মূল্যছাড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

  • ব্যবসায় টাকার সরবরাহ বাড়াতে মূল্যছাড়ের দিকে ঝুঁকেছে ব্র্যান্ডগুলো। ক্রেতারাও মূল্যছাড়ের সুযোগ নিচ্ছেন। ফলে ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি বেড়েছে।

  • অভিজাত বিপণিবিতান দুটিতে ঘুরে দেখা গেছে, আড়ং থেকে শুরু করে বাটা শু, দেশী দশ, সেইলর, সারা, ফ্রিল্যান্ড, ও টু, জেন্টল পার্ক, এক্সটেসি, টুয়েলভ, বেবি শপের মতো ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন হারে মূল্যছাড় দিচ্ছে।

  • সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ মূল্যছাড়ের পাশাপাশি একটি কিনলে একটি ফ্রির মতো অফারও রয়েছে।

মূল্যছাড় দিয়েও ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে অনেক ব্র্যান্ড। গতকাল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে।
ছবি: সাইফুল ইসলাম

বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে মূল্যছাড়ের রঙিন সাইনবোর্ড। ভেতরেও ছোট ছোট বোর্ডে মূল্যছাড়ের ঘোষণা। এভাবে অনেকটা উৎসবের আবহে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পোশাক ও জুতার অনেক ব্র্যান্ড। মূল্যছাড়ের সুবাদে তাদের বিক্রিবাট্টাও মোটামুটি বেড়েছে।


ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বৈশাখ ও দুই ঈদে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি না হওয়ায় তাঁরা টাকার সংকটে পড়েছেন। তা ছাড়া পণ্যের স্টকও জমে গেছে। তাই ব্যবসায় টাকার সরবরাহ বাড়াতে মূল্যছাড়ের দিকে ঝুঁকেছে ব্র্যান্ডগুলো। ক্রেতারাও মূল্যছাড়ের সুযোগ নেওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। সব মিলিয়ে গতবারের এ সময়ের তুলনায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ শতাংশের কাছাকাছি।

গত বছর এ সময় মাসে গড়ে ৪৫-৫০ কোটি টাকার জুতা বিক্রি হয়। বর্তমানে গত বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে। মোট বিক্রির ২০ শতাংশ আসছে মূল্যছাড়ের পণ্যে।
এরফানুল হক, রিটেইল অপারেশন ম্যানেজার বাটা শু কোম্পানি
মূল্যছাড় দিয়েও ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে অনেক ব্র্যান্ড। গতকাল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে।
ছবি: সাইফুল ইসলাম

দেশের প্রথম সারির পোশাক ও জুতার ব্র্যান্ডগুলোর প্রায় সবারই বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল কিংবা যমুনা ফিউচার পার্কে। অভিজাত বিপণিবিতান দুটিতে ঘুরে দেখা গেছে, আড়ং থেকে শুরু করে বাটা শু, দেশী দশ, সেইলর, সারা, ফ্রিল্যান্ড, ও টু, জেন্টল পার্ক, এক্সটেসি, টুয়েলভ, বেবি শপের মতো ব্র্যান্ডগুলো বিভিন্ন হারে মূল্যছাড় দিচ্ছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ মূল্যছাড়ের পাশাপাশি একটি কিনলে একটি ফ্রির মতো অফারও রয়েছে।


বসুন্ধরা সিটিতে গতকাল সোমবার দুপুরে ঘণ্টা দেড়েক ঘুরে দেখা গেল, মূল্যছাড় দিচ্ছে এমন ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে ক্রেতাদের আনাগোনা আছে। অন্যান্য দোকানের অধিকাংশই প্রায় ক্রেতাশূন্য। যদিও করোনার কারণে পুরো বিপণিবিতান ক্রেতা-দর্শনার্থী অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় খুবই কম। অষ্টম তলার খাবারের দোকানের কর্মীরা অলস সময় পার করছেন, মধ্যাহ্নভোজনের সময়ও ক্রেতা নেই। সম্প্রতি যমুনা ফিউচার পার্ক ঘুরেও একই দৃশ্য চোখে পড়েছে।


বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে বাটা শুর বিক্রয়কেন্দ্রে জনাবিশেক ক্রেতা জুতা দেখছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি কিছু নির্দিষ্ট জুতায় এক জোড়া কিনলে এক জোড়া ফ্রি দিচ্ছে। বাটার একজন কর্মী বললেন, মূল্যছাড় দেওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। শুক্র ও শনি এবং সরকারি ছুটির দিনে ক্রেতার আনাগোনা বেশি হয়।

