লক্ষ্য যেন বড় উদ্যোক্তা

এবার মোটাদাগে পাঁচ খাতকে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে শর্তের কারণে ছোট উদ্যোক্তারা কম সুবিধা পাবেন।

গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের বাজেটে স্থানীয় শিল্পকে তুলনামূলক বেশি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। কর অবকাশের আওতা অনেকটা ঢালাওভাবে বাড়ানো হয়েছে। তবে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত বড় কোম্পানিগুলোই বেশি সুবিধা পাবে। যেমন কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে গাড়ি, হাসপাতাল, ইলেকট্রনিক পণ্য, ফল প্রক্রিয়াকরণ, দুগ্ধ উৎপাদন, খামার যন্ত্রপাতি ইত্যাদি খাতে। এসব খাতে বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলোই বিনিয়োগ করে থাকে।

এসব খাতে ইতিমধ্যে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁরাও যদি নতুন কারখানা গড়েন, তাহলেও কর ছাড় পাবেন। সার্বিকভাবে বড় উদ্যোক্তারাই কর অবকাশের সুফল বেশি পাবেন। আর ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য এই সুবিধা পাওয়া কঠিন। কারণ, কর অবকাশ সুবিধা পেতে হলে কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন নিতে হবে, যা ছোট বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বেশ দুরূহ ব্যাপার।

সাধারণত সম্ভাবনাময় শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়, যাতে কর ছাড় পেয়ে সেগুলো ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে। এর আওতায়
প্রায় ১০ বছর নানা হারে কর ছাড় মেলে। কর অবকাশ সুবিধা পেয়েই দেশে ওষুধ, চামড়াজাত পণ্য, বাইসাইকেলসহ বেশ কিছু দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটেছে।

এত দিন ২৬টি খাতে কর অবকাশ সুবিধা মিলত। ৩ জুন ঘোষিত ২০২১–২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোটাদাগে পাঁচটি নতুন খাতকে কর অবকাশের আওতায় আনা হয়েছে। সেগুলো প্রথম থেকে দশম বছর পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের ওপর ১০ থেকে ৯০ শতাংশ কর ছাড় পাবে।

গাড়িশিল্প

এবারের বাজেটে তিন চাকা ও চার চাকার গাড়ি তৈরিতে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। শর্ত দেওয়া হয়েছে, কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। ওই সব কারখানায় একটি গাড়ি উৎপাদনে অন্তত ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে। আর উৎপাদনের পাঁচ বছর পর থেকে গাড়ি কারখানায় ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন সিস্টেম ও স্টিয়ারিং সিস্টেম সংযোজন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দেশের তিনটি কোম্পানি ইতিমধ্যে গাড়ি নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে স্থানীয় পিএইচপি গ্রুপ যৌথ উদ্যোগে মালয়েশিয়ার প্রোটন গাড়ি বানাবে। হোসেন গ্রুপ বানাচ্ছে বাংলা কারস নামের গাড়ি। উত্তরা মোটরসও গাড়িশিল্পে বিনিয়োগ করছে।

কৃষিপণ্যের শিল্পায়ন

কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে ফল, শাকসবজি, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং শিশুখাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে। তবে এই সুবিধা পেতে হলে উদ্যোক্তাকে শতভাগ দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করতে হবে।

ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে দেশের দুটি শিল্পগোষ্ঠী যথাক্রমে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ও আকিজ গ্রুপের বিনিয়োগ আছে। আছে ব্র্যাকের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্থাও। এসব প্রতিষ্ঠান এখন দেশীয় বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, কর অবকাশ সুবিধা পেলে একটি শিল্প খাত দাঁড়িয়ে যায়। নতুন বিনিয়োগ আসে। এটি একটি ভালো বার্তা যে সরকার এখন প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসবেন। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ফলে পণ্যের মান ভালো হবে।

খামারের যন্ত্রপাতি তৈরিতেও ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যাবে। শর্ত হচ্ছে, এসব যন্ত্রপাতি বানাতে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে এসিআই গ্রুপ ও মেটাল নামের প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আছে।

কর অবকাশ সুবিধা পেলে একটি শিল্প খাত দাঁড়িয়ে যায়। নতুন বিনিয়োগ আসে। এটি একটি ভালো বার্তা যে সরকার এখন প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসবেন। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ফলে পণ্যের মান ভালো হবে।
কামরুজ্জামান কামাল পরিচালক, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য পণ্য

হোম অ্যাপ্লায়েন্স বা গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক সেলাই মেশিন, ইন্ডাকশন কুকার, কিচেন হুড, কিচেন নাইভস এসব ইলেকট্রনিক পণ্য বানালে কর অবকাশ সুবিধা মিলবে। তবে শর্ত হচ্ছে, নতুন কারখানাকে অন্তত ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে।

দেশে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য তৈরি করে ওয়ালটন গ্রুপ, ভিশন, মিনিস্টার গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠান যদি কর অবকাশের তালিকায় থাকা পণ্য বানায় কিংবা নতুন কারখানা করে, তাহলে কর ছাড় পাবে।

হাসপাতাল

ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বাইরে ২০০ থেকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণে বিনিয়োগ করলে এবং ৫ শতাংশ শয্যা আইসিইউ থাকলে কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যাবে। ফলে দেশের স্বাস্থ্য খাতের বড় বড় নামকরা হাসপাতালের মালিকেরা সারা দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।

হালকা প্রকৌশল

হালকা প্রকৌশল খাতে, অর্থাৎ শুধু শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ বানালেও কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যাবে।