেওয়া ও রিটার্ন না দেওয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে একধরনের অন্যায় হচ্ছে। এ অন্যায় প্রতিরোধে শিথিলতা দেখানো যাবে না।

রিটার্ন দেয় খুবই কম

দেশে প্রতিবছর গড়ে ২৮ থেকে ২৯ হাজার কোম্পানি তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব জানিয়ে এনবিআরে রিটার্ন জমা দেয়। কিন্তু গত দুই বছরে হাজার হাজার কোম্পানি নতুন করে টিআইএন নিয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে, অর্থাৎ গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২২ হাজার কোম্পানি রিটার্ন দিয়েছে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া সব কোম্পানি প্রতিবছর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বার্ষিক রিটার্ন জমা দিয়ে থাকে। তবে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান সময় বাড়িয়ে ১৫ মের মধ্যে রিটার্ন দেয়। এনবিআর কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবার রিটার্ন জমা দেওয়া কোম্পানির সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা অবশ্য স্বীকার করেন, রাতারাতি সব কোম্পানিকে রিটার্ন দিতে বাধ্য করা যাবে না। এনবিআরের লক্ষ্য হলো বার্ষিক রিটার্ন জমাকারী কোম্পানির সংখ্যা ২০২৩ সালে ৫০ হাজারে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ১ লাখে উন্নীত করা।

আরও ৩০ হাজার টিআইএনবিহীন

আরজেএসসির সর্বশেষ হিসাবমতে, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি, বিদেশি ও একক ব্যক্তির কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার। কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত সব কোম্পানির টিআইএন নেওয়া এবং বছর শেষে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এনবিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এখনো ৩০ হাজার কোম্পানি টিআইএন নেয়নি। এসব কোম্পানিকে এখন টিআইএন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।