সুদ হার নিয়ে চাপে আছি, অপেক্ষায় আছি নতুন সিদ্ধান্তের

বেসরকারি খাতের মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর পূর্ণ করেছে। ব্যাংক খাতের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গত ২৩ বছরের নানা অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব

প্রশ্ন :

সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য ও কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। এতে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। ডলারের দামও বেড়ে গেছে। এ সংকটে আপনাদের অভিজ্ঞতা কী?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: মার্কেন্টাইল ব্যাংকের রপ্তানি আয় খুবই ভালো। গত বছর ১৬ হাজার ৪২১ কোটি টাকার রপ্তানি আয় এসেছে আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে। পাশাপাশি প্রবাসী আয় এসেছে চার হাজার কোটি টাকার। ফলে আমদানি বিল মেটাতে গিয়ে আমাদের
বড় কোনো সংকটে পড়তে হয়নি। গত বছর আমাদের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকার পণ্য। ডলার নিয়ে সামান্য যেটুকু সংকট হয়েছিল, আমরা তা কাটিয়ে উঠেছি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক এই বাজারের লাগাম টেনে ধরেছে। তাই নতুন করে আর সংকট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

প্রশ্ন :

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও বেড়ে গেছে। ফলে মেয়াদি আমানতের সুদহার বাড়াতে হচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহারও বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার সময় এসেছে কি?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: বর্তমানে আমরা সবাই একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না
উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। তার প্রভাব আমাদের ওপরও পড়েছে। ফলে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে। ডলারের দাম
বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামালসহ সব আমদানি পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। এতে মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, সবার সম্মিলিত উদ্যোগ এবং সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপের ফলে এ সংকট কেটে যাবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয়ই বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। সুদহার নিয়ে আমরাও চাপে আছি। অপেক্ষায় আছি সুদহার নিয়ে কী সিদ্ধান্ত আসে তার জন্য।

গত বছর আমাদের মাধ্যমে আমদানি হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকার পণ্য। ডলার নিয়ে সামান্য যেটুকু সংকট হয়েছিল, আমরা তা কাটিয়ে উঠেছি। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক এই বাজারের লাগাম টেনে ধরেছে। তাই নতুন করে আর সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই।
কামরুল ইসলাম চৌধুরী ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক

প্রশ্ন :

করোনার পর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবসা কেমন হচ্ছে?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: করোনার পর ২০২১ সালে আমরা প্রায় ৬১১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছি। একই সময়ে ব্যাংকের
মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। মোট আমানত ও ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২৭ হাজার ৫৫ কোটি ও ২৬ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। গ্রাহকের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ১৫১টি শাখা ও ২১টি উপশাখার মাধ্যমে আমরা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছি। এ ছাড়া দেশজুড়ে আমাদের রয়েছে ১৭৩টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট। আমাদের বিনিয়োগের বড় অংশ পোশাক খাতে। পোশাকের মূল্য বেড়ে গেছে, পাশাপাশি ক্রয়াদেশও বাড়ছে। এ জন্য এ খাতের ব্যবসায়ীরা অনেকেই ঋণের সীমা বাড়ানোর জন্য আসছেন। এ জন্য আমরা একধরনের চাপে আছি। এ খাতের পুরোনো ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। নতুন করে এ খাতে কেউ আসছেন না।

প্রশ্ন :

বড়দের দিকে আপনাদের নজর বেশি। ছোট উদ্যোক্তাদের দিকে তেমন নজর দিচ্ছেন না কেন?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: এ বছর আমরা এসএমই ও খুচরা ব্যবসার দিকে বেশি নজর দেব। যাতে দেশের আপামর মানুষ সুবিধা পায়। পাশাপাশি আদালত চালু হওয়ায় খেলাপির মামলাগুলোও সচল হয়েছে। এ বছর আমরা পুরোনো ঋণ আদায়ের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ীদের দিকে বেশি গুরুত্ব দেব।

প্রশ্ন :

দুই যুগে পা রেখেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। নতুন কি কি সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে?

কামরুল ইসলাম চৌধুরী: আমরা একটি পুরোপুরি ইসলামি শাখা চালুর পরিকল্পনা করছি। এর মাধ্যমে সব শাখায় ইসলামি ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ইসলামি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড চালু করা হবে। এগুলো হলো তাকওয়া ইসলামি ডেবিট কার্ড, তাকওয়া ইসলামি প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড, তাকওয়া ইসলামি গোল্ড ক্রেডিট কার্ড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিগনেচার ক্রেডিট কার্ড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক গোল্ড ক্রেডিট কার্ড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রিপেইড কার্ড। তা ছাড়া যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা ‘রেইনবো’ নামে কার্যক্রম চালু করেছি। এ অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহক ঘরে বসে তাঁর সব ব্যাংকিং তথ্য ও লেনদেন সম্পন্ন করতে পারছেন।