লেনদেনে বেড়েছে কার্ডের ব্যবহার

কার্ডে কেনাকাটায় মিলছে বিভিন্ন ছাড়ও। এতে ব্যাংকগুলোর কার্ড ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

রমজানের শুরু থেকেই করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দোকানপাট, বিপণিবিতান বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীদের আন্দোলন ও দাবির মুখে ২৫ এপ্রিল থেকে দোকান ও মার্কেট খুলে দেওয়ার পর ক্রেতারা ঈদের কেনাকাটা শুরু করেন। মহামারির মধ্যেও থেমে নেই কেনাকাটা। স্বাভাবিক সময়ের মতো না হলেও বড় বড় মার্কেটে ক্রেতা সমাগম দেখা গেছে।

করোনার কারণে এবার কেনাকাটার ক্ষেত্রে কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। ডেবিট ও ক্রেডিট উভয় ধরনের কার্ডের ব্যবহারই বেড়েছে। কেনাকাটায় কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আগে থেকেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানা মূল্যছাড় ঘোষণা করেছে। এতে ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যাংকগুলোর কার্ড ব্যবসা কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কার্ডের পাশাপাশি মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনও বেড়েছে ঈদ সামনে রেখে। দুই মাস আগেও যেখানে এমএফএসে দৈনিক লেনদেন ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকা। এখন তা সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

ব্যাংকগুলো বলছে, রমজানের শেষের দিকে এসে কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা ২-৩ গুণ বেড়েছে। এ কেনাকাটার ২০-২২ শতাংশই হচ্ছে ই-কমার্সে। দেশে ব্যাংক খাতে কার্ডের বাজারে পয়েন্ট অব সেলসের (পিওএস) বড় অংশীদারত্ব বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংকের। আবার ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বেশি গ্রাহকও সিটি ব্যাংকের। কারণ, ব্যাংকটি অ্যামেক্স কার্ডের একক সেবা দিচ্ছে। যার গ্রাহক প্রায় ৫ লাখ। ফলে ১৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের মধ্যে এককভাবে সিটি ব্যাংকেরই গ্রাহক এক-তৃতীয়াংশ।

ব্যাংকটির পিওএসের মাধ্যমে রমজানের শুরুতে প্রতিদিন ১০-১১ কোটি টাকার লেনদেন সম্পন্ন হতো। আর এখন গড়ে ৩০ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। সব ব্যাংকের কার্ডধারী গ্রাহকেরা এই সেবা পাচ্ছেন। ব্যাংকটির অ্যামেক্সের কার্ড দিয়ে দারাজ, অথবা, সেইলর, রং, এস্টেসি, ইনফিনিটি, ফ্রি ল্যান্ডে কেনাকাটায় মিলছে ১০ শতাংশ ছাড়। আরও বেশি ছাড় মিলছে অ্যাপেক্স, লুবনান, কে ক্রাফটসহ আরও বেশ কয়েকটি শোরুমে।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুতে সিটি ব্যাংকের পিওএসে প্রতি মাসে ৫৮০ কোটি টাকার লেনদেন হতো। কিন্তু লকডাউন শুরু হলে লেনদেন ৩০০ কোটিতে নেমে গিয়েছিল। ২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে ঈদের মাসে আমাদের পিওএসে লেনদেন হয়েছিল ৬২২ কোটি টাকা, আর এ বছর করোনার মধ্যেও ২৭ রমজান পর্যন্ত ৫২৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এটা গত ২০ দিনে শপিং মলগুলো সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার ফল।’

জানা গেছে, কার্ডের বাজারে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকও বেশ এগিয়ে। ব্যাংকটির ক্রেডিট কার্ড গ্রাহক প্রায় ২ লাখ। ব্যাংকটির গ্রাহকেরা এখন প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি টাকার লেনদেন করছেন। রমজানের আগে প্রতিদিন লেনদেন করতেন ৭-৮ কোটি টাকা। ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে ৮০টি শোরুমে ১০ শতাংশের বেশি ছাড় মিলছে।

শুধু ব্র্যাক বা সিটি ব্যাংক নয়, ঈদ সামনে রেখে সব ব্যাংকের কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। ঈদ সামনে রেখে ইস্টার্ণ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ডাচ্‌-বাংলা, লঙ্কাবাংলার কার্ডের ব্যবহারও অনেক বেড়েছে। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্ডের গ্রাহকেরাও নানা ধরনের ছাড়ে সুযোগ নিয়ে কেনাকাটায় খরচ বাড়িয়েছেন।

মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, দোকানপাট খুলে দেওয়ার পর কেনাকাটা বেড়েছে। তবে তা স্বাভাবিক সময়ের অবস্থায় ফেরেনি। এ ছাড়া কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যপণ্য ও খাদ্য সরবরাহ বিল পরিশোধ বেড়েছে।