সরকারি আমানত চায় বেসিক ব্যাংক

রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য চার ব্যাংকের মতো সরকারি সংস্থাগুলোর আমানত পেতে চায় বেসিক ব্যাংক। সহযোগিতা চেয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি।

বর্তমানে তহবিল ব্যয় বেশি, এমন কথা বলে স্বল্প সুদে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও বিশেষ তহবিলের আমানত চায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের শরণাপন্ন হয়েছে।

বেসিক ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আনিসুর রহমান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের কাছে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের তহবিল পাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসিক ব্যাংক শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংকই প্রথম শতভাগ অনলাইন ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারল্য সংরক্ষণে ব্যাংকটিকে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ সুদে আমানত নিতে হচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঋণের সুদ ৯ শতাংশ কার্যকর করেছে বেসিক ব্যাংক। এতে ঋণ আমানতের সুদহারের ব্যবধান কমছে। কিন্তু উচ্চ তহবিল ব্যয় এই ব্যাংকের পরিচালন ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমানত পেতে গেলে সরকারি প্রকল্প, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও বিশেষ তহবিলের ব্যাংকার হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত থাকতে হয়। একসময় বেসিক ব্যাংকের তা ছিলও। কিন্তু ২০০৯-১৪ সালে আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান থাকাকালে সংঘটিত নানা কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকটি আস্থার সংকটে পড়ে যায়।

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, প্রকল্প বা তহবিলসংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকেরা এখন বেসিক ব্যাংকে আমানত হিসাব খুলতে আগ্রহী হন না। অথচ গত বছরের ১৯ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী আমানত পাচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং পরিচালন বাজেটের আওতায় থাকা অর্থ রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলো নিয়মিতই পাচ্ছে। এতে ওই ব্যাংকগুলোর আমানত ব্যয় অনেকাংশেই কমছে। অথচ রাষ্ট্রমালিকানাধীন হওয়া সত্ত্বেও বেসিক ব্যাংক সুযোগটি পাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিমা কোম্পানি ও পেনশন তহবিলের আমানত ছিল ১১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলের আমানত ৭ হাজার ৮৫ কোটি টাকা এবং গ্রামাঞ্চলের আমানত ৪ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা।

বেসিক ব্যাংকের এমডি আনিসুর রহমান গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের স্বল্প সুদের তহবিল পেলে দ্রুততম সময়ে বেসিক ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবে। মন্ত্রণালয়ের কাছে আমরা এই সাহায্যটুকু চেয়েছি।’

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগও এ ব্যাপারে বেসিক ব্যাংককে সাহায্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

যাদের আমানত আছে

বর্তমানে বেসিক ব্যাংকে সরকারি সংস্থাগুলোর আমানত রয়েছে ১৪৫ কোটি টাকার। এগুলোর মধ্যে পাট অধিদপ্তরের ১২ কোটি, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ৩ কোটি, ঢাকার বাইরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়গুলোর সাড়ে ৬ কোটি, সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৩০ লাখ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পৌনে ৬ লাখ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাড়ে ৩ লাখ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সোয়া ৬ কোটি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়গুলোর ৫২ লাখ টাকা আমানত রয়েছে।

স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৯ কোটি; বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স একাডেমির ১ কোটি ১০ লাখ; রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ১৪ কোটি; চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ৮৪ লাখ; সরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ১২ কোটি; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩ লাখ; উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ লাখ এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার ৩৫ লাখ টাকার আমানত রয়েছে।

বেসিক ব্যাংকে অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দেড় হাজার কোটি টাকার আমানত রয়েছে সার, গ্যাস, রাসায়নিক ও ওষুধ কারখানাগুলোর। তিতাস গ্যাসের ২৯০ কোটি এবং পেট্রোবাংলার ২০০ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এই ব্যাংকে। এ ছাড়া বিসিআইসির ৪০০ কোটি এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ২৬৩ কোটি টাকা রয়েছে।

বেসিক ব্যাংকে আমানত রাখা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ইস্পাত শিল্প করপোরেশন, পদ্মা অয়েল, টিসিবি, বিটিসিএল, বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিসিক ইত্যাদি। এ ছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মিলিয়ে সাধারণ বীমা করপোরেশন ও জীবন বীমা করপোরেশনের রয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার আমানত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ সাত হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু ব্যাংকটিতে কিছু সমস্যা আগে হয়েছে, ফলে সংস্থাগুলোর একটু রক্ষণশীল থাকাটাই সংগত। তবে স্বল্প সময়ের জন্য আমানত রেখে ব্যাংকটির আচরণ যাচাই করতে পারে সংস্থাগুলো। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ও ভূমিকা রাখতে পারে।