ব্যবসার খরচ ৭-৩৫% কমানো সম্ভব, যদি...

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অবকাঠামো খাতে অনেক অগ্রগতি হলেও দেশের লজিস্টিক (বাণিজ্য সহায়ক সুবিধা) ব্যবস্থাপনা বেশ পিছিয়ে রয়েছে। মহামারির সময় অপর্যাপ্ত লজিস্টিক সুবিধার কারণে আমাদের পণ্য রপ্তানি প্রায় ১৭ শতাংশ কমে গেছে।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভরশীল হলেও বন্দরগুলো পুরোনো প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। বন্দরে কনটেইনার–জট, ডেমারেজ চার্জ, কাস্টমস ছাড়পত্রে দীর্ঘসূত্রতা ও অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এতে ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় অনেক বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, রাস্তাঘাটে যানজট নিরসন ও লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করা গেলে ব্যবসা পরিচালনার খরচ ৭-৩৫ শতাংশ কমানো সম্ভব।

লজিস্টিক সেবা প্রদানে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

‘লজিস্টিকস: বাংলাদেশের আন্তবাণিজ্যের বর্তমান প্রেক্ষিত ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ। ঢাকা চেম্বার আয়োজনে এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা নেতারা সরকারের প্রতি একটি লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানান। এ ছাড়া কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার অটোমেশন, কনটেইনার ধারণ সক্ষমতা বৃদ্ধি, গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি, উন্নত দেশের মতো লজিস্টিক এবং ওয়্যার হাউস পার্ক স্থাপন এবং আমদানি করা কাঁচামাল সংরক্ষণে বন্ডেড ওয়্যার হাউস স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করে। তবে কোনো টার্মিনাল না থাকায় যত্রতত্র ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। সে কারণে ভয়াবহ যানজট হয় বলে উল্লেখ করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি আরও বলেন, লজিস্টিক সেবা প্রদানে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন সহজ করার জন্য রেলওয়ের কনটেইনার সেবা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

মূল প্রবন্ধে সেলিম রায়হান বলেন, লজিস্টিক সেবা প্রদানে প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। রপ্তানি বহুমুখীকরণ প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এ কারণে। তিনি বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে লজিস্টিক মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নতি করতে হবে।

লজিস্টিক সেবা নিশ্চিত করতে একটি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান। তিনি আরও বলেন, দেশীয় ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বন্ডেড ওয়্যার হাউস করা যেতে পারে।

‘ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সেবা নিশ্চিত করতে নিজস্ব মানদণ্ড থাকতে হবে।’
রুবানা হক, বিজিএমইএর সভাপতি

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার বলেন, ‘প্রতিবছর শতাধিক নতুন পণ্য আমাদের বাজারে এলেও প্রয়োজনীয় প্রণোদনা ও বাজার সম্প্রসারণ ব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণে প্রায় ৮০টি হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নতুন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে।’

বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সেবা নিশ্চিত করতে নিজস্ব মানদণ্ড থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ফার্স্ট সেক্রেটারি (কাস্টম অ্যান্ড ভ্যাট) মো. আকবর হোসেন প্রমুখ।