শবে বরাতে ‘বরাতি রুটির’ ক্ষয়িষ্ণু ব্যবসা
দেখতে মাছের মতো, কুমিরের মতো অথবা ফুলের মতো, কিন্তু আদতে সেগুলো রুটি। ভেতরে মোরব্বা আর কিশমিশে ঠাসা, ওপরে কাচ আর মার্বেলের সজ্জা। পুরান ঢাকার এই বিশেষ রুটির নাম বরাতি রুটি। বিশেষ রুটি দীর্ঘদিন ঢাকার মানুষের শবে বরাতের ঐতিহ্য হলেও করোনায় অন্য অনেক ব্যবসার মতো ক্ষয়িষ্ণু এর বাজার।
বরাতি রুটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই রুটি পাওয়া যায় শুধু শবে বরাতের আগের এবং পরের কয়েক দিনের মধ্যে। শুধু নকশাদার বরাতি রুটি নয়, এ সময় সাধারণ বনরুটি এবং অন্যান্য রুটিরও চাহিদা থাকে অনেক। ফলে পথে পথে বসে যায় বাজার। তবে এই বছরের চিত্র ভিন্ন। করোনায় স্বাস্থ্য সচেতনতা ও আর্থিক সংকটে পড়ে ক্রেতারা অনেকটাই সরে এসেছেন শবে বরাত উদ্যাপন থেকে।
আজ সোমবার পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালুয়া-রুটির চিরায়িত বাজার এখন আর নেই। স্বাভাবিক সময়ে গেন্ডারিয়া রেলস্টেশন রোড, লোহারপুল মোড়, সূত্রাপুর, মালেকা টোলা, রায় সাহেবের বাজারে শবে বরাতে যে শামিয়ানা টাঙিয়ে হালুয়া-রুটি বিক্রি হতো, সেগুলো আর হচ্ছে না। এমনকি চকবাজারের মূল সড়কেও নেই হালুয়া-রুটির বিকিকিনি।
চকবাজারে শুধু আলাউদ্দিন সুইটমিট এবং আনন্দ কনফেকশনারি—এই দুই দোকানে বিক্রি হতে দেখা যায় বরাতি রুটিসহ অন্যান্য রুটি। দাম আকৃতি, নকশা ও মানভেদে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
দাম যা-ই হোক, সব দোকান বন্ধ করে মাত্র গুটিকয়েক দোকান খোলা থাকলে যতটা ভিড় হওয়ার কথা, ততটা নয়। নাজিমউদ্দিন রোডের আনন্দ কনফেকশনারির ম্যানেজার মো. হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তায় বাজার বসাতে সেভাবে কোনো নির্দেশনা আসেনি, তবে ক্রেতারা করোনার কারণে রাস্তা থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন না। এ ছাড়া মানুষের হাতে সে পরিমাণ টাকা নেই যা দিয়ে এসব বাহারি রুটি কেনা যায়।
আনন্দ কনফেকশনারিতে হালুয়া কিনতে নাজিমউদ্দিন রোড থেকে এসেছিলেন রবীন। তিনি জানালেন, বাড়িতে খাওয়ার জন্য মূলত কিনতে আসা। খুব কাছের দু-একজন আত্মীয়কে পাঠাবেন শবে বরাতের খাবার। শুধু ঐতিহ্যটা ধরে রাখার জন্য যতটুকু না করলেই না, ততটুকু করছেন।
করোনায় ব্যবসার মন্দার কথাই শোনালেন স্টার বেকারি ও রেস্টুরেন্ট চেইনের বেকারি অংশের ব্যবস্থাপক মো. আরিফুল ইসলামও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর করোনার কারণে ব্যবসা পুরোই বন্ধ ছিল, এ বছর তাও কিছুটা চাহিদা তৈরি হয়েছে, গতকাল হরতাল হওয়ায় ক্রেতা খুবই কম।
স্টার বেকারির জয়কালী মন্দিরের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, খুব ঢিলেঢালাভাবেই কাজ করছেন কর্মীরা। শাখাগুলো থেকেও কম কাজের ফরমাশ এসেছে। রুটির কারখানার প্রধান কারিগর মো. মিলন হাওলাদার বলেন, আগে শবে বরাতের পরদিন পর্যন্ত কাজের চাপ থাকত। এ বছর শবে বরাতের রাতেও কাজের চাপ তেমন নেই।