বিশ্ব অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কাঠামোগত সংস্কার

শুধু বাণিজ্য যুদ্ধ বা উচ্চ শুল্ক নয়, এই মুহূর্তে বিশ্ব অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কাঠামোগত সংস্কার। অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) বলছে, বিনিয়োগ হ্রাস ও বাণিজ্যের গতি কমে যাচ্ছে তা ঠিক। কিন্তু চ্যালেঞ্জের কথা বললে জলবায়ু ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তন অনেক বড়। আর বৈশ্বিক ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আসছে, বাণিজ্য যুদ্ধ তারই অংশ। তাই এই কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করাই সবচেয়ে বড় কথা বলে মনে করছে তারা।

ওইসিডির প্রধান অর্থনীতিবিদ লরেন্স বুন বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন দেশের সরকার যদি স্বল্পমেয়াদি রাজস্ব ও মুদ্রা নীতিগত সমাধান দেয়, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।’ ইয়াহু ফাইন্যান্সের এক সংবাদে এই তথ্য জানা গেছে। তিনি আরও বলেন,‘সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হলো, পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। এটা চক্রাকার সমস্যা নয়, এর অর্থ হলো, কাঠামোগত যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না।’

এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনেক গভীর সমস্যা থাকলেও আর্থিক বাজারে এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি মার্কিন-চীন বাণিজ্য আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশা করছেন, আগামী বছরে ভালো মুনাফা হবে।

মার্কিন বিনিয়োগ কোম্পানি মরগ্যান স্ট্যানলি আশা করছে, আগামী বছরের শুরু থেকে অর্থনীতিতে গতি আসবে, যদিও বিশ্ব অর্থনীতি ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে, সে কথা তো বলা যাবেই না, বরং ভালোর চেয়ে মন্দ কিছু ঘটার আশঙ্কাই বেশি। আর গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, বাণিজ্য নীতির বেলায় যেহেতু ভালো খবর আসছে, সেহেতু বলা যায়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে তা দূর হবে।

ওইসিডি মনে করছে, চলতি ও আগামী বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২১ সালে তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়াবে ৩ শতাংশ।

বাণিজ্যের বেলায় ওইসিডি বলছে, উত্তেজনা যদি আরও বেড়ে যায় তাহলে কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়বে। আরও উদ্বেগের খবর হলো, বিদ্যমান বাধানিষেধ দূর হলেও অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়ত হবে। এতে বড় বড় অর্থনীতির দেশগুলোতে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। ওইসিডির পূর্বাভাস, চলতি বছর এই দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

সমস্যাগুলো অনেক গভীরে প্রোথিত। এর অর্থ হলো, কেবল আরোপিত শুল্ক ফেরত নিলেই চলবে না, আরও গভীর পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ বৈশ্বিক নিয়মকানুনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে এবং যে ধরনের ভর্তুকির কারণে বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেগুলো পরিহার করতে হবে।

ওইসিডি একই সঙ্গে পরিবেশ নীতি নিয়ে নতুন করে চিন্তা ভাবনার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার বনে আগুন ও ভেনিসের বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে এই কথাটা বলেছে তারা, কারণ অনেকেই মনে করেন, এসব ঘটনার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে। বুন মনে করেন, কার্বন করের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নীতি না থাকা এবং বিনিয়োগ ব্যাহত হলে ‘প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।’

রাজস্ব প্রণোদনা বা করপোরেট কর কমিয়ে সাময়িকভাবে কিছু কাজ হতে পারে কিন্তু ওইসিডি মনে করে, নজরটা থাকা উচিত দীর্ঘ মেয়াদে। এর জন্য সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ তহবিল থাকতে পারে। বুন আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত ভঙ্গুর। কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ সন্ত্রস্ত করার মতো।’ এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথও বাতলে দেন তিনি। সেটা হলো, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে সবার মঙ্গলের স্বার্থে বিনিয়োগ করা।’