ব্যক্তিগত নয়,ব্যবসায়িক তথ্য চেয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপ

সম্প্রতি কিছু নীতিগত বদল এনেছিল হোয়াটসঅ্যাপ। বলা হয়, এই নীতির সঙ্গে একমত না হলে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আর হোয়াটসঅ্যাপ কাজ করবে না। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, ব্যবহারকারীর কিছু ব্যক্তিগত তথ্য নেবে হোয়াটসঅ্যাপ। ফোন নম্বর, অবস্থান থেকে শুরু করে অনলাইনে কেনাকাটা, টাকাপয়সা–সংক্রান্ত তথ্য পর্যন্ত জানার অধিকার চেয়ে নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। তবে শেষ পর্যন্ত প্রবল জনমতের চাপে এই হালনাগাদ স্থগিত করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।

ব্যক্তিগত বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু প্রাপকই প্রেরকের বার্তা পড়তে পারেন, ইংরেজিতে যাকে বলে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন। নিরাপত্তার এই ব্যবস্থা কখনোই দুর্বল হতে দেওয়া হবে না।

এ নিয়ে ব্যাপক জন অসন্তোষ তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াটসঅ্যাপ তাদের ওয়েবসাইটে নতুন নীতিমালা নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়। এতে বলা হয়, ‘নীতির এই হালনাগাদ বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ ক্ষেত্রে আগে যা ছিল, তা-ই থাকবে। পরিবর্তন যেটা এসেছে সেটা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে, তা–ও আবার ঐচ্ছিক। বরং কীভাবে উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যবহার করা হবে, সে ব্যাপারে আরও স্বচ্ছতা এসেছে।’

এতে আরও জানানো হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বন্ধু, পরিবার-স্বজন বা সহকর্মীদের সঙ্গে যে ফোনালাপ করেন বা বার্তা বিনিময় করেন, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক কেউই তা পড়তে বা শুনতে পায় না। ব্যক্তিগত বার্তা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু প্রাপকই প্রেরকের বার্তা পড়তে পারেন, ইংরেজিতে যাকে বলে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন। নিরাপত্তার এই ব্যবস্থা কখনোই দুর্বল হতে দেওয়া হবে না।

আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে সিগন্যাল ডাউনলোডের হিড়িক পড়ে যায়। পাশাপাশি আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ টেলিগ্রাম ডাউনলোডের হারও বেড়ে যায়।
ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি ভয় তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে।

কিন্তু এই ব্যাখ্যা দিতে হোয়াটসঅ্যাপ কিছুটা দেরিই করে ফেলেছে। তার আগেই যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেলে যে পৃথিবীর শীর্ষ ধনী এলন মাস্ক সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্ট দেন, ‘সিগন্যাল ব্যবহার করুন’। সিগন্যাল আরেকটি যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ। তাঁর এই পোস্টের পর সারা বিশ্বে গুগল প্লে স্টোর বা আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে সিগন্যাল ডাউনলোডের হিড়িক পড়ে যায়। পাশাপাশি আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপ টেলিগ্রাম ডাউনলোডের হারও বেড়ে যায়।
ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি ভয় তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ে। এমন ধারণা চাউর হয়ে যায় যে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের বার্তার ব্যাকআপ রাখে। কিন্তু ব্যাখ্যায় হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, কে বার্তা পাঠাচ্ছে বা আলাপ করছে, সেই তথ্য তারা সংরক্ষণ করে না। সাধারণত মোবাইল ফোন অপারেটররা এসব তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে। হোয়াটসঅ্যাপ মনে করে, ২০০ কোটি ব্যবহারকারীর এত তথ্য সংরক্ষণ গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তাই তারা সেটা করে না।

ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ।

হোয়াটসঅ্যাপ বলেছে, নতুন এই নীতিমালা ব্যবসায়িক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজন সাপেক্ষে হোস্টিং সেবা ব্যবহার করতে হয়। বিষয়টি হচ্ছে, ব্যবহারকারী ফোন, ই-মেইল বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক যোগাযোগ করলে ফেসবুক তা দেখতে, পড়তে বা শুনতে পারে। সেই তথ্য বিপণনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে, যেমন ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়া। তবে প্রাপক যাতে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকেন, সে জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রে চিহ্নিত করে দেয়, কারা ফেসবুকের হোস্টিং সেবা ব্যবহার করছেন।

বিশ্বের লাখো কোটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিপণন ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল। দেশের বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের উদ্যোক্তা ফেসবুকে ভরসা করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। খুব সহজে ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে পৌঁছানো যায় বলেই তাঁরা এই প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করছেন। সে জন্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে ফেসবুক একা লাভবান হবে না, হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও লাভবান হবেন। বিপণন আরও সুচারু হবে। তবে এই তথ্য নেওয়ার প্রক্রিয়া এবং অননুমোদিত কাজে তা ব্যবহৃত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

তবে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। আর শেষমেশ তারা হালনাগাদ আপাতত স্থগিত করেছে।