বাল্যবিবাহ ঠেকাতে বিনা সুদে ঋণ দেবে আইপিডিসি

বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

বাল্যবিবাহ ঠেকাতে চলতি মাস থেকে বিনা সুদে ঋণ বিতরণ করতে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স। শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের তিন জেলায় ৫০ পরিবারকে দেওয়া হবে এ ঋণ। এখন চলছে বাছাইয়ের প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারগুলোর হাতে ঋণের চেক হস্তান্তর করা হবে। আমাল ফাউন্ডেশন নামের বেসরকারি সংস্থা আইপিডিসির এ ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা তিনটি জেলায় বিনা সুদে ঋণ দিতে যাচ্ছি। এ খবর শোনার পর অনেক পরিবার আবেদন করেছে। আমরা এখন আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করছি। আশা করছি চলতি মাসের মাঝামাঝিতে বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হবে। আর এ মাসের শেষের দিকে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’

আইপিডিসি বলছে, নির্বাচিত পরিবারগুলোকে ১৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। বাল্যবিবাহ ঠেকাতে ঋণ প্রদান দেশে এটাই প্রথম। এ ধরনের ঋণ চালুর কারণ হিসেবে আইপিডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় দেশে বাল্যবিবাহ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণেই মূলত এ প্রবণতা বেড়েছে। তাই আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানান আইপিডিসির কর্মকর্তারা।

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালে করোনার সাত মাসে দেশের ২১ জেলার ৮৪ উপজেলায় ১৩ হাজার ৮৮৬টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, খরচ কমাতেই দরিদ্র পরিবারগুলো মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া বাল্যবিবাহ রোধ করতে তাই বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও আমাল ফাউন্ডেশন ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স এগিয়ে এসেছে।

আইপিডিসি বিনা সুদে যে ঋণ দেবে, সেই টাকায় দরিদ্র পরিবারগুলো ব্যবসার কাজে লাগাতে পারবে। চাইলে কেউ গরু কিংবা ছাগলও কিনতে পারবে। এর বাইরেও যেকোনো ব্যবসায় এ অর্থ লগ্নি করতে পারবে। এ ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ থাকবে। প্রথমত, ঋণের জন্য আবেদনকারীর মেয়েসন্তান থাকতে হবে। তাদের বয়স হতে হবে ১৪ থেকে ১৮ বছর। আর মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেওয়া যাবে না। কন্যাসন্তানের সর্বনিম্ন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

ঋণের টাকা পরিবারগুলো যে ব্যবসায় খাটাবে, সেখানে তদারকির পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেবে আমাল ফাউন্ডেশন। ব্যবসার লাভ থেকে ঋণের টাকা শোধ করতে পারবেন ঋণগ্রহীতা। অথবা মেয়েসন্তান চাকরি পাওয়ার পর ঋণের টাকা শোধ করার সুযোগ পাবেন।

আইপিডিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিবছর তারা পাঁচ হাজার মেয়েকে স্বাবলম্বী করতে চায়। তারই অংশ হিসেবে শুরুতে তিন জেলায় বিনা সুদের ঋণ কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। পরে ক্রমে তা অন্য জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আইপিডিসি বলছে, এ ঋণ কার্যক্রম সফল হলে মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে। পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে। আর মেয়েসন্তানদের বোঝা হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাবে সমাজে।