মঙ্গা এলাকার মানুষের আয় বেড়েছে

.
.

উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও রংপুর। ২০০৮ সালে এসব জেলার মাত্র ২৩ শতাংশ পরিবার মঙ্গার সময় তিন বেলা খেতে পারত। তার মানে সে সময় ৭৭ শতাংশ পরিবারের সদস্যরাই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতেন। ২০১৩ সালে এসে পরিস্থিতির উন্নতি হয়, ৭৪ শতাংশ পরিবারই তিন বেলা খেতে পারছে।
এ ছাড়া ২০০৮ সালে এসব এলাকার একটি পরিবারের বার্ষিক গড় আয় ছিল ৩৫ হাজার ৪০০ টাকা। তবে ২০১৩ সালে সেটি ৪২ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৭৮ হাজার ১০০ টাকায় দাঁড়ায়। অর্থাৎ আয় বেড়েছে ১২০ শতাংশ। একই সঙ্গে মঙ্গাপীড়িত জেলার পরিবারগুলোর বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের পরিমাণও বেড়েছে।
গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোফাইন্যান্সের (আইএনএম) একটি গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে। বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর ও মার্চ থেকে এপ্রিল—এই পাঁচ মাসে কৃষিকাজ না থাকায় বৃহত্তর রংপুরের পাঁচ জেলার লোকজন বেকার হয়ে পড়তেন। মৌসুমি এই বেকারত্বের কারণেই দেখা দিত খাদ্যের অভাব। এটাই মঙ্গা নামে পরিচিত ছিল।
এই মঙ্গা নিরসনে ২০০৬ সাল থেকে ঋণ-সহায়তায় সংযোগ কর্মসূচি বা প্রাইম নামে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি চালু করে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। ২৪টি বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও এটি বাস্তবায়ন করেছে। প্রাইম কর্মসূচি মঙ্গা নিরসনে কী প্রভাব ফেলেছে, সেটি খুঁজে বের করতে পিকেএসএফের সঙ্গে যৌথভাবে আইএনএম ওই গবেষণাটি করে।

ছয় বছর (২০০৮-২০১৩) মঙ্গাকবলিত বৃহত্তর রংপুরের ৫ হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে সেখানকার মানুষের পরিবর্তনের ইতিবাচক চিত্র পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, তিন বেলা খেতে পারে—এমন পরিবারের সংখ্যা ৭৪ শতাংশে উন্নীত করার পেছনে প্রাইমের অবদান ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রাইমের অবদান ৫৪ শতাংশ। অবশ্য সার্বিক উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি ও অন্য বেসরকারি সংস্থার অবদান আছে।

গবেষণা ফলাফলটি তুলে ধরতেই গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আইএনএম আয়োজিত সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসার পথ: প্রাইম কর্মসূচির অভিজ্ঞতা’। অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের মঙ্গা কোনো প্রাকৃতিক সমস্যা ছিল না। এটি ছিল মানুষের তৈরি সমস্যা। এক ফসলি বোরোর চাষাবাদের কারণে সেখানকার মানুষের কাজের সুযোগ সীমিত হয়ে যেত। অন্যদিকে যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে উৎপাদিত ফসলও সঠিকভাবে বাজারজাত করা যেত না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু টাকা দিয়ে দারিদ্র্য দূর করা যাবে না। টাকার পাশাপাশি তাঁদের উৎপাদনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে।’

পিকেএসএফের চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল করিম, মহাব্যবস্থাপক এ কিউ এম গোলাম মাওলা ও আইএনএমের নির্বাহী পরিচালক বাকী খলীলী।

দ্বিতীয় অধিবেশনে মূল গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন বাকী খলীলী ও আইএনএমের গবেষক মেহেদী হাসান। তাঁরা জানান, প্রাইম কর্মসূচির আওতায় মঙ্গাপীড়িত এলাকার লোকজনকে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে করে খাদ্যনিরাপত্তা ও আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁদের বিভিন্ন ধরনের সম্পদও বেড়েছে। সব মিলিয়েই দারিদ্র্য কমেছে। তবে এই দারিদ্র্য দীর্ঘ মেয়াদে কমাতে মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে জোর দিতে হবে।