প্রতিযোগী দেশের তুলনায় ভালো অবস্থায় বাংলাদেশ

  • চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২৯০ কোটি ডলার বা ২৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।

  • চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ শতাংশ ৫৪ শতাংশ কম পোশাক রপ্তানি হয়েছে।

  • করোনায় নতুন করে বাজারটিতে খারাপ সময়ের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ।

চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ২৯০ কোটি ডলার বা ২৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা গত মার্চ থেকে পোশাক আমদানি কমিয়ে দেন। সেই প্রভাব এখনো কাটেনি। ফলে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বাজারটিতে ২৯০ কোটি ডলার বা ২৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম।
বাংলাদেশে পোশাক রপ্তানি এতটা কমে যাওয়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশের চেয়ে চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি আরও বেশি কমেছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। তার চেয়ে বড় কথা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) ৩ হাজার ৩৮৭ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৬০ শতাংশ কম।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) দেওয়া পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গত বছর ৮ হাজার ৩৮০ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

বিদায়ী বছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। চলতি বছরের প্রথম মাসে ৬২ কোটি ডলার রপ্তানির বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৭ শতাংশ। পরের মাসেও প্রবৃদ্ধি হয় ১১ শতাংশ। মার্চ ও এপ্রিলেও রপ্তানি নেতিবাচক হয়নি। তবে মে মাসে গিয়ে রপ্তানি ১২ শতাংশ কমে যায়। সাত মাস শেষে ২৯০ কোটি ডলারের রপ্তানি হলেও তা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১৮ শতাংশ কম।

জানা যায়, ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমে যায়। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এ বাজারে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ। গত বছর ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়, এ আয় ২০১৮ সালের চেয়ে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।

পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, ২০১৮ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ও বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পেতে বাংলাদেশে বেশি ক্রয়াদেশ দিতে শুরু করে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। রপ্তানিও আনুপাতিক হারে বাড়তে থাকে। তবে করোনায় নতুন করে বাজারটিতে খারাপ সময়ের মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ বেশি আসছে। তবে তা কারখানাগুলোর সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম। ফলে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রয়াদেশ বেশি আসছে। তবে তা কারখানাগুলোর সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম। ফলে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। আগামী এক–দুই মাসে রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নেতিবাচক ধারা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। ডিসেম্বর থেকে বাজারটিতে রপ্তানি বাড়তে পারে।

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ খারাপ করছে না। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পোশাকের মূল্য। ক্রেতারা করোনার অজুহাত দেখিয়ে অনেক কম দাম অফার করছেন। উদ্যোক্তারা বাধ্য হয়ে সেই কম দামেই ক্রয়াদেশ নিচ্ছেন। না নিলে কারখানাগুলো আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির শীর্ষস্থান নিয়ে চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে। গত মে পর্যন্ত ভিয়েতনাম প্রথম স্থানে ছিল। জুনে সেটি দখল করে নিয়েছে চীন। তবে দেশটির পোশাক রপ্তানি চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৪৯ শতাংশ ৩৪ কমে গেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের সঙ্গে করোনাভাইরাস যোগ হওয়ায় এ দুর্দশা হয়েছে। তাতে সাত মাস শেষ যুক্তরাষ্ট্রে ৭৩৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করছেন চীনের উদ্যোক্তারা। বাজারটিতে চীনের হিস্যা নামতে নামতে ২৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ হয়েছে। গত বছর শেষে চীনের হিস্যা ছিল ২৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনাম আবার দ্বিতীয় স্থানে চলে গেলেও রপ্তানি কমার দিক থেকে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ভিয়েতনাম ৬৯৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কম। তাদের বাজার হিস্যা ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ হিস্যা নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চতুর্থ ও পঞ্চম সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া ও ভারত। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ইন্দোনেশিয়া ২০৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। দেশটির রপ্তানি কমেছে ১৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের রপ্তানি করেছে ১৭৫ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি কমেছে ৩৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।