ম্যারাডোনার গোল দিয়ে মুদ্রানীতির ব্যাখ্যা

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যারাডোনার করা গোল

বাঁ পায়ের ড্রিবলিংয়ে ফুটবল দর্শকদের মোহিত করে রাখতেন ডিয়েগো ম্যারাডোনা, যাঁর ছন্দময় দৌড়ের মধ্যে বোদ্ধারা সংগীতের প্রভাবও আবিষ্কার করতে পারেন, কিন্তু তাঁর এই ড্রিবলিং-দক্ষতা যে মুদ্রানীতির ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় তুলনার খোরাক হয়েছে, সেটা কজনই-বা জানেন।

ঘটনা ২০০৫ সালের। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কীভাবে আধুনিক হয়েছে, তা বোঝাতে গিয়ে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর লর্ড মেরভিন কিং ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যারাডোনার দুটি গোল ব্যবহার করেছেন। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

দুটি গোলই খুব স্মরণীয়—যদিও পুরোপুরি ভিন্ন কারণে। প্রথম গোলটি ছিল সেই বিখ্যাত ‘ঈশ্বরের হাত’ দিয়ে হওয়া। পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার ম্যারাডোনা ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে পরাজিত করতে লাফিয়ে উঠে হাত দিয়ে গোল করেন, মাথা দিয়ে নয়। যদিও দেখে মনে হয়েছিল গোলটি হেড দিয়েই করা। এই গোলের সঙ্গে লর্ড কিং কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের ‘রহস্যজনক ও অতীন্দ্রিয়’ আচরণ তুলনা করেছেন—ব্যাপারটা অনাকাঙ্ক্ষিত, সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন ও নিয়মবিরোধী।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করতে পারে, বাজারের সুদহার তার ভিত্তিতেই ওঠানামা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে সুদহারে বড় পরিবর্তন না এনেও তারা অর্থনীতির গতিপ্রকৃতিতে প্রভাব ফেলতে পেরেছে। তারা লক্ষ্যের পানে সোজা দৌড়েছে।

তবে দ্বিতীয় গোলটি তো অসাধারণ। লর্ড কিং এভাবে বলেছেন: নিজের অর্ধ দিয়ে বল নিয়ে ৬০ মিটার দৌড়ে রক্ষণভাগের পাঁচজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ম্যারাডোনা গোলটি করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় তিনি একদম সোজা দৌড়েছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, পাঁচজন খেলোয়াড়কে কাটালেও ম্যারাডোনা সোজা দৌড়ালেন কীভাবে? ব্যাপারটা হলো, ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা ভেবেছিলেন, ম্যারাডোনা ডানে-বাঁয়ে মোচড় দেবেন, সে জন্য তাঁরাও আগেভাগে ডান-বাঁ করেছেন। তাই ম্যারাডোনার পক্ষে সোজা দৌড়ানো সম্ভব হয়েছে।

মুদ্রানীতিও সেভাবে কাজ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করতে পারে, বাজারের সুদহার তার ভিত্তিতেই ওঠানামা করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে, যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে সুদহারে বড় পরিবর্তন না এনেও তারা অর্থনীতির গতিপ্রকৃতিতে প্রভাব ফেলতে পেরেছে। তারা লক্ষ্যের পানে সোজা দৌড়েছে।

এখন কথা হচ্ছে, সেটা কীভাবে সম্ভব হলো। এর কারণ হলো, আর্থিক বাজার ধারণা করেনি যে সুদহার স্থিতিশীল থাকবে। সুদহার ওঠানামা করবে বলেই বাজার আশা করেছিল। ব্যক্তিগত ভোগ স্থিতিশীল করতে এই প্রত্যাশাই ছিল যথেষ্ট, যখন সুদহারের ওঠানামা হয়েছে খুবই কম।