ব্যাংক আবগারি শুল্ক কেটেছে, ভয় পাবেন না

ব্যাংক টাকা

অনেকের ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) থেকে বিদায়ী ডিসেম্বর মাসে টাকা কেটেছে ব্যাংক। এতে তাঁরা ভাবতে পারেন যে তাঁদের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা 'গায়েব' হয়েছে।

ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনার হিসাব থেকে আবগারি শুল্ক কেটে রাখা হয়েছে। এটি ব্যাংকের কোনো সেবা মাশুল নয়। আপনার হিসাবে টাকার পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সীমা স্পর্শ করায় সরকার আপনার কাছ থেকে টাকা কেটে রাখছে।

সরকারের শুল্ক-কর আদায়কারী সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষে ব্যাংকগুলো পঞ্জিকাবর্ষ (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ধরেই আবগারি শুল্ক কেটে রাখে। এরপর তা সরকারি কোষাগারে জমা করে।

কয়েক দিন ধরেই ব্যাংক হিসাবধারী গ্রাহকদের অনেকেই নিজেদের মোবাইলে আবগারি শুল্কের টাকা কেটে রাখার খুদে বার্তা পাচ্ছেন। কেন টাকা কাটা হলো, তা ভেবে অনেকেই হয়তো ঘাবড়ে গেছেন, একধরনের উদ্বেগে আছেন। বাস্তবতা হলো, প্রতিবছরই এভাবে একবার আবগারি শুল্ক কাটা হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার আবগারি শুল্ক আদায় হয়েছে।

এবার দেখা যাক, আবগারি শুল্ক হার কত। আবগারি শুল্ক কাটার নিয়ম হলো, আপনার ব্যাংক হিসাবে যদি জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এক লাখ টাকার কম থাকে তাহলে কোনো আবগারি শুল্ক বসে না। অর্থাৎ বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে তা আবগারি শুল্কমুক্ত। আর ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা থাকলে ১৫০ টাকা এবং ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এ ছাড়া ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায় ৩ হাজার টাকা; ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকায় ১৫ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ওপরে থাকলে ৪০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়।

প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়ী হিসাব (যেমন, বেতন-ভাতার টাকা কিংবা সারা বছর যেসব হিসাবে লেনদেন হয়) থেকে আবগারি শুল্ক কাটে ব্যাংকগুলো। কারণ, ব্যাংকের হিসাব-নিকাশের সময় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস। অন্যদিকে স্থায়ী আমানতের হিসাবের ক্ষেত্রে যখন এফডিআর মেয়াদপূর্তি হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে আবগারি শুল্কের টাকা কেটে রাখা হয়।

এ বিষয়ে কমিউনিটি ব্যাংকের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক আকসিরুল হক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবগারি শুল্ক কেটে রাখায় কয়েক দিন ধরে আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ফোন পাচ্ছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী আবগারি শুল্ক কাটা হচ্ছে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, গ্রাহকদের ভয়ের কিছু নেই।’

বাংলাদেশে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব এখন এক লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত জুন মাস শেষে এ ধরনের হিসাবসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৯১৮। প্রতিবছরই কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ১০-১২ হাজার করে বাড়ছে। আর সার্বিকভাবে ব্যাংক হিসাব আছে কয়েক কোটি।