বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলনে প্যারাডাইস কেবলসের শ্রমিকেরা

১৩ মাসের বকেয়া মজুরির দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল সোমবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন প্যারাডাইস ক্যাবলসের শ্রমিকেরা। ছবি: সংগৃহীত
১৩ মাসের বকেয়া মজুরির দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল সোমবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন প্যারাডাইস ক্যাবলসের শ্রমিকেরা। ছবি: সংগৃহীত

১৩ মাসের বকেয়া মজুরির দাবিতে নারায়ণগঞ্জের প্যারাডাইস কেবলসের শ্রমিকেরা টানা তিন দিন ধরে রাজধানীর বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। গতকাল সোমবার দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ মঙ্গলবারও অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

বকেয়া মজুরির দাবিতে গত রোববার শ্রম ভবনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন প্যারাডাইস কেবলসের শ্রমিকেরা। গতকাল সকালে সেখান থেকে তাঁরা স্মারকলিপি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশ আটকে দিলে তাঁরা সেখানেই সমাবেশ করেন। পরে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। প্যারাডাইস কেবলস লিমিটেড শ্রমিক ইউনিয়নের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

প্যারাডাইস কেবলস লিমিটেড শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি কাজী রুহুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, শ্রমিকনেতা দুলাল সাহা, জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

শ্রমিকনেতারা অভিযোগ করেন, মালিকপক্ষ পরিকল্পিতভাবে সময়ক্ষেপণ করে ১৩ মাস ধরে শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করছে না। এমনকি শ্রমিকের তিন বছরের ওভারটাইমের ভাতা বকেয়া রয়েছে। বিগত তিন বছরের অর্জিত ছুটির টাকা, ঈদ বোনাসসহ অন্যান্য পাওনা বকেয়া রেখেছে। ফলে, বহু বছর ধরে কারখানাটিতে কর্মরত স্থায়ী শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

শ্রমিকনেতারা জানান, গত ২১ এপ্রিল শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের দুই মাসের বকেয়া বেতন কিস্তিতে পরিশোধ করার চুক্তি করে মালিকপক্ষ। তবে করোনাভাইরাসের সুযোগ নিয়ে মালিকপক্ষ শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করছে না। অন্যদিকে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তারাও দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন।

সমাবেশ শেষে আন্দোলনরত শ্রমিকেরা শ্রম ভবনে সামনে এসে পুনরায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বকেয়া পাওনার বিষয়টি সুরাহা না হলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্যারাডাইস কেবলস লিমিটেড শ্রমিক ইউনিয়ন।

প্যারাডাইস কেবলসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১৯৮৯ সালে প্যারাডাইস কেবলসের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৭ সালে ভারত, নেপাল ও ভুটানে বৈদ্যুতিক তার রপ্তানি করে। ২০১১ সালে দুবাইয়ে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে প্যারাডাইজ কেবলস। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রনিকে বৈদ্যুতিক তার রপ্তানি করে। ২০০৮ সালে প্যারাডাইজ কেবলসের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন রপ্তানিমুখী বৈদ্যুতিক তার উৎপাদনের জন্য সালেহা ওয়্যারস নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

শ্রমিকের বকেয়া মজুরির বিষয়ে জানতে গতকাল প্যারাডাইস কেবলসের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

আজ মঙ্গলবার সকালে জানতে চাইলে শ্রমিকনেত্রী জলি তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বকেয়া মজুরি পরিশোধের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।