বিশ্বের বৃহত্তম সার্বভৌম সম্পদ তহবিল নরওয়ের
স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ নরওয়েতে মাত্র ৫১ লাখ মানুষের বসবাস। অথচ এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর একটি; যাদের সভরেন ওয়েলথ ফান্ড বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের আকার প্রায় এক লাখ কোটি ডলার। আর এটি হলো বিশ্বে এ ধরনের বৃহত্তম তহবিল।
নর্জেস ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট (এনবিআইএম) নামক বিশ্বের বৃহত্তম এই সার্বভৌম সম্পদ তহবিল বা সরকারি তহবিল আগামী তিন বছরে বিশ্বজুড়ে ৮৮ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। এটি মূলত শেয়ার, বন্ড ও রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ করে থাকে।
বিপুল এই তহবিলের জোরে নরওয়ে সরকার বলেছে, তাদের জনগণকে আগামী ২০০ বছর পর্যন্ত খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের জন্য চিন্তা করতে হবে না। অন্যদিকে জনগণও দেশের প্রতি বেশ দায়িত্বশীল। বিশ্বের সর্বোচ্চ হারে কর দিতে হলেও সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের কোনো অভিযোগ নেই। কারণ করের হার বেশি হলেও জনগণের কল্যাণেই নিবেদিত নরওয়ে সরকার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী মাথািপছু জিডিপিতে বিশ্বে নরওয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। দেশটির জনগণের মাথািপছু আয় ৫৫ হাজার ডলার।
ফ্রন্টিয়ার মার্কেট বা উদীয়মান অর্থনীতিগুলোতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে মুনাফা অর্জন, নির্দিষ্ট হারের আয় বৃদ্ধি এবং রিয়েল এস্টেট তথা আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে এনবিআইএম। গতকাল মঙ্গলবার ফান্ডটির ২০১৪-১৬ সাল মেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে।
এনবিআইএম থেকে আগামী তিন বছরে ১ শতাংশ তথা ৮৮০ কোটি ডলার করে বেসরকারি আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা হবে। পরিবেশবিষয়ক বিনিয়োগ বাড়িয়ে ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত করবে।
এই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে নরওয়ে বিভিন্ন ফ্রন্টিয়ার মার্কেট বা উত্তোরণের পথে থাকা উদীয়মান অর্থনীতিগুলোকে বেছে নিচ্ছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, কাজাখস্তান প্রভৃতি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মর্গ্যান স্ট্যানলি ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল (এমএসসিআই) এবং স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর (এসঅ্যান্ডপি) আলাদাভাবে ফ্রন্টিয়ার মার্কেটের তালিকা তৈরি করেছে। এমএসসিআই ২৬টি এবং এসঅ্যান্ডপি ৩৬টি দেশকে নিয়ে এই তালিকা তৈরি করে। দুটিতেই আছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন—এসব দেশ।
এনবিআইএম এত দিন রিয়েল এস্টেট খাতে যৌথভাবে বিনিয়োগ করেছে। এবার তারা এই খাতে একক বা সম্পূর্ণ মালিকানায় বিনিয়োগ করতে চায়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের পঁুজিবাজারে তালিকাভুক্ত রিয়েল এস্টেট কোম্পানির পাশাপাশি সরকারের সঙ্গেও অংশীদারির মাধ্যমে বিনিয়োগ করার কথাও ভাবছে তারা।
২০১৬ সাল পর্যন্ত তহবিল থেকে ফ্রন্টিয়ার মার্কেটের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা হবে। তবে বড় মাপের বিনিয়োগের দুই-তৃতীয়াংশই করা হবে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোতে।
এনবিআইএম অবশ্য ইতিমধ্যে বৈশ্বিক বাজারে একটি প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী হয়ে উঠেছে। এটি বর্তমানে গড়ে বিশ্বের সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ইউরোপীয় শেয়ারবাজারের প্রতিটি কোম্পানির ২ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এটি গত বছর ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং এক দশকে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ হারে মুনাফা করেছে।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, ব্লুমবার্গ ও নিউইয়র্ক টাইমস।