সরবরাহ বাড়ায় কমেছে পেঁয়াজের দাম, চিনির দাম অপরিবর্তিত

ফাইল ছবি

শুল্ক কমানো হলেও বাজারে পেঁয়াজ ও চিনির দামে তার কোনো প্রভাব নেই। তবে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি করে বলেছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো শুল্ক দিতে হবে না। এতদিন ৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক দিতে হতো। আর অপরিশোধিত চিনি আমদানির ক্ষেত্রে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (এসডি) ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে।

দেড় মাসের ব্যবধানে ৭০ টাকা কেজির চিনি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা এবং এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৮০ টাকা হয়ে যাওয়ার পর শুল্ক কমানোর এ ঘোষণা দেওয়া হয়। তাতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন ক্রেতারা। তবে আজ রোববার রাজধানীর একাধিক বাজারে ঘুরে দেখা যায়, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি। তবে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে ৬০–৬৫ টাকায় নেমেছে।

রাজধানীর টাউন হল বাজারে আজ দুপুরে বাজার করতে এসেছিলেন গৃহিণী নাজমা সুলতানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। করোনার কারণে যেসব প্রতিষ্ঠান বেতন কমিয়ে দিয়েছিল, সেসব প্রতিষ্ঠানের অনেকে তা আর বাড়ায়নি। পেঁয়াজ ও চিনির ওপর থেকে শুল্ক কমানোর খবরে ভেবেছিলাম আগের চেয়ে কম দামে কিনতে পারব। কিন্তু বাজারে এসে দেখলাম কাগজের সিদ্ধান্ত কাগজেই আছে।’

রাজধানীর রামপুরা বাজার, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি খোলা চিনি ৮০ টাকায় এবং প্যাকেট চিনি ৮৫–৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টাউন হল বাজারে খোলা চিনির মজুতই ছিল না। টাউন হল বাজারের মুদি দোকানদার জাফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার খোলা চিনির বিক্রয় মূল্য প্রতি কেজি ৭৪ টাকা বেঁধে দিলেও ডিলারের কাছ থেকে আমাদের ৭৮ টাকা কেজি দরে চিনি কিনতে হচ্ছে। ওদিকে মোবাইল কোর্ট এলে জরিমানা করা হয়। তাই খোলা চিনি দোকানে রাখছি না।’
আবদুল মোনেম গ্রুপের ইগলু ব্র্যান্ড ও সিটি গ্রুপের তীর ব্র্যান্ডের চিনি মজুত থাকলেও মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনির মজুত ছিল না কারওয়ান বাজারে। তবে কারওয়ান বাজারে ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনির ডিলার মো. ইসহাক বলেন, ১৫ দিন ধরে তাঁদের কাছে চিনির জোগান নেই। কবে আসবে তা–ও জানেন না তিনি।’

গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতি কেজি খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭৪ টাকা ও প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে, যার প্রভাব এখন পর্যন্ত নিত্যপণ্যের বাজারে দেখা যায়নি।

সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সচিব রাশেদুজ্জামান আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআর আমদানি শুল্ক কমাতে সম্মত হলেও চিনির নতুন কোনো দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে বাজারে চিনির দাম আগের মতোই আছে। নতুন দাম নির্ধারিত হওয়ার পর বলা যাবে খুচরা বাজারে কত টাকায় বিক্রি হবে।

বাজারে পেঁয়াজের দাম গত সপ্তাহের মাঝামাঝি ছিল প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।

আজ রোববার রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজারে সেই দাম কিছুটা কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছে। তবে আড়তদারেরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে মূলত সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায়। আমদানি শুল্ক কমানোর কোনো প্রভাব দামের ওপর ছিল না বলে জানান রাজধানীর শ্যামবাজারের আড়তদার নারায়ণ সাহা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে চালান আসায় বর্তমানে পেঁয়াজের জোগান বেশ ভালো। তাতে পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৪ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে।