২৫ লাখ টাকা দিয়েই করা যাবে এক ব্যক্তির কোম্পানি

উন্নত দেশগুলোতে থাকলেও দেশে এত দিন এক ব্যক্তির কোম্পানি করার সুযোগ ছিল না। কোম্পানি আইন সংশোধন করে সুযোগটি দিয়েছে সরকার।

  • এক ব্যক্তির কোম্পানি বা ওপিসির পরিশোধিত মূলধন হবে ২৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা।

  • কোম্পানির ধরন অনুযায়ী নামের শেষে লিমিটেড, পিএলসি ও ওপিসি উল্লেখ করতে হবে।

৫০ লাখ টাকাও আর লাগবে না, ২৫ লাখ টাকা দিয়েই গঠন করা যাবে এক ব্যক্তির কোম্পানি বা ওয়ান পারসন কোম্পানি (ওপিসি)। দেশে প্রথমবারের মতো এ সুযোগ তৈরি করেছে সরকার। কোম্পানি আইন সংশোধন করে সুযোগটি দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন সংশোধন করে গত ২৬ নভেম্বর ‘কোম্পানি (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০২০’–এর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।

উন্নত দেশগুলোতে থাকলেও ওপিসির ধারণা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত আইন সংশোধনের বিলসংক্রান্ত বিবৃতিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অধিকতর সহজীকরণের জন্য ওপিসি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর সংসদে পাঠানো বিলে বলা হয়েছিল, ওপিসির পরিশোধিত মূলধন হবে ৫০ লাখ থেকে দুই কোটি টাকার মধ্যে। আর তা গঠনের আগের অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার বা মোট লেনদেন হতে হবে দুই কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা। এর চেয়ে বেশি হলে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ সাপেক্ষে যেকোনো ওপিসি প্রাইভেট বা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা যাবে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এক ব্যক্তির কোম্পানি গঠনকে সহজ করতে শর্তগুলো আরও শিথিল করে। পরিশোধিত মূলধন ৫০ লাখের বদলে ২৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। আর সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধনের সুপারিশ করে দুই কোটির পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা। এদিকে কোম্পানি গঠনে আগের অর্থবছরের বার্ষিক টার্নওভার ২ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকার প্রস্তাব থাকলেও তা শিথিল করে ১ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। শেষ পর্যন্ত এভাবেই আইনটি পাস হয় জাতীয় সংসদে।

ওপিসিকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মনে করেন, এতে দেশে উদ্যোক্তা বাড়বে, ব্যাংকের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক জোরদার হবে। দরকার না থাকলেও যে কখনো কখনো ব্যবসায়ে অংশীদার নিতে হয়, ওপিসি হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের সেই পথে আর যেতে হবে না।

জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোম্পানি করতে গিয়ে অনেকে তাঁদের স্ত্রীদের পরিচালক বানান। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে স্ত্রীদের কোনো ভূমিকাই নেই কোম্পানিতে। অথচ কোম্পানি যখন বিপদে পড়ে, স্ত্রীদেরও দায় নিতে হয়। বেশি বেশি ওপিসি হলে এ সমস্যা দূর হবে।’

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, একজন প্রাকৃতিক সত্তাবিশিষ্ট ব্যক্তি কেবল একটি ওপিসি গঠন করতে পারবেন। ওপিসির স্মারকে একজন মনোনীত ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকতে হবে, যিনি একমাত্র শেয়ারহোল্ডার মারা গেলে বা কোম্পানি পরিচালনায় অসমর্থ হলে ওই ওপিসির শেয়ারহোল্ডার হবেন। বলা হয়, কোম্পানি ব্যবস্থাপনার জন্য এতে ব্যবস্থাপক, কোম্পানিসচিব ও অন্য কর্মচারী নিয়োগ করা যাবে। যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয়ের (আরজেএসসি) নিবন্ধককে জানিয়ে মনোনীত ব্যক্তি পরিবর্তন করার সুযোগ রাখা হয়েছে আইনে।

আরজেএসসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩২টি প্রাইভেট, ৩ হাজার ৫৩২টি পাবলিক এবং ৯৩২টি বিদেশি কোম্পানির শাখা রয়েছে। আরজেএসসি নিবন্ধক মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওপিসির সাড়া পেতে আমরা এখন প্রচারণায় যাব।’

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোম্পানির ধরন অনুযায়ী এক ব্যক্তির কোম্পানির নামের শেষে OPC বা ওপিসি, PLC বা পিএলসি এবং Limited বা লিমিটেড লিখতে হবে। পিএলসি হচ্ছে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সংক্ষিপ্ত রূপ, যা লিখতে হবে যেকোনো পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে। আর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নামের শেষে লিখতে হবে লিমিটেড, ইংরেজিতে লেখার ক্ষেত্রে যার সংক্ষিপ্ত রূপ LTD।

আইন সংশোধনের ফলে এত দিন কোম্পানির নামের শেষে যেসব শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছিল, সেই সুযোগ আর থাকছে না। যেমন সরকারি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং বেসরকারি—সব কোম্পানির নামের শেষেই এত দিন ব্যবহৃত হয়ে আসছিল ‘লিমিটেড’। ঢালাওভাবে এ শব্দআর ব্যবহার করা যাবে না। তবে কোম্পানি আইনের ২৮ ধারা অনুযায়ী মুনাফা অর্জন ছাড়া ভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠিত সমিতি এবং ২৯ ধারা অনুযায়ী গ্যারান্টি দ্বারা সীমিত দায় কোম্পানির ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না।

বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ বেসরকারি খাতের সম্প্রসারণে যুগের চাহিদা হচ্ছে ওপিসি। আইন যেহেতু হয়ে গেছে, সেহেতু আশা করছি, বেসরকারি খাত এখন সাড়া দেবে এবং বেশি বেশি ওপিসি গঠন করবে।’