স্কটল্যান্ডের জাদুঘরে বাংলাদেশের ফোন

স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে পল্লীফোন

যুক্তরাজ্যের একটি দ্বীপরাষ্ট্র স্কটল্যান্ড। স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডেনবার্গে অবস্থিত স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে একটি ফোন। জাদঘুরের এক কোনায় গ্লাসে ঘেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্যালারিতে বাংলায় লেখা ‘পল্লী ফোন’ নামের বোর্ডটিই যেন এক খণ্ড বাংলাদেশ।

কীভাবে একটি মুঠোফোন তথা প্রযুক্তি মানুষের জীবন বদলে দেয় এবং মানুষের আয়ের পথ খুলে দেয়, তা বিশ্ববাসীকে জানাতেই স্কটল্যান্ডের ওই গ্যালারিতে পল্লীফোনের বোর্ডটি স্থাপন করা হয়। এ বোর্ডটি সংগ্রহ করা হয় গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকা থেকে। সাইনবোর্ডটি তথা পল্লীফোনের ব্যবসাটি ছিল ওই এলাকার গ্রামীণ ব্যাংকের গ্রাহক সামসুন নাহারের। পল্লীফোন দিয়ে ব্যবসা করে ভাগ্যবদল করেছিল সামসুন নাহার।

স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশের শোভা ছড়ানো পল্লীফোনটি ছিল গ্রামীণ টেলিকমের একটি উদ্যোগ। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীদের ভাগ্যোন্নয়নে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে পল্লীফোন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।একই দিনে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু হয় গ্রামীণফোনেরও। গ্রামীণফোনের মালিকানার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছে গ্রামীণ টেলিকম। মূলত গ্রামীণফোনের কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক ধাপ ছিল পল্লীফোন। এই পল্লীফোন ভাবনা থেকেই পরবর্তী সময়ে গ্রামীণফোনের ভাবনা বা সূত্রপাত।

গত নভেম্বরে যুক্তরাজ্য সফরকালে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডেনবার্গ শহরটি ঘুরে দেখতে গিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন বাংলাদেশি সাংবাদিক। এডেনবার্গ ঘুরে দেখার অংশ হিসেবে এক সকালে হাজির হই দেশটির জাতীয় জাদুঘরে। জাদুঘর ঘুরে দেখার সময় হঠাৎ থমকে দাঁড়াই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গ্যালারির সামনে। এ থমকে দাঁড়ানোটা ছিল যতটা না আশ্চর্যের, তার চেয়ে বেশি গর্বের। এক খণ্ড বাংলাদেশের গর্ব। আর তাই ওই গ্যালারির সামনে তথা ‘পল্লী ফোন’–এর সাইনবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার লোভ সামলাতে পারিনি আমরা ছয় সাংবাদিক।

কী আছে সেই সাইনবোর্ডে

সাইনবোর্ডটির এক পাশে রয়েছে নকিয়া এন৩৩১০ মডেলের ফোনসেট, অন্যপাশে বাংলায় বড় হরফে লেখা ‘পল্লীফোন’। তার নিচে ছোট হরফে তিনটি লাইনে লেখা—‘এখান থেকে কম খরচে দেশ–বিদেশে ফোন করা যায়। সদস্য নাম–মিসেস সামসুন নাহার, স্বামী সিরাজ উদ্দিন। কেন্দ্র ৪৭/ম, বরাব মৌচাক, কালিয়াকৈর শাখা।’ সাইনবোর্ডটির কোনায় কোনায় জং ধরেছে। বোঝা যায়, অনেক দিনের পুরোনো। ইতিহাসের অংশ হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের জং ধরা সেই সাইনবোর্ডটি এখন আলো ছড়াচ্ছে বিশ্বদরবারে।