ভাতিজির নামে ঋণের সুবিধাভোগী চেয়ারম্যান

পরিচয় গোপন করে নিজের ভাতিজির প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়ে সেই ঋণের সুবিধাভোগী হয়েছেন এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন। ভাতিজির কোম্পানির নামে নেওয়া ঋণ স্থানান্তর হয়েছে আমজাদ হোসেনের লকপুর গ্রুপে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এসবিএসির চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের ভাতিজি মাহফুজা খানম রিশাকে চেয়ারম্যান করে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আলফা এক্সেসরিজ অ্যান্ড এগ্রো এক্সপোর্ট নামে নতুন একটি কোম্পানি গঠন করা হয়। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নিয়ে ওই কোম্পানির নামে ঋণ আবেদন করা হয় এসবিএসি ব্যাংকে। মাত্র ২০ বছর বয়সী মাহফুজাকে চেয়ারম্যান করে গঠিত কোম্পানির নামে ৪৮ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হয় ব্যাংকটির ৪৫তম পর্ষদ সভায়। এসবিএসি ব্যাংকের বাগেরহাটের কাটাখালী শাখার মাধ্যমে ওই ঋণ প্রস্তাব এসেছিল ব্যাংকের পর্ষদ সভায়।

আমজাদ হোসেনের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান লকপুর গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ও বাগেরহাটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলফা এক্সেসরিজের নামে ঋণ নেওয়া হলেও এর পুরো সুবিধাভোগী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের মালিকানাধীন লকপুর গ্রুপ। যদিও ব্যাংকটির নথিপত্রে বলা হয়েছে, মাহফুজা খানমের সঙ্গে ব্যাংকের কোনো পরিচালকের সম্পর্ক নেই। এতেই প্রমাণ মিলছে ঋণের প্রকৃত সুবিধাভোগীকে আড়াল করতেই পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। আলফা এক্সেসরিজকে সব মিলিয়ে ৫৭ কোটি টাকা ঋণসুবিধা দিয়েছে এসবিএসি।

এসবিএসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানটির ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে প্রথমে ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট হয়েছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু স্থানীয় কেনাকাটা হয়েছিল, এ বিষয়টিই প্রতিবেদনে এসেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে, আলফা এক্সেসরিজের নামে অনুমোদন হওয়া ঋণের মধ্যে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ২৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ উত্তোলন করে প্রতিষ্ঠানটি। উত্তোলন করা ঋণের পুরো অর্থই স্থানান্তর করা হয় লকপুর গ্রুপের বিভিন্ন হিসাবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির ১৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ঋণপত্র খোলার অনুমোদন দিলেও খোলা হয়েছে ১৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ঋণপত্র। এ জন্য ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়েরও অনুমোদন নেয়নি শাখাটি। এদিকে মূল্য যাচাই না করে ও ক্রেডিট রিপোর্ট সংগ্রহ না করে ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধ করায় বড় ধরনের অর্থ পাচারের আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।