রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে চান বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তারা

বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চান ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার বা আইপিপি খাতের বিদ্যুৎ উদ্যোক্তারা। একই সঙ্গে পুরোনো কেন্দ্রের জন্য যে বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে, তাও শোধ করতে চান রিজার্ভের ঋণে। রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়ার সরকারি উদ্যোগের মধ্যে এমন দাবি তুলেছেন বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তারা।

গত সোমবার এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ)। এর আগে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়েও একই চিঠি দেয় সংগঠনটি। যদিও সরকার জানিয়ে দিয়েছে, শুধু সরকারি প্রকল্পের জন্য রিজার্ভের ঋণ ব্যবহার করা যাবে। এ নিয়ে নীতিমালা তৈরি করছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিদেশি ঋণ পরিশোধে রিজার্ভের অর্থ চেয়েছে বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিআইপিপিএ।

বিআইপিপিএর চিঠিতে বলা হয়, রিজার্ভ থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অবকাঠামো প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে বিদ্যুৎ খাত অগ্রাধিকার পাবে। এ জন্য তারা বেশ কিছু যুক্তিও তুলে ধরেছে। সংগঠনটি বলছে, এই খাতের সব আইপিপি প্রকল্প সার্বভৌম গ্যারান্টি পায়। এ খাতের আয় বৈদেশিক মুদ্রায় হয়, আবার বিদেশ থেকে ঋণও নেয়। বর্তমানে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ রয়েছে। যদি রিজার্ভ থেকে ঋণ পাওয়া যায়, তাহলে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। কারণ, বিদেশি ঋণে সুদহার ৬ শতাংশ। আবার রিজার্ভ থেকে ঋণ দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশে টাকা রাখার চেয়ে বেশি মুনাফা পাবে। এদিকে নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প আসছে। এ জন্য আরও ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ প্রয়োজন হবে। এই ঋণও রিজার্ভ থেকে দেওয়ার দাবি তুলেছে সংগঠনটি।

জানতে চাইলে বিআইপিপিএর সভাপতি ইমরান করিম গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার রিজার্ভ থেকে ঋণ দিতে চায়। তাই এই ঋণে আমরা অগ্রাধিকার চাই। কারণ, বিদ্যুৎ খাত অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। আমাদের প্রকল্পে সার্বভৌম গ্যারান্টি থাকে। আশা করি, রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া হলে বিদ্যুৎ খাত আগে এই ঋণ পাবে।’

ইমরান করিম আরও বলেন, বিদেশ থেকে ঋণে ৬ শতাংশের বেশি খরচ পড়ে যায়। রিজার্ভের ঋণে সুদ ৪ শতাংশের নিচে হবে। এই ঋণ পেলে বিদেশি মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকও ভালো মুনাফা পাবে।

তবে অর্থনীতিবিদেরা রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়ার বিপক্ষে। তাঁরা বলছেন, রিজার্ভ হলো দুঃসময়ের সঙ্গী। আবার ঋণ পরিশোধে উত্তম চর্চাসম্পন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। ঋণ পুনর্গঠন, পুনঃ তফসিল করেনি, এমন প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে।

রিজার্ভের অর্থ বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা নিয়ে পাঁচ বছর ধরেই আলোচনা চলছে। নতুন করে আলোচনাটি শুরু হয় গত ৬ জুলাইয়ের পর। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারি খাতের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ নেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে সরকারকে ঋণের নিশ্চয়তা দানকারী (গ্যারান্টার) হতে হবে। তবে এখনই সরকারি প্রকল্পের বাইরে রিজার্ভের অর্থ ব্যবহারের পক্ষে না অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক।