রপ্তানিকারকদের পোয়াবারো

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর হবে রপ্তানিকারকদের জন্য পোয়াবারো। তাঁদের জন্য প্রণোদনা অর্থাৎ ভর্তুকি বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানিকারকদের জন্য ভর্তুকি বাবদ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরে তা ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের মধ্যে সাধারণ ভর্তুকির আকার ৪ হাজার কোটি টাকা। এই ভর্তুকিকে নগদ সহায়তাও বলা হয়। বাকি ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানিতে। আগামী অর্থবছরে পাটজাত দ্রব্যে ভর্তুকি চলতি অর্থবছরের সমান রাখা হলেও পোশাকসহ অন্যান্য খাতে বাড়ানো হচ্ছে।

রপ্তানিতে বর্তমানে ২৬ শ্রেণিতে বিভিন্ন হারে সহায়তা দেওয়া হয়। এই হার ২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। যেমন প্রচলিত বাজারের বাইরে নতুন বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে দেওয়া হয় ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা। আবার আগর, আতর, আলু, হালাল মাংস, বৈচিত্র্যকৃত পাটপণ্য রপ্তানিতে দেওয়া হয় ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা। ২৬ শ্রেণির বাইরেও মোটরসাইকেল, টুপি, সিরামিকসহ ৯টি পণ্যে সহায়তা দেওয়া হয় ১০ শতাংশ হারে।

তবে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সম্প্রতি শুধু নতুন বাজার নয়, পোশাক খাতে সব বাজারেই ৫ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা চেয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। বিজিএমইএর এই চাওয়ার ব্যাপারে গত মঙ্গলবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, এতে সরকারের বাড়তি খরচ হবে ১৪ হাজার কোটি টাকা। সিপিডি টাকার অবমূল্যায়ন করে পোশাক রপ্তানিকারকদের দাবি পূরণের পক্ষে।

সরকার ২০২১ সালের মধ্যে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মচারীরা বলছেন, এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণেই ভর্তুকি বাড়াতে হচ্ছে। আর এ জন্য রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক।

>
  • আগামী অর্থবছরে রপ্তানি ভর্তুকি ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে
  • রপ্তানিতে বর্তমানে ২৬ শ্রেণিতে বিভিন্ন হারে সহায়তা দেওয়া হয়

নগদ সহায়তার নামে যে দুর্নীতি হয়, সরকারের তা–ও জানা আছে বলে মন্তব্য করেন বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একজন সরকারি কর্মচারী। তিনি জানান, ভর্তুকি বা নগদ সহায়তার অর্থ যাতে অপকৌশল করে কেউ নিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য আগামী অর্থবছরে সরকার আরও বেশি তৎপর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এবং ও দুর্নীতি দমন কমিশনের শক্ত পদক্ষেপই হতে পারে এ অপকৌশল ঠেকানোর বড় হাতিয়ার।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলে ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তার আগের অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, ওই অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পর্যন্ত পূরণ হয়েছে।

আরও কারা কী পায়

রপ্তানি ভর্তুকি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনটি ৩০ জুন পর্যন্ত প্রযোজ্য। সেই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তার হার ৪ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়া অন্য কোনো দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে এ হার ৪ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা ৪ শতাংশ। ইউরো অঞ্চলে বস্ত্র খাতের রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৪ শতাংশের অতিরিক্ত বিশেষ সহায়তা আরও ২ শতাংশ।

এ ছাড়া গরু-মহিষের নাড়িভুঁড়ি, শিং ও রগ রপ্তানির বিপরীতে ১০ শতাংশ, শস্য ও শাকসবজির বীজে ২০ শতাংশ, পাটকাঠি থেকে উৎপাদিত কার্বনে ২০ শতাংশ, সফটওয়্যার, আইটিইএস ও হার্ডওয়্যারে ১০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

ভর্তুকি পাওয়া পণ্যের মধ্যে আরও রয়েছে হিমায়িত সফট সেল কাঁকড়া, ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল, গ্যালভানাইজড সিট, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, কস্টিক সোডা, হাইড্রোজেন পার–অক্সাইড ইত্যাদি।