মসলার দামও বাড়তির দিকে

পবিত্র ঈদুল আজহায় গরমমসলার চাহিদা বেশি থাকে। বাড়তি দাম বাড়াবে মানুষের বাজার খরচ।

পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী ফারুক আহমদ ১০ দিন আগেও এলাচি বিক্রি করেছেন প্রতি কেজি ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৩৭৫ টাকায়। এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় এই মসলা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে। আমদানিকারক ফারুক আহমদ জানালেন, শুধু এলাচি নয়, দাম বেড়েছে জিরা, লবঙ্গ, মৌরি, দারুচিনি এবং গোলমরিচেরও। ১০ দিনের ব্যবধানে প্রতিটি মসলায় ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

পবিত্র ঈদুল আজহার আগে প্রতিবছর গরমমসলার চাহিদা বেশি থাকে। পাইকারি থেকে খুচরা বাজার—সবখানেই বেচাকেনা বেশি হয়। দামও বেড়ে যায় অনেক সময়। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে এখনো ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়নি। এবার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। ২৩ মে সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে। প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়ার কারণেই এখন মসলার দাম বেশি গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজভাড়া থেকে শুরু করে সব ধরনের খরচও বেশি পড়ছে।

পাইকারি ব্যবসায়ী ফারুক আহমদ বলেন, এক মাস আগে দারুচিনি ও এলাচি আনতে এলসি খোলেন তিনি। ডলারপ্রতি খরচ হয় ৮৭ টাকা। গতকাল এলসির টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে ৯৫ দশমিক ৫০ টাকা করে খরচ হয়েছে। ডলারের এই বাড়তি দামের কারণে মসলার দামও বেড়ে গেছে।

পাইকারি থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁরাও বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। তাঁরা লবঙ্গ বিক্রি করছেন ১০০ গ্রাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া জিরা ১০০ গ্রাম ৫০, এলাচি ১৮০ থেকে ২৮০, দারুচিনি ৪৫ থেকে ৫০, গোলমরিচ ৯০ থেকে ১১০ টাকা।
আবদুল্লাহ আল নোমান ও মালিক আবদুল মান্নান, কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের জালাল স্টোরের কর্ণধার ও বহদ্দারহাটের শাহজালাল স্টোরের

দেশে গরমমসলা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সামাজিক ও করপোরেট অনুষ্ঠান এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয়। ঈদুল আজহায়ও ঘরে ঘরে ব্যবহার বাড়ে। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে আট ধরনের গরমমসলার চাহিদা বেশি। এগুলো হলো এলাচি, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জায়ফল, জয়ত্রী ও তারকা মৌরি বা তারা মসলা। এসব মসলার পুরোপুরিই আমদানিনির্ভর

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অমর কান্তি দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়ার কারণে ১০ দিনের ব্যবধানে বেশ কিছু মসলার দাম বেড়েছে। তবে বিক্রি কমেছে। এ কারণে আগামী সপ্তাহের দিকে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মসলার ৮২ শতাংশই আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয় কমবেশি ১৮ শতাংশ। বন্দর ও কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে জিরা আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৬৯৭ টন, ধনিয়া ২ হাজার ১৪৬ টন, এলাচি ২ হাজার ৯৮৩, লবঙ্গ ১ হাজার ৫৫১ টন, দারুচিনি ১২ হাজার ৯৬২ টন। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে জিরা আমদানি হয় ১৮ হাজার ৪১৫ টন, ধনিয়া ২ হাজার ৩০০ টন, এলাচি ৩ হাজার ৪০৪ টন, লবঙ্গ ১ হাজার ৮১১ টন, দারুচিনি ১০ হাজার ৬২৫ টন।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের কর্ণধার নুরুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের সময় দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ডলারের বিনিময় মূল্য কমে গেলে মসলার দামও কমে যাবে।

মসলার দরদাম

বাজারে বিভিন্ন মানের ও দামের মসলা পাওয়া যায়। মানভেদে প্রায় প্রতিটি মসলার দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারে ওঠা–নামা করে। পাইকারি বাজারে এলাচির দাম পড়ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ১০ দিন আগে দাম ছিল ১ হাজার ২৫০ থেকে ১ হাজার ৩৭৫ টাকা।

গরমমসলার মধ্যে পরিমাণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় জিরা। গতকাল খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জে এই পণ্যেরও দাম কেজিপ্রতি ৩৯০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পড়েছে, যা ১০ দিন আগে ছিল ৩৫০ টাকা।

১০ দিনের ব্যবধানে লবঙ্গের দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। একই সময়ে গোলমরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৬০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জে দুই রকমের দারুচিনি পাওয়া গেছে। একটি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়, যা ১০ দিন আগে ছিল ৩৭৫ থেকে ৩৮০ টাকা। আরেকটি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, ১০ দিন আগে ছিল ২৮০ টাকা। এ ছাড়া জায়ফল, জয়ত্রী ও তারা মসলার দামও তেমন বাড়েনি।

মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অরবিট করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী সালাম আহমেদ বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে। এখন আর বাড়ার সুযোগ নেই।

খুচরা বাজারেও বাড়তি দাম

পাইকারি বাজারের বাড়তি দামের প্রভাব পড়েছে খুচরাতেও। গতকাল নগরের ২ নম্বর গেট কর্ণফুলী কমপ্লেক্স, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার, চকবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি মসলা ১০ দিনের ব্যবধানে ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের জালাল স্টোরের কর্ণধার আবদুল্লাহ আল নোমান ও বহদ্দারহাটের শাহজালাল স্টোরের মালিক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, পাইকারি থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এ কারণে তাঁরাও বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। তাঁরা লবঙ্গ বিক্রি করছেন ১০০ গ্রাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। এ ছাড়া জিরা ১০০ গ্রাম ৫০, এলাচি ১৮০ থেকে ২৮০, দারুচিনি ৪৫ থেকে ৫০, গোলমরিচ ৯০ থেকে ১১০ টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা জানান, ঢাকার বাজারে গরমমসলার দামে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তবে গত ঈদের আগে জিরা ও দারুচিনির মতো দু–একটি পণ্যে দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছিল। এখন ওই দামেই বিক্রি হচ্ছে।