'ফারমার্স ব্যাংকের মরে যাওয়া উচিত'

তৌফিক আহমদ চৌধুরী
তৌফিক আহমদ চৌধুরী

নানা অনিয়মে জর্জরিত বেসরকারি ফারমার্স ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) মহাপরিচালক তৌফিক আহমদ চৌধুরী। তাঁর মতে, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম কমিয়ে আনতে একটি ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়া হলে তা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।

আজ শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইনস্টিটিউটের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের এক কর্ম–অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘অর্থনীতি ও নৈতিকতা : অর্থ ও অর্থায়ন’ শীর্ষক কর্ম–অধিবেশনে ১০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে একবার কেউ ব্যাংকের লাইসেন্স পেলে তা বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংকে যা হয়েছে, তাতে এই ব্যাংকের অবশ্যই মরে যাওয়া উচিত।

অবশ্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেটে গত বৃহস্পতিবার বলেন, ফারমার্স ব্যাংককে মরে যেতে দেওয়া হবে না। সরকার এটিকে টিকিয়ে রাখবে।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সুশাসন নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, যত কিছুই করা হোক না কেন, শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়া আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা কয়েক মাস ধরেই খারাপ যাচ্ছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও এসেছে পরিবর্তন। ব্যাংকটি অন্য ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। এ কারণে উচ্চ সুদে আমানতও নিতে হচ্ছে। নিয়ম মেনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে না পারায় গত এক বছরে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জরিমানা দিয়েছে এই ব্যাংক। এমনকি আমানতকারীদের দায় পরিশোধেরও ক্ষমতা নেই ব্যাংকটি।

ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তিনি সম্প্রতি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কার্যক্রম শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই ঋণ বিতরণে অনিয়ম করে ব্যাংকটি। এর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাও শিথিল হয়ে পড়ে। অস্তিত্ববিহীন ও সাইনবোর্ডসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ম ভেঙে নিজ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের ঋণ দেয় এ ব্যাংক। এমনকি ব্যাংকটি খেলাপি গ্রাহকদের ঋণ দেয় এবং অন্য ব্যাংকের খেলাপি ঋণও কিনে নেয়। লোকবল নিয়োগেও অনিয়ম করেছে ব্যাংকটি। ফলে নানা সংকটে পড়ে ব্যাংকটি।