বন্দর এলাকায় বেসরকারি জেটি তৈরির সুযোগ

চট্টগ্রাম বন্দর
ফাইল ছবি

মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন আইনে দুই বন্দরের জলসীমায় বেসরকারি খাতে জেটি নির্মাণের সুযোগ রাখা হয়েছে। সরকারের অনুমোদনে বন্দর কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত শর্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এই অনুমোদন দিতে পারবে বলে আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে।

৩ এপ্রিল মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আইন, ২০২১-এর গেজেট প্রকাশিত হয়। আর সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২১–এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।

এত দিন ধরে দেশের দুই বন্দর পরিচালিত হয়ে আসছিল ১৯৭৬ সালের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর অধ্যাদেশ অনুযায়ী। অধ্যাদেশের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বেসরকারি জেটি নির্মাণ করতে পারবেন না। অবশ্য অধ্যাদেশের ১৮ ধারায় বলা হয়, কর্তৃপক্ষ চাইলে শর্ত সাপেক্ষে লিখিত আদেশে কোনো ব্যক্তিকে জেটি নির্মাণের অনুমতি দিতে পারে।

পুরোনো অধ্যাদেশ রহিত করে এখন নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। নতুন আইনে সরকারের অনুমোদনক্রমে বন্দর কর্তৃপক্ষকে জেটি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

দেশে বেসরকারি খাতে টার্মিনাল (একাধিক জেটিসহ পুরো অবকাঠামো) নির্মাণের প্রথম প্রস্তাবনা দিয়েছিল স্টিভিডোরিং সার্ভিসেস অব আমেরিকা বা এসএসএ। ১৯৯৮ সালে সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের অনুমতিও দিয়েছিল। কিন্তু পরে উচ্চ আদালত ওই অনুমতি বাতিল করে দেয়।

২০১৮ সালে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া এলাকায় বেসরকারি খাতে বন্দর নির্মাণের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপ আবেদন জানিয়েছিল। ‘বসুন্ধরা পোর্ট ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনাল’ নামে প্রস্তাবিত বন্দরে কনটেইনার ও সাধারণ পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য চারটি জেটি নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।

ভবিষ্যতে কী হবে

বেসরকারি খাতে জেটি নির্মাণের অনুমোদন কীভাবে দেওয়া হবে, জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, কোন শর্তে অনুমোদন দেওয়া হবে, সে জন্য নীতিমালা করতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের আইন এখনো পাস না হওয়ায় তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।

চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় কর্ণফুলী নদীতে বহু আগে থেকেই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিশেষায়িত জেটি রয়েছে। পুরোনো অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এসব জেটি নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিল বন্দর।

অগ্রাধিকার

কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে সক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য ওঠানো-নামানো হচ্ছে। এতে বছরের বেশির ভাগ সময় এই বন্দরে জাহাজজট লেগে থাকে। গত ১৩ বছরে বন্দরে নতুন কোনো সমুদ্রগামী জেটি নির্মাণ করা হয়নি। সর্বশেষ নির্মাণাধীন পতেঙ্গা টার্মিনাল এ বছর চালু হতে পারে। এ জন্য বেসরকারি খাতে জেটি নির্মাণ করতে চান ব্যবসায়ীরা।

জানতে চাইলে সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি জেটি নির্মাণের সুযোগ রাখা ইতিবাচক। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেসরকারি জেটিতে পণ্য ওঠানো-নামানোর মাশুল যাতে বেশি না হয়।

তবে অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পুরোপুরি বেসরকারি খাতে জেটি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঠিক হবে না। এটাতে নানা সমস্যা তৈরি হবে। সবচেয়ে ভালো হবে, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির ভিত্তিতে জেটি বা বন্দর নির্মাণ।