৩৭% টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিলেন

চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির মাত্র ৩৭ শতাংশ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। অথচ করযোগ্য আয় নেই, এমন জমি ক্রেতা ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী ছাড়া বাকি সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক। সেই হিসাবে মোটাদাগে প্রায় ৪০ লাখ টিআইএনধারী রিটার্ন দেননি।

গত রোববার এ বছরের রিটার্ন জমার সময়সীমা শেষ হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাথমিক হিসাবে, ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৬২৫ জন করদাতা তাঁদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। রিটার্ন দেওয়া এমন করদাতার সংখ্যা মোট টিআইএনধারীর মাত্র ৩৭ শতাংশ। গত জুন মাস পর্যন্ত মোট টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৬২ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬০। অবশ্য এখন তা ৬৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গতবারের চেয়ে এবার প্রায় ৭ শতাংশ বেশি টিআইএনধারী রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গতবার ২১ লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন রিটার্ন দিয়েছিলেন। এ বছর রিটার্ন জমাদানকারী করদাতারা ৩ হাজার ২৮১ কোটি টাকা কর দিয়েছেন। গত বছর করের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।

এদিকে, নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন জাম দিতে না পারা করদাতারা সময়ের আবেদন করেছেন। এ বছর সময় বৃদ্ধির আবেদন গতবারের চেয়ে বেড়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮২ জন করদাতা সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই কাগজপত্র জোগাড় হয়নি বলেই জানিয়েছেন। এসব করদাতা আপাতত দুই মাস সময় পেয়েছেন। এ দুই মাসের মধ্যে তাঁদের রিটার্ন জমা দিতে হবে। গতবার আড়াই লাখের বেশি করদাতা রিটার্ন জমার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এ বছর যাঁরা রিটার্ন জমা দিতে সময় চেয়েছেন, তাঁরা সবাই যদি শেষ পর্যন্ত রিটার্ন জমা দেন, তাহলে রিটার্ন জমাদানকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৯০৭ জনে, যা হবে এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।

কেন সব টিআইএনধারীকে রিটার্ন জমায় উদ্বুদ্ধ করা যাচ্ছে না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে প্রান্তিক করদাতার সংখ্যাই বেশি। তাঁদের পক্ষে করের জটিল হিসাব–নিকাশ করা কঠিন। আবার অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থাও জনপ্রিয় করা যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, করের হিসাব-নিকাশ সহজ করলে প্রান্তিক করদাতারা কর দিতে উৎসাহিত হবেন। এতে করদাতার সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
আমিনুর রহমান উদাহরণ দিয়ে বলেন, ভারতে কোনো ছোট ব্যবসায়ীর বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ রুপির মধ্যে থাকলে তাঁকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিলেই হয়। এ জন্য ভারতীয় কর কর্তৃপক্ষ কোনো নিরীক্ষা বা তদন্ত করে না। বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করা হলে ভালো সুফল পাওয়া যেতে পারে।

অনলাইনে ব্যাপক আগ্রহ

২০১৬ সালে অনলাইনে রিটার্ন জমার ব্যবস্থা চালু করা হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। বছরে পাঁচ-ছয় হাজার রিটার্ন জমা পড়ত। গত ১০ অক্টোবর এনবিআর ই-রিটার্ন ব্যবস্থা চালু করেছে। নতুন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাটি ব্যাপক সাড়া ফেলে। এনবিআরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এবার ঘরে বসেই ৬১ হাজার ২০৬ জন করদাতা ই-রিটার্ন দিয়েছেন। আবার ৭৯ হাজার ৭৪৫ জন করদাতা রিটার্ন জমা না দিলেও রিটার্ন প্রস্তুত করেছেন। আর ই-রিটার্নের জন্য নিবন্ধন নিয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৫২১ জন করদাতা।
গত এক যুগে রিটার্ন জমাকারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রায় ১১ লাখ করদাতা বছর শেষে আয়-ব্যয়ের তথ্য বা রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন। এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।