রাশিয়ার টিকা কেনা বারণ

করোনার টিকার জন্য এই দুই সংস্থা ১২ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে। শর্ত, ডব্লিউএইচওর অনুমোদন নেই, এমন টিকা কেনা যাবে না।

  • বিশ্বব্যাংক ৪,২৫০ কোটি টাকা ও এডিবি ৮,০০০ কোটি টাকা দেবে।

  • চীনের টিকা ডব্লিউএইচও অনুমোদন করায় সেটি কেনায় বাধা নেই।

  • কোভ্যাক্স জোট থেকে ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাওয়া যেতে পারে।

রাশিয়ার তৈরি করোনার টিকা স্পুতনিক-ভি
ছবি: রয়টার্স।

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) টাকায় আপাতত রাশিয়ার টিকা কেনা যাবে না। কারণ, রাশিয়ার স্পুতনিক–ভি টিকা এখনো অনুমোদন করেনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এই সংস্থার অনুমোদনবিহীন টিকা কেনা বারণ করা আছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির টিকা ক্রয়নীতিতে।

এই দুই দাতা সংস্থার কাছ থেকে বাংলাদেশ করোনার টিকা কেনা ও সরবরাহে প্রায় সোয়া ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বা ৫০ কোটি ডলার আর এডিবি ৮ হাজার কোটি টাকা বা ৯৪ কোটি ডলার দিচ্ছে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।

এদিকে ভারত গত এপ্রিল মাসে সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা রপ্তানি বন্ধ করায় বাংলাদেশ বিপাকে পড়েছে। এই অবস্থায় সরকার টিকা সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে রাশিয়া ও চীনের টিকা কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এই দুই দেশের টিকায় এত দিন ডব্লিউএইচওর অনুমোদন ছিল না। গত সপ্তাহে চীনের টিকা অনুমোদন করেছে ডব্লিউএইচও। ফলে চীনের টিকা কেনায় বাধা নেই। এখন বাধা শুধু রাশিয়ার টিকা কেনায়।

বাংলাদেশ ‘কোভিড–১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেন্ডামিক প্রিপার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় টিকা ক্রয়, সংরক্ষণ ও সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণের জন্য প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা দরকার হবে। তবে আপাতত শুধু টিকা কিনতে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। অবশ্য টিকা কেনায় আরও টাকা লাগবে। চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে নাকি নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা ঠিক হয়নি।

গত ১৯ মার্চ বিশ্বব্যাংকের বোর্ডসভায় বাংলাদেশকে করোনার টিকা কেনায় সহায়তা দিতে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পেই বিশ্বব্যাংক টাকা দিচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত টিকার দুটি তালিকা আছে। একটি হলো ডব্লিউএইচওর প্রাক্‌–যোগ্যতা তালিকা (প্রি–কোয়ালিশফিকেশন লিস্ট)। অন্যটি হলো জরুরিভাবে ব্যবহারের তালিকা (ইমার্জেন্সি ইউজ লিস্ট)। রাশিয়ার স্পুতনিক–ভি ডব্লিউএইচওর কোনো তালিকায় নেই। তবে রাশিয়ায় উৎপাদিত টিকা বিশ্বের বহু দেশে দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের ক্রয়সংক্রান্ত নীতি অনুসারে, তাদের সহায়তার অর্থ দিয়ে ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত টিকা ছাড়া আর কোনো টিকা কেনা যাবে না।

এ বিষয়ে জানতে গত ৫ মে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর প্রথম আলোকে পাঠানো এক লিখিত জবাবে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় টিকা কর্মসূচিতে ৫০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এই কর্মসূচির আওতায় ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। বিশ্বব্যাংকের টাকায় টিকা কেনার যোগ্যতা হলো, সেটি ডব্লিউএইচওর প্রাক্‌–যোগ্যতা কিংবা জরুরি ব্যবহারের তালিকায় থাকতে হবে।’

অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার বাইরে কিছু দিন ধরেই রাশিয়া ও চীনের টিকা কেনার নানামুখী উদ্যোগ চলছে। গত ২৭ এপ্রিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকা অনুমোদন করে। এই টিকার দাম পড়বে ১০ থেকে ২৭ ডলার। এদিকে চীন থেকে ছয় লাখ টিকা আনার জন্য ইতিমধ্যে একটি বিশেষ বিমান সেই দেশে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বা দাতাদের টাকায় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে কেনাকাটার যাবতীয় তথ্য তাদের জানাতে হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাতাদের প্রতিনিধিরাও কেনাকেটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। দরপত্রের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন দাতাদের প্রতিনিধিরা।

একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার টিকা কেনার কোনো তথ্য বিশ্বব্যাংককে এখনো জানায়নি সরকার।

টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশের জন্য আরও ২০০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করেছে বিশ্বব্যাংক। গত ২০ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক তহবিলটি গঠনের ঘোষণা দেয়। এই তহবিলের অর্থ বাংলাদেশেরও পাওয়ার কথা।

এডিবির টাকায়ও কেনা যাবে না

বাংলাদেশকে টিকা কিনতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অর্থ দিতে যাচ্ছে এডিবি। এই দাতা সংস্থাটি শুধু করোনার টিকা কিনতে ৯৪ কোটি ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথা। যদিও এই ঋণ এখনো অনুমোদন করেনি এডিবি। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এই ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এডিবির বোর্ডসভায় উঠবে।

বিশ্বব্যাংকের মতো এডিবির টাকায়ও রাশিয়ার টিকা আপাতত কেনা যাবে না। কারণ, ডব্লিউএইচওর অনুমোদিত টিকার বাইরে অন্য কোনো টিকার জন্য এডিবি সহায়তা দেবে না। গত ডিসেম্বর মাসে টিকানীতি প্রকাশ করে এডিবি। তাতেও এডিবির টাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত টিকা কেনার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ দুইভাবে টিকা সংগ্রহ করতে পারে। উন্নয়নশীল দেশের দরিদ্র জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোর গঠিত কোভ্যাক্স জোট থেকে দেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। বাকি টিকা বিভিন্ন দেশ থেকে টাকা দিয়ে কিনতে হবে।