বৈশাখের পর দুই ঈদের বিক্রিবাট্টার অর্থ দিয়ে পরের বছরের প্রস্তুতি নিয়ে থাকি আমরা। তবে চলতি বছর করোনায় তিনটি বড় উৎসবে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি। সে কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা টাকার সংকটে রয়েছি।
সৌমিক দাশ, স্বত্বাধিকারী, রং বাংলাদেশ
মূল্যছাড় দিয়েও ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে অনেক ব্র্যান্ড। গতকাল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে।
ছবি: সাইফুল ইসলাম

জানতে চাইলে বাটা শু কোম্পানির রিটেইল অপারেশন ম্যানেজার এরফানুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর এ সময় মাসে গড়ে ৪৫-৫০ কোটি টাকার জুতা বিক্রি হয়। বর্তমানে গত বছরের তুলনায় ৮৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে। মোট বিক্রির ২০ শতাংশ আসছে মূল্যছাড়ের পণ্যে।

দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড দেশী দশ গত মাস থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে। সেই টানে ক্রেতারা ব্র্যান্ডগুলোতে ভিড় করছেন। ফলে প্রতিটি ব্র্যান্ডের পোশাকই টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। দেশী দশের প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—রং বাংলাদেশ, সাদাকালো, অঞ্জন’স, দেশাল,নিপুণ, কে ক্র্যাফট, নগরদোলা, বিবিয়ানা, সৃষ্টি ও বাংলার মেলা।

জানতে চাইলে রং বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈশাখের পর দুই ঈদের বিক্রিবাট্টার অর্থ দিয়ে পরের বছরের প্রস্তুতি নিয়ে থাকি আমরা। তবে চলতি বছর করোনায় তিনটি বড় উৎসবে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি। সে কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা টাকার সংকটে রয়েছি। প্রায় প্রত্যেকেই টিকে থাকার জন্য লড়াই করছেন।’

স্টক খালি করা ও টাকা সংগ্রহের জন্য বড় মূল্যছাড় দিতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সৌমিক দাশ। তিনি বলেন, মূল্যছাড় দেওয়ায় ব্যবসায় কিছুটা গতি এসেছে। টাকার প্রবাহ বেড়েছে।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। দোকানপাট ও বিপণিবিতান বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এপ্রিল মাস বন্ধের পর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে ১০ মে থেকে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দোকানপাট খোলার অনুমতি দেয় সরকার। তবে তখন ঢাকার প্রধান বিপণিবিতানগুলো বন্ধই থাকে। ঈদুল আজহায় রাত আটটা পর্যন্ত দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়।

কিছু স্টাইলের পোশাক, যেগুলো লম্বা সময় ধরে বিক্রি হচ্ছে না, সেগুলোতে ছাড় দিয়েছি আমরা। মোট বিক্রির মধ্যে ১০ শতাংশের কাছাকাছি হয় মূল্যছাড় দেওয়া পণ্যে।
এস এম খালেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারা লাইফস্টাইল
মূল্যছাড় দিয়েও ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছে অনেক ব্র্যান্ড। গতকাল রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে।
ছবি: সাইফুল ইসলাম

সারা বছরে ব্র্যান্ড বা ফ্যাশন হাউস কত টাকার পোশাক বিক্রি করে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতি (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ) ফ্যাশন হাউসগুলোর বিক্রিবাট্টা নিয়ে জরিপ করছিল। তাতে ওঠে আসে, ফ্যাশন হাউসগুলোতে সারা বছর প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়। এর মধ্যে অর্ধেকই রোজার ঈদে। করোনার ধাক্কার মধ্যে রোজার শেষ দিকে কিছু বিক্রি হলেও তা দিয়ে দোকানের ভাড়া ও কর্মীদের বেতনই দিতে পারেনি অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। সেই তুলনায় কোরবানির ঈদের বিক্রি কিছুটা ভালো ছিল।

নতুন ফ্যাশন ব্র্যান্ড স্নোটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সারা লাইফস্টাইল কিছু নির্দিষ্ট পণ্যে ২৫ শতাংশ মূল্যছাড় দিয়েছে। এই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু স্টাইলের পোশাক, যেগুলো লম্বা সময় ধরে বিক্রি হচ্ছে না, সেগুলোতে ছাড় দিয়েছি আমরা। মোট বিক্রির মধ্যে ১০ শতাংশের কাছাকাছি হয় মূল্যছাড় দেওয়া পণ্যে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় বর্তমানে বিক্রি ৮০ শতাংশের মতো।