বিচারকেরাও বাড়ি বা ফ্ল্যাটে ঋণ পাবেন

>

• স্বল্প সুদে গৃহঋণ
• ঋণসুবিধায় জুডিশিয়াল সার্ভিসে স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে পরিপত্র

বাড়ি তৈরি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য নিম্ন আদালতের বিচারকেরাও স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণের সুবিধা পাবেন। এদিকে যেসব সরকারি কর্মচারীর চাকরির বয়স ৫৮ বছর হয়ে গেছে, তাঁরাও পাবেন এই ঋণ। আগে এই বয়সসীমা ছিল ৫৬ বছর। বিচারকদের গৃহঋণের অন্তর্ভুক্ত করে এবং সরকারি কর্মচারীদের বয়সসীমায় শিথিলতা এনে সম্প্রতি নতুন করে গৃহঋণ নীতিমালা তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার স্বাক্ষরিত এই নীতিমালার পরিপত্র জারি হয় ৬ মার্চ এবং একই দিন থেকে বাতিল বলে গণ্য হওয়ার কথা বলা হয় গত বছরের ৩০ জুলাই জারি হওয়া আগের নীতিমালাটি। আগেরটির মতো নতুন নীতিমালার নামও ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহঋণ প্রদান নীতিমালা’ এবং এটিও কার্যকর গত বছরের ৩০ জুলাই থেকে।

নীতিমালায় ‘সরকারি কর্মচারী’ বলতে বোঝানো হয়েছে সরকারের আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও কার্যালয়গুলোতে শুধু স্থায়ী পদের বিপরীতে নিয়োগ পাওয়া সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী। রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি এবং পৃথক বা বিশেষ আইনের মাধ্যমে সৃষ্ট কর্মচারীরা এ নীতিমালার বাইরে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে ১৮ ডিসেম্বর স্বল্প সুদের গৃহঋণ–সুবিধার আওতায় বিচারকদের অন্তর্ভুক্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অর্থসচিবকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালাটি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ঋণসুবিধা দেওয়ার জন্য প্রযোজ্য হলেও বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য কি না, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় মনে করে, জুডিশিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ-২০১৬-এর আওতাধীন কর্মচারীদের গৃহঋণ–সুবিধা দেওয়া সমীচীন হবে।

এরপরই নীতিমালাটি নতুন করে তৈরির কাজে হাত দেয় অর্থ বিভাগ। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যরা সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হবেন এবং এই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবেন।’

বিচারকদের অন্তর্ভুক্ত করার আগে অর্থ বিভাগের এক হিসাব অনুযায়ী, স্বল্প সুদে গৃহঋণ দিতে সরকারকে প্রতিবছর এক হাজার কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিতে হবে। এখন তা আরও বাড়বে। অর্থ বিভাগের বিশ্লেষণ হচ্ছে, ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অন্তত অর্ধেক গৃহঋণ–সুবিধা নেবেন। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিম্ন আদালতে বর্তমানে দেড় হাজারের বেশি বিচারক রয়েছেন।

নীতিমালা অনুযায়ী চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি কর্মচারীরা ২০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ–সুবিধা পাবেন। আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৮ বছর এবং ২০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বাজারে সুদের হার যা-ই থাকুক না কেন, ঋণগ্রহীতাকে পরিশোধ করতে হবে ৫ শতাংশ সরল সুদ। সুদের বাকি অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করবে।

তবে নির্বাচনের আগে গত নভেম্বর মাসে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও সুবিধাটি দেওয়া হবে জানিয়ে অর্থ বিভাগ আলাদা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল। তবে নতুন নীতিমালায় এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

সরকারি কর্মচারীদের ঋণ পাওয়ার সর্বোচ্চ বয়স ৫৬ থেকে ৫৮ করা হলো কেন এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদেরও সুবিধা দেওয়া হবে কি না, জানতে অর্থসচিবের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি জবাব দেননি।

সরকারি কর্মচারীদের ঋণ দিতে গত সেপ্টেম্বরে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সঙ্গে আলাদা সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ সই করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই দিন অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, সরকার ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দুবার সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে। মাঝখানে উপসচিব থেকে সচিব পর্যায়ের সবার জন্য দেওয়া হয়েছে গাড়ি কেনার সুযোগ। সরকারি চাকরি এখন লোভনীয়। আর এ কারণেই বোধ হয় কোটা তুলে দেওয়ার দাবি উঠেছে।

উপসচিব থেকে শুরু করে তারও উচ্চ পদের সরকারি কর্মচারীদের গাড়ি কেনার জন্য সরকার গত বছরের জুন-অক্টোবর সময়ে চারটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। অক্টোবরের পর থেকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে ঋণ পেয়ে আসছেন তাঁরা। ‘বিশেষ অগ্রিম’ নামের এই ঋণের বিপরীতে তাঁদের কোনো সুদ দিতে হচ্ছে না। এমনকি সেই টাকা দিয়ে কেনা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ, তেল খরচ ও চালকের বেতন বাবদ সরকার তাঁদের আরও দিচ্ছে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা শুরুর দিকে শুধু বেসামরিক সরকারি কর্মচারীদের জন্য করার উদ্যোগ নেওয়া হলে পরে সামরিক বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করে নীতিমালা জারি হয়।

এই পরিপত্র জারি করাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলাল চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পরিপত্রটি জারি হওয়ায় সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’