২০% ভর্তুকি বিদেশিদেরও

কৃষিপণ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি সবাইকে সমান হারে নগদ সহায়তার সিদ্ধান্ত। বেজা বলছে, বিনিয়োগ বাড়বে।

দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা করে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি সবাইকে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।

বর্তমানে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুধু দেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা রয়েছে। আর অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরের বিনিয়োগকারীদের জন্য এ হার ২০ শতাংশ।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সমান হারে নগদ সহায়তা দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত আসে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বোর্ডের সভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এক মাসের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে। নগদ সহায়তাটি দেওয়া হচ্ছে বেজার প্রস্তাবে।

জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কিছু জাপানি কোম্পানি ও প্রবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমিতে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু বাইরে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তার ফলে তাদের পক্ষে কোনোভাবেই প্রতিযোগিতা সক্ষম হওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগ ছিল শাস্তির মতো।

পবন চৌধুরী একটি জাপানি কোম্পানির উদাহরণ দেন, যারা শুধু এই নগদ সহায়তার বৈষম্যের কারণে কারখানা করেনি। কোম্পানিটি দেশে এখন চুক্তিভিত্তিক চাষিদের মাধ্যমে মিষ্টিআলু উৎপাদন করছে। নগদ সহায়তার এ সিদ্ধান্ত আসার ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আশাবাদী তিনি।

দেশের কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাত রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো করছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকার বাজারের দরজা খুলছিল বাংলাদেশের জন্য। সব মিলিয়ে এটি এখন দেশের তৃতীয় বড় রপ্তানি আয়ের খাত। চামড়া এ খাতের পেছনে পড়েছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি। আগের বছরের চেয়ে তা ৫ শতাংশের মতো কম। এর মানে হলো, করোনার আঘাতের পরও এ খাতে রপ্তানি আয় খুব বেশি কমেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিভিন্ন পণ্যে ৩৭ ধরনের নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (শাকসবজি ও ফলমূল) এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য। এ ক্ষেত্রে নগদ সহায়তার হার ২০ শতাংশ। তবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগকারীদের জন্য এ সুবিধা ছিল না।

অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থা বেজা চাইছিল তাদের জন্যও এ সুবিধা দেওয়া হোক। তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠায় ২০১৯ সালের ১০ জুন। এ প্রস্তাবের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত বছরের ১ জুলাই অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়। পরে দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনৈতিক অঞ্চলে শুধু দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বাদ পড়ে যৌথ ও একক বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বেজার সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি আবার প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনে তারা।

এদিকে দুজন ব্যবসায়ী প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোর কাছে কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, বিদেশিরা সামান্য সুদে বিদেশ থেকে অর্থ এনে কারখানা করে। আর দেশে সুদহার চড়া। তাদের প্রযুক্তিও উন্নত। ক্রেতার সঙ্গে আগে থেকে যোগাযোগ রয়েছে। এখন যদি নগদ সহায়তাও সমান হয়, তাহলে একই ক্রেতার কাছে দেশীয় কোম্পানিগুলোর পক্ষে প্রতিযোগিতায় টেকা কঠিন হবে। এ কারণে তাঁরা নগদ সহায়তায় দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্তত ৫ শতাংশের ব্যবধান চান।

জাপানিরা কি আসলেই এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী, জানতে চাইলে জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেবিসিসিআই) মহাসচিব তারেক রাফি ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছু জাপানি কোম্পানির কথা জানি, যারা বাংলাদেশের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী।’