বিসিএসের প্রস্তুতি: সাধারণ জ্ঞান, নৈতিকতা, মূল্যবোধ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
>

৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ৩ মে নির্ধারণ করেছে পিএসসি। এই সময় নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। কেননা, এই বিসিএসে চার লাখের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন, যা পিএসসির ইতিহাসে রেকর্ড। কেমন হবে এই বিসিএসের প্রস্তুতি, তা জানাচ্ছেন ৩৭তম বিসিএসে প্রশাসনে প্রথম স্থান অধিকারী তকী ফয়সাল। এবারের বিষয় সাধারণ জ্ঞান ও নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সুশাসন।

সাধারণ জ্ঞান

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞান অংশে সর্বমোট ৭০ নম্বর নির্ধারিত থাকে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ৩০; আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২০; ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব),পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১০; নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনে ১০ নম্বর বরাদ্দ আছে। সাধারণ জ্ঞানের পরিধি যেহেতু ব্যাপক, তাই এ অংশের প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও কৌশলী হওয়া আবশ্যক। প্রথমত, বাংলাদেশ ও বিশ্বের দুটি মানচিত্র সংগ্রহে রাখতে হবে এবং বিগত বছরের প্রশ্নাবলির ভিত্তিতে মানচিত্রের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভালো দখল আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ও সাম্প্রতিক বিষয়ে আপ-টু-ডেট থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নোট-খাতায় প্রতিদিনের পত্রিকা থেকে সিলেবাসের আওতাধীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি নোট করে রাখা যেতে পারে। আবার সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর চাকরিভিত্তিক যে মাসিক পত্রিকাগুলো আছে, তার যেকোনো একটি প্রতি মাসে পড়া যেতে পারে। তৃতীয়ত, সিলেবাস অনুযায়ী বিগত সালের প্রশ্নাবলির আলোকে প্রস্তুতি সাজাতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিগত বিসিএসের প্রশ্নাবলি, পিএসসির নন-ক্যাডারের প্রশ্নাবলি, বিভিন্ন ব্যাংক ও সরকারি চাকরির প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি

বাংলাদেশ বিষয়াবলির সিলেবাস নয়টি ভাগে ভাগ করা আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়াবলির ওপর ৬ নম্বর, কৃষিজ সম্পদের ওপর ৩ নম্বর, জনসংখ্যাসংক্রান্ত বিষয়াবলির ওপর ৩ নম্বর, অর্থনীতির ওপর ৩ নম্বর, শিল্প ও বাণিজ্যের ওপর ৩ নম্বর, সংবিধানের ওপর ৩ নম্বর, সরকারব্যবস্থার ওপর ৩ নম্বর, রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর ৩ নম্বর এবং জাতীয় অর্জনসহ বিবিধ বিষয়াবলির ওপর ৩ নম্বরের মানবণ্টন এবং টপিক্সের অন্তর্গত সাবটপিক্সগুলো সিলেবাসে বিশদভাবে উল্লেখ করা আছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য সাধারণ জ্ঞানের একটা বই বা প্রিলির যেকোনো গাইড পড়া যেতে পারে। এ ছাড়া সংবিধানের সূচিপত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ নম্বরগুলো দাগিয়ে পড়তে হবে। সঙ্গে সঙ্গে সংশোধনীগুলোও ভালো করে জানতে হবে। শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, অর্থনীতি—এগুলো বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে দাগিয়ে পড়া যেতে পারে। অন্যান্য বিষয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের টেক্সট বইগুলো থেকে পড়া যেতে পারে। বিভিন্ন তথ্য সব সময়ই আপডেট করে মুখস্থ রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় তথ্য বাতায়ন ও বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইটের হালনাগাদকৃত তথ্যাদি সংগ্রহে রাখা ভালো।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির সিলেবাসেও ৫টি ভাগের প্রতিটিতে ৪ করে মোট ২০ নম্বরের মানবণ্টন দেওয়া আছে। ভাগগুলো হচ্ছে বৈশ্বিক ইতিহাস, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা, ভূরাজনীতি; আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও আন্তরাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সম্পর্ক; বিশ্বের সাম্প্রতিক ও চলমান ঘটনাপ্রবাহ; আন্তর্জাতিক পরিবেশগত ইস্যু ও কূটনীতি; আন্তর্জাতিক সংগঠন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানাদি। এগুলোও বাংলাদেশ বিষয়াবলির মতো টপিক্স ধরে ধরে সাধারণ জ্ঞানের কোনো বই বা প্রিলির যেকোনো গাইড থেকে পড়া যেতে পারে। বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের নাম, সদর দপ্তর প্রভৃতি তথ্য আলাদাভাবে লিখে বারবার পড়া যেতে পারে।

ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বোর্ড বই বা যেকোনো গাইড বই থেকে পড়া যেতে পারে। সঙ্গে অবশ্যই বিগত বছরের প্রশ্নাবলি। মানচিত্রের ওপর প্রাসঙ্গিক প্রস্তুতির ব্যাপারে আগেই উল্লেখ করেছি।

 নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন

 নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশের ক্ষেত্রে বিগত সালের প্রশ্নাবলির সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিকের পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ের অনুশীলনী থেকে এমসিকিউগুলো পড়া যেতে পারে। তবে এগুলো পড়লেও পরীক্ষার হলে অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করে। তাই বেশি কনফিউশন হলে এগুলো ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

পরিশেষে বলতে চাই, সাধারণ জ্ঞান অংশটি টপিক্স ধরে ধরে গুছিয়ে আয়ত্ত করতে হবে, যেন বারবার পড়া ও পরীক্ষার আগে রিভিশন দেওয়া সহজ হয়। ঢালাওভাবে ইচ্ছামতো পড়তে গেলে হয়তো সাময়িকভাবে ভালো লাগবে, কিন্তু পরীক্ষার আগে অকূলপাথারে সাঁতরানো লাগতে পারে। তাই প্রতিটি বিষয়ে কৌশলী হোন, সুশৃঙ্খলভাবে পরিকল্পনা করুন, সে অনুযায়ী আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যান। সাফল্য আসবেই। সবার জন্য শুভকামনা।