ফণীতে চুয়াডাঙ্গার কৃষকের ক্ষতি ৩ কোটি টাকার বেশি

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে খেতের ধান মাটিয়ে নুইয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও জমির ধান পানির নিচে গেছে তলিয়ে। সম্প্রতি সরেজমিনে দামুড়হুদা উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামে গেলে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের দুই পাশজুড়ে খেতেও একই দশা। এই অবস্থার মধ্যে শ্রমিকদের সঙ্গে খেতমালিকেরাও ধান কাটছেন।

কৃষক মিজানুর রহমান বললেন, তাঁর দেড় বিঘা জমির ধান পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাঁর কথা, ধান কেটে দ্রুত রোদে শুকিয়ে সেদ্ধ করতে না পারলে তা কলিয়ে (অঙ্কুরোদ্‌গম) যাবে।

আবুল হাসান নামের আরেক কৃষক বললেন, তাঁর সাড়ে তিন বিঘা জমির ধানের মধ্যে এক বিঘা পানিতে তলিয়ে গেছে। আড়াই বিঘার ধান নুইয়ে পড়ছে।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ৩ ও ৪ মে টানা ২৬ ঘণ্টার অতিবৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গায় ১ হাজার ৯৭ হেক্টর জমির ধান, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি, মুগডাল ও তরমুজখেত আক্রান্ত হয়েছে। এতে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। মাঠপর্যায়ে জরিপ শেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, মাঠপর্যায়ে জরিপ শেষে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।

এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় মোট ৩৪ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছিল। এসব জমিতে মোট ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন। অতিবৃষ্টিতে ৭০২ হেক্টর জমির ধান আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধান উৎপাদন কমেছে ৬৩০ মেট্রিক টন। সরকারি হিসাবে শুধু বোরো ধানেই ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ১ কোটি ৮ হাজার টাকা।
এ ছাড়া, ২ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি আবাদ করা হয়। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬০ হেক্টর জমির শাকসবজি। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৪০ লাখ ৪ হাজার টাকা। ১ হাজার ৭৮৫ হেক্টর জমির মুগডালের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬০ হেক্টরের মুগডাল। আর্থিক ক্ষতি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৩১৫ হেক্টর তরমুজসহ আবাদকৃত অন্যান্য ফসলের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭৫ হেক্টরের ফসল। আর্থিক ক্ষতি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব মিলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, ফণীর প্রভাবের আগেই কৃষকেরা অন্তত ৮০ শতাংশ জমির ধান কেটে ঘরে তুলে ফেলায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। অবশিষ্ট ধানের মধ্যে কিছু পাকা ধান ঝড়বৃষ্টির আগে কাটা হলেও সময় ও শ্রমিকের অভাবে মাঠ থেকে বাড়িতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। কিছু ধান কাটা বাকি থাকায় সেগুলোর একটা বড় অংশ মাটিতে নুইয়ে ও পানিতে তলিয়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ৩ মে বেলা ১টা ১০ মিনিট থেকে ৪ মে বেলা ৩টা পর্যন্ত টানা ২৬ ঘণ্টা অতিবৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মোট ৮৭ মিলিমিটার।