বিশেষ পরিদর্শনে নামছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র জানতে বিশেষ পরিদর্শন শুরু করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে নমুনা ভিত্তিতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন, বেসরকারি ও ইসলামি ধারার একটি করে মোট তিনটি ব্যাংক পরিদর্শন করা হবে। পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যাদি পাঠানো হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। এর ভিত্তিতে ব্যাংক খাত নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক, বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক ও ইসলামি ধারার আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংককে বিশেষ পরিদর্শনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শুরু হবে এ পরিদর্শন কার্যক্রম। পরিদর্শন কার্যক্রম চলবে ১০ দিন। তবে প্রয়োজনে পরিদর্শনের সময়সীমা আরও বাড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

৬ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রতিটি ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা চালানোর ঘোষণা দেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে একাধিক আলোচনায় ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র জানানোর নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর, দুই ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টাসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এক সভায় সিদ্ধান্ত নেন, তিন ধারার তিনটি ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন করা হবে। সেই প্রতিবেদন পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে। এতেই মিলবে পুরো ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হবে।

জানা গেছে, বিশেষ পরিদর্শনে পরিদর্শক দলের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। সাধারণত মাঠপর্যায়ে ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা দিয়ে। মন্ত্রণালয়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ পরিদর্শনের উদ্যোগ নেওয়ায় সেখানে যুগ্ম পরিচালকের পরিবর্তে ডিজিএম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যুক্ত করা হয়েছে। তিনটি ব্যাংকের জন্য পরিদর্শন দল গঠন ও পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কাজটি করবে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগ ও ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ এ পরিদর্শনে ব্যাংকগুলোর সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। বিশেষ করে কারা বড় অঙ্কের ঋণ পেয়েছেন। তার যথাযথ ব্যবহার হয়েছে কি না। এসব ঋণের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম মানা হয়েছে কি না, গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আছে কি না, এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বেসরকারি ব্যাংক মিলিয়ে জনতা ব্যাংকেই সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে। ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৩ হাজার ৬০০ কোটি এবং অ্যাননটেক্স গ্রুপের ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে বিপদে পড়েছে জনতা ব্যাংক। এর মধ্যে ক্রিসেন্টের পুরোটাই এবং অ্যাননটেক্সের ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এ কারণে বিশেষ পরিদর্শনের জন্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন এ ব্যাংকটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক বড় ধরনের সংকটে আছে। আর্থিক অবস্থার চরম অবনতির কারণে ২০১৭ সালে শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি দেশের প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি এ ব্যাংক। ফলে শেয়ারবাজারে এটি নিম্নমানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। এ কারণে বেসরকারি খাতের এ ব্যাংককে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ইসলামি ধারার ব্যাংকের মধ্যে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকটি গত কয়েক বছরে বড় ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। বড় অঙ্কের ঋণ প্রদানে ব্যাংকটির বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। তাই ব্যাংকটি সম্পর্কে ধারণা নিতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিশেষ পরিদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে প্রথম আলোকে জানান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। আর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে সাড়ে চার গুণ। এর বাইরে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। তবে ব্যাংকগুলো অবলোপন করা ঋণের ১১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা আদায়ও করেছে।