রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হলো ১৫,২০০ কোটি টাকা

স্বশাসিত ৯টি সংস্থার কাছে উদ্বৃত্ত ছিল ৯১ হাজার কোটি টাকা। সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ৮টি সংস্থা পুরো টাকা আর অন্যটি আংশিক দিয়েছে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বশাসিত ৯টি সংস্থার কাছ থেকে সরকারের অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী আটটি সংস্থা পুরো টাকা এবং অন্যটি আংশিক দিয়েছে। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েছে ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ফলে স্বশাসিত সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সরকারের অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্য শতভাগ পূরণ হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বশাসিত ওই ৯টি সংস্থার কাছে গত জানুয়ারি পর্যন্ত উদ্বৃত্ত মানে স্থিতি ছিল ৯১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ প্রথম দফায় চলতি অর্থবছরের জন্য ছয়টি সংস্থাকে তাদের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলেছিল। সংস্থাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক), মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (মোবক), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এরপর গত ডিসেম্বরে অর্থ বিভাগ আরও তিনটি সংস্থাকে নতুন করে ১১ হাজার কোটি টাকা জমা দিতে বলে। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)।

গত মাস পর্যন্ত মোট ৯টি সংস্থার মধ্যে ৮টি তাদের জন্য নির্ধারিত টাকা জমা দিয়েছে। শুধু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভাগের ১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৪০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে, ৬০০ কোটি টাকা আর দেয়নি। অথচ গত ৩১ জানুয়ারিতেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতি ছিল ২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। তাই প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পুরোপুরি জমা না দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থ বিভাগ।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, একক সংস্থা হিসেবে বিপিসি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিপিসির কাছে উদ্বৃত্ত ছিল ৩২ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জমাদানকারী সংস্থা হচ্ছে পেট্রোবাংলা। তারা ১৯ হাজার ২৯০ কোটি টাকার স্থিতি থেকে জমা দিয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই সংস্থার স্থিতির পরিমাণ ১১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।

বিপিডিবি ২২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার স্থিতি থেকে জমা দিয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ইপিবি ৩০০ কোটি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০০ কোটি, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০০ কোটি এবং বিএসটিআই ১০০ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮টি সংস্থার উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে সরকার ১৬ হাজার ৪৬ কোটি টাকা পেয়েছিল। সংস্থাগুলো হচ্ছে বিপিসি, পেট্রোবাংলা, বিপিডিবি ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

দুই অর্থবছর মিলিয়ে স্বশাসিত সংস্থাগুলো তাদের স্থিতি থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৩১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা জমা দিয়েছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার স্বশাসিত সংস্থাগুলো থেকে প্রতি অর্থবছরেই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা নেবে। অর্থাৎ এ তালিকায় প্রতি অর্থবছরেই নতুন নতুন সংস্থার নাম যুক্ত হবে। সে অনুযায়ী অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার গত সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সংস্থাগুলোর নিজেদেরই দায়িত্ব হচ্ছে উদ্বৃত্ত তহবিল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন-অর-রশিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পদটি তিন মাস শূন্য ছিল। গত ৩১ মে নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন মো. মশিউর রহমান। তিনি গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় সমস্যা হয়েছে। তবে আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। ১৪ জুন সিন্ডিকেটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। বাকি ৩০০ কোটি টাকা দিতে গেলে কোন কোন খাত থেকে দেওয়া যায়, তা আলোচনার দরকার পড়বে।’ তাঁর দাবি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থিতির পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকার কম।

স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আইনের খসড়া অনুমোদিত হয় মন্ত্রিসভায়। তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের কাছে ওই বছরের মে মাস পর্যন্ত হিসাব দিয়ে জানিয়েছিলেন, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ দেশের মোট ৬৮টি স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত থাকা ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ‘অলস’ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ঠিক এক বছর পর ২০২০ সালের মে পর্যন্ত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ বেড়ে হয় ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। আর গত মার্চে এসে উদ্বৃত্ত আরও ৩৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।