পোশাক কারখানাসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলছে রোববার

তৈরি পোশাক কারখানা
ফাইল ছবি

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা আগামী রোববার খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে রপ্তানিকারকেরা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। যদিও চলমান বিধিনিষেধে শ্রমিকেরা দূর দূরান্ত থেকে কিভাবে কর্মস্থলে ফিরবেন তার কোনো নির্দেশনা নেই।

রোববার সকাল ছয়টা থেকে পোশাকসহ সব রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাকে বিধিনিষেধের আওতামুক্ত ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আজ শুক্রবার বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল ব্যবসায়ী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে যত দ্রুত সম্ভব শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার অনুরোজ জানান। তার একদিন পরই রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিল সরকার।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলতি বছরের এপ্রিলে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করলেও রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা উৎপাদন চালানোর সুযোগ পায়। সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত ও পরে ১ থেকে ১৪ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প কারখানা চালু ছিল। তবে ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ১৪ দিনের কঠোরতম বিধিনিষেধে সব ধরণের শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকবে সেই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে সরকারের সঙ্গে দেন দরবারের নামেন পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাঁচ সংগঠনের নেতারা। মন্ত্রীপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দেন তারা। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই কাজে আসেনি। সরকার নমনীয় হয়নি। ফলে চামড়া, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল।

চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় হয়। তাতে সিদ্ধান্ত হয়, চলমান বিধিনিষেধে শিল্প কারখানা খোলার জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকলেও তা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তার মানে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা বন্ধই থাকছে। তবে শেষ পর্যন্ত ছাড় পেল রপ্তানিমুখী সব শিল্পকারখানা।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার আশপাশে থাকা শ্রমিকদের নিয়েই আমরা শনিবার উৎপাদন শুরু করতে চাই। অনেক শ্রমিক ঈদে গ্রামে যায়নি। অনেকে আবার ঈদের পর ফিরেও এসেছে। আমাদের ধারণা ৭০ শতাংশ শ্রমিকই কারখানার আশেপাশেই রয়েছে। যারা গ্রামে আছেন তাদের এখনই না আনতে সদস্য কারখানাগুলো যাতে চাপ না দেয় সেই নির্দেশনা দেওয়া হবে।

অন্যদিকে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, কারখানার আশপাশে যেসব শ্রমিক আছে তাদের দিয়েই উৎপাদন শুরু হবে। কত শতাংশ শ্রমিক হাজির হতে পারে সেটি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কারখানার খোলার সংবাদে শ্রমিকেরা বিধিনিষেধের মধ্যে গ্রাম থেকে চলে আসবে কিনা সে প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কিছু শ্রমিক তো হুমমুড় করে চলে আসবে। সেটি যেন না হয় সে জন্য আমাদের প্রশাসনের সহযোগীতা লাগবে।

করোনার প্রথম ধাক্কায় গত বছর এপ্রিলে বিধিনিষেধের মধ্যেও কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছিল। সেবার পোশাক কারখানা বন্ধ করতে চাননি শিল্পমালিকেরা। তাতে সরাসরি সায় ছিল সরকারের। ফলে মালিকদের পাশাপাশি সরকারের শ্রম ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তহীনতা ও দায়সারা কাজের কারণেই ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি হয়। সামাজিক দূরত্ব না মেনে ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার শ্রমিক ঢাকা ও আশপাশের শিল্পাঞ্চলে ফিরেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলে মালিকেরা কারখানা বন্ধ ঘোষনা করেন।