২১ দিনে এসেছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা

  • মাসের শেষে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা।

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪,৩০০ কোটি ডলার ছুঁই ছুঁই।

চলতি বছরের প্রথম ২১ দিনে দেশে ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা বাংলাদেশের প্রায় ১২ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)। মাসের শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ অবশ্য আগের মাসের মতো ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শেষ না হলেও এখন উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান আছে, কারখানায়ও উৎপাদন চলছে। তাই অভিবাসী বা প্রবাসী শ্রমিকেরা রোজগারে আছেন। এ ছাড়া যাতায়াত সীমিত থাকায় প্রবাসীরা এখন অবৈধ পথে অর্থ পাঠাচ্ছেন না। এর ওপর প্রবাসী আয়ের বিপরীতে সরকার ব্যাংকের মাধ্যমে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি পরিমাণে প্রবাসী আয় আসছে। তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

জানা গেছে, চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম ২১ দিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ৪১ কোটি ডলার এসেছে। এরপর ডাচ্–বাংলা ব্যাংক ১৭ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ১৫ কোটি ও সোনালী ব্যাংক ৯ কোটি ডলার এনেছে।

করোনাকালে দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে ভালো সূচক হয়ে ওঠা রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এখনো গতিশীল ধারায় আছে।

এদিকে বিদায়ী ২০২০ সালে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই বছরে তাঁরা পাঠান ২ হাজার ১৭৪ কোটি ডলার, যা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ১৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে এসেছিল ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলার।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে অর্থনীতির নানা সূচক খারাপ থাকলেও প্রবাসী আয়ে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশ। তবে এই সময়েই কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় আড়াই লাখ প্রবাসী শ্রমিক। আবার যাঁরা বিদেশে কর্মরত আছেন, তাঁদের অনেকের বেতন কমে গেছে। এরপরও রেমিট্যান্স আসা বেড়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে বড় ধাক্কা লাগে। যেমন, গত বছরের মার্চ ও এপ্রিলে প্রবাসী আয় কমে যায়। এরপরই অবশ্য বড় ধরনের উল্লম্ফন শুরু হয়। এখনো সেই প্রবণতা অব্যাহত আছে। এতেই প্রবাসী আয়ে নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। সেই সুবাদে অর্থনীতির সবচেয়ে ভালো সূচক হিসেবেই ২০২০ সাল পার করে প্রবাসী আয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ১৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে, সেখানে মার্চে তা কমে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারে নামে। তা ২০১৯ সালের একই মাসে ছিল ১৪৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। করোনাভাইরাস প্রকট আকার ধারণ করায় এপ্রিলে প্রবাসী আয় আরও কমে হয় ১০৮ কোটি ডলার। তবে এরপরই প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিরও নতুন নতুন রেকর্ড হতে শুরু করে।

মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৫০ কোটি ডলার, যা জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ডলার। আর ঈদের আগের মাস জুলাইয়ে এক লাফে প্রবাসী আয় ২৬০ কোটি ডলারে ওঠে। কোনো একক মাস হিসেবে এই আয় এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এরপরে আগস্টে ১৯৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ডলার, অক্টোবরে ২১০ কোটি ডলার, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ডলার ও ডিসেম্বরে ২০৫ কোটি ডলার আসে।

গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ছুঁই ছুঁই করছিল। করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে রিজার্ভ ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার থেকে এই পর্যায়ে এসেছে।

প্রবাসী আয় বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করে সরকার। অনেক ব্যাংক ৩ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিচ্ছে। এতেই প্রবাসী আয় গতি পায়। আর প্রবাসী আয়ের বড় একটা অংশ বিতরণ হয় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে।

জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী প্রথম আলোকে বলেন, এখন সব অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে। প্রবাসী আয় বিতরণ সহজ হয়েছে। এর ফলে আয় বাড়ছে। এটা ধরে রাখতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।