সবখানে মেলে ডাকঘরের সেবা, এমনকি বিদেশেও

একসময় চিঠি, পত্রিকা ও নথিপত্র অন্যত্র পাঠানোর জন্য সরকারি ডাকঘরই ছিল একমাত্র মাধ্যম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন এসব সেবার নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের হাতে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে ডাক বিভাগও নতুন নতুন সেবা চালু করছে। এসব সেবায় সাড়া মিললেও তা আশানুরূপ নয়।

তবে এখনো ডাকসংক্রান্ত যত সেবা ডাকঘরে পাওয়া যায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তত সেবা দিতে পারে না। কারণ, সারা দেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ডাক বিভাগের অফিস বিস্তৃত। বাজার, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নেও রয়েছে ডাকবাক্স। পাশাপাশি অনেক দেশের ডাক অফিসের সঙ্গে বাংলাদেশের ডাক বিভাগের চুক্তি রয়েছে। এ ছাড়া ডাক বিভাগের সেবা এখন পর্যন্ত সাশ্রয়ী ও নিরাপদ।

ডাক বিভাগের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করতে দেখা যায় ডাক কর্মকর্তাদের। তাঁরা লিখছেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র ডাক বিভাগই বোর্ডে নিয়ে যায়। কখনো কি শুনেছেন কারও উত্তরপত্র হারিয়ে গেছে। এর মাধ্যমে কর্মকর্তারা ডাক সেবায় প্রাণ ফেরাতে চান।

আসুন দেখে নিই, ডাকঘরে কী ধরনের ডাক সেবা পাওয়া যায়। ডাকঘর সাধারণ সেবা ও এক্সপ্রেস সেবা নামে দুই ধরনের সেবা দেয়। সাধারণ সেবায় একটু বেশি সময় লাগে, খরচও কম। এক্সপ্রেসে দ্রুত পৌঁছায়, খরচও একটু বেশি। দেশের ক্ষেত্রে এই সেবা জিইপি ও বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ইএমএস নামে পরিচিত। বর্তমানে ৪৩টি দেশের সঙ্গে ইএমএস চালু আছে। পণ্যের অবস্থান ইন্টারনেটে ট্র্যাক করার ব্যবস্থাও আছে। ২০ গ্রাম হইতে ২০ কেজি পর্যন্ত পণ্য পাঠানো যায়।

ডাকঘর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চিঠিপত্র, পোস্ট কার্ড, পার্সেল, খবরের কাগজ ও সাময়িকী, বই বা প্যাকেট পাঠানো যায়। একইভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিঠি ও নথিপত্রও পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে করোনার কারণে বৈশ্বিক ডাক যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক কর্মকর্তারা। কারণ, এখনো অনেক দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এর বাইরে ডাকসংক্রান্ত আরও বেশ কিছু সেবা দেয় ডাকঘর। এর মধ্যে রয়েছে পোস্ট ব্যাগ, ভ্যালু পেয়েবল পোস্টা (ভিপিপি) ও সার্টিফিকেট অব পোস্টিং। পোস্ট ব্যাগের মাধ্যমে বছরে ৩০০ টাকায় ডাকঘরে বিশেষ ব্যাগ ভাড়া নেওয়া যায়, যেখানে ভাড়া গ্রহণকারীর নামে আসা চিঠি, নথিপত্র ও আগের নথিপত্র জমা থাকে।

ভিপিপিতে প্রাপক ডাকযোগে দ্রব্য পাওয়ার পর ডাকপিয়ন বা কর্মকর্তার কাছে পণ্যের দাম পরিশোধ করবেন। সার্টিফিকেট অব পোস্টিংয়ে পণ্য ডাক যাচ্ছে, এই নিশ্চয়তার সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এর বাইরে স্পিড পোস্ট নামে নতুন সেবা চালু করেছে ডাক বিভাগ, যার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আম, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল ও শাকসবজি পাঠানো যায়।

ডাক সেবার পাশাপাশি ডাকঘরের বিভিন্ন আর্থিক সেবাও চালু রয়েছে, যার মাধ্যমে অন্যত্র টাকা পাঠানো যায়। আবার টাকা জমানোরও বিভিন্ন সেবা পণ্য আছে ডাকঘরের।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনার মধ্যে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ডাক বিভাগের রাজস্ব আয় কমে গেছে। গত অর্থবছরে আয় হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। ২০১‍৯-২০ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৪৫১ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৪৫ কোটি টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪০৫ কোটি টাকা।

ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার মধ্যে অফিস-আদালত বন্ধ ছিল। ফলে ডাক সেবা থেকে আয় অনেক কমে গেছে। এই কারণে পুরো অর্থবছরে রাজস্ব আয় কমেছে। যদিও করোনার মধ্য খোলা ছিল ডাক সেবা।