রিকশা চালিয়ে ৪৪৬ টাকা আয়, ইজিবাইকে ১১৬১

কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকায় ইজিবাইক ও রিকশাস্ট্যান্ড থেকে গতকাল বেলা তিনটার দিকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকায় ইজিবাইক ও রিকশাস্ট্যান্ড থেকে গতকাল বেলা তিনটার দিকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

একজন রিকশাচালক দৈনিক গড়ে ৪৪৬ টাকা আয় করেন। আর ভ্যানচালকের আয় গড়ে ৫০০ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। যাঁরা রিকশা বা ভ্যান ভাড়া নিয়ে চালান, ভাড়াবাবদ অর্থ বাদ দিয়ে এ মাসিক আয় হিসাব করা হয়েছে।
বিবিএসের একই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ইজিবাইক চালিয়ে দৈনিক ১ হাজার ১৬১ টাকা আয় হয়। থ্রি-হুইলার সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকেরা দৈনিক আয় করেন ১ হাজার ৪০৬ টাকা।
সম্প্রতি বিবিএস ছয়টি নির্বাচিত পেশা ও সেবা নিয়ে সমীক্ষা করে। গতকাল মঙ্গলবার এ সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। নির্বাচিত সেবা বা পেশাগুলো হলো রিকশা ও রিকশাভ্যান, ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার, মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা, মৎস্য চাষ, সেচসেবা এবং সমবায় সমিতি। অর্থনীতিতে এসব পেশা বা সেবার অবদান কেমন, তা বিশ্লেষণ করতেই বিবিএস এ সমীক্ষা করে।
সমীক্ষাটি প্রকাশ উপলক্ষে বিবিএসে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সোরাইয়া বেগম।
এ কর্মসূচির পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব খাতের অবদান অর্থনীতিতে ক্রমশ বাড়ছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যাতে এসব খাতের প্রকৃত মূল্য সংযোজন গণনা করা যায়, সে জন্য সমীক্ষাটি করা হয়েছে।
রিকশা ও ভ্যান: ৯৬৪ জন চালকের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে এ সমীক্ষা করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ৪০ দশমিক ১ শতাংশ চালক নিজের রিকশা চালান। বাকিরা ভাড়ায় রিকশা চালান। এ জন্য প্রতি পালার জন্য ৬০ টাকা করে ভাড়া গুনতে হয়। তবে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ চালকই দৈনিক এক পালায় রিকশা চালান।
শহরের একজন রিকশাচালক দৈনিক আয় করেন গড়ে ৪৬৬ টাকা। আর গ্রামে দৈনিক আয় হয় ৪০২ টাকা।
অন্যদিকে শহরের ভ্যানচালকেরা দৈনিক আয় করেন গড়ে ৫২১ টাকা, আর গ্রামে আয় হয় ৪৫৮ টাকা। তবে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ ভ্যানচালকের নিজের বাহন নেই। আর প্রায় ৭১ শতাংশ ভ্যানচালকই এক পালায় কাজ করেন।
গাজীপুরের বড়বাড়ী এলাকা থেকে প্রতিদিন রাজধানীতে এসে রিকশা চালান রাসেল মিয়া। রাজধানীর ফার্মগেট, সাতরাস্তা, বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও, গুলশান এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা আয় করেন তিনি। রিকশামালিককে ভাড়াবাবদ দৈনিক ১০০ টাকা দেন রাসেল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে মা ও তিন ভাই-বোনের সংসার চালাই। তবে অবরোধ-হরতালের কারণে এখন আয় হয় দিনে ৩০০-৪০০ টাকা।’
ইজিবাইক থ্রি-হুইলার: ৫৯৪ জন ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার চালকের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে বিবিএস। একজন ইজিবাইক চালকের মাসিক আয় গড়ে ৩০ হাজার ৪১১ টাকা। আর থ্রি-হুইলার চালক আয় করেন মাসে গড়ে ৩৫ হাজার ৩১৫ টাকা। তাঁরা সবাই মাসে গড়ে ২৬ দিন তাঁদের এ বাহন চালিয়ে সংসার চালান। তবে গ্রামের চেয়ে শহরে তাঁদের আয় বেশি হয়।
যাঁরা ভাড়ায় ইজিবাইক চালান, তাঁদেরকে প্রতি পালার জন্য গড়ে ৪৩৩ টাকা মালিককে দিতে হয়। আর প্রতি পালার জন্য থ্রি-হুইলার চালককে গুনতে হয় ৩৩০ টাকা। তবে তিন-চতুর্থাংশ ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার চালকই দিনে এক পালা কাজ করেন।
মানি এক্সচেঞ্জ: ৩৪টি মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে বিবিএস বলছে, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা মাসে গড়ে ৭ হাজার ৬১৪ টাকা আয় করেন। মানি একচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের একটি শাখা বছরে গড়ে ৫ লাখ ৮ হাজার টাকা আয় করে।
মৎস্য: মৎস্যশ্রমিকেরা বছরে গড়ে ৫৪ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেন। আর এক কেজি মাছ উৎপাদন করতে ১৫৭ টাকা খরচ হয়। ১৮৫টি মৎস্য খামারের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে বিবিএস। সমীক্ষা অনুযায়ী, উৎপাদিত বা আহরিত ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ মাছই পুকুরে চাষ হয়।
সেচসেবা: প্রতি একর জমিতে সেচ দিতে খরচ হয় ১ হাজার ৭০৮ টাকা। আর প্রতি একরে আয় হয় ৪ হাজার ১৯ টাকা। প্রায় ৭০ শতাংশ জমিতে বিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ দেওয়া হয়। আর বাকি ৩০ শতাংশ জমিতে সেচ দিতে ডিজেল ব্যবহার করা হয়।
সমবায় সমিতি: ৯৪টি সমবায় সমিতির ওপর সমীক্ষা চালিয়ে বিবিএস বলছে, এসব সমিতির সদস্যদের মধ্যে ৪১ শতাংশই নারী।