নতুন চাকরিপ্রার্থীরা যা করবেন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

পড়াশোনা শেষ করার পর স্বাভাবিক নিয়মেই এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করে। অনেক বছরের অভ্যাসে চলে আসা জীবনের এক অধ্যায় থেকে আরেকটি নতুন অধ্যায়ে পদার্পণ করতে হয়। ছাত্রজীবনে ঢিলেঢালা স্তর থেকে কর্মজীবনে প্রবেশের সময়টা মোটেও সহজ কিছু নয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় প্রস্তুতি। যদিও বর্তমান যুগের তরুণেরা অনেক বেশি সচেতন। তারপরও কিছু জরুরি বিষয় তারা অনেক সময়েই ধরতে পারে না বা অবহেলা করে—যা সফল হওয়ার পথের প্রথম বাধা। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যা করবেন:

নিজেকে জানা

আমরা বেশির ভাগই নিজেকে চিনি না। এই চেনা মানে নিজের নাম, বংশপরিচয় জানা নয়। ক্যারিয়ার শুরুর প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে—আপনি কী চান। কোন কাজটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয় আবার কোন কাজটি করে আপনি আপনার ব্যক্তিগত এবং সামাজিক অবস্থানকে স্বীকৃত উপায়ে পরিচিত করাতে পারেন। তাই আপনি কী চান, কেন চান এবং সেই চাওয়াকে পাওয়ায় পরিণত করতে হলে কী করতে হবে—এ বিষয়গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত থাকা জরুরি। জানতে হবে নিজের শক্তি ও দুর্বলতার দিকগুলো এবং দুর্বলতাকে অতিক্রম করার উপায়।

চাকরির বাজার সম্পর্কে ধারণা

আমাদের দেশে সাধারণত শিক্ষাব্যবস্থা বা পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জব মার্কেট বা চাকরির বাজার তৈরি করা হয় না। অন্যদিকে চাকরির বাজার অনুযায়ী শিক্ষাক্রমকে সাজানো হয় না। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে চাকরির বাজার সম্পর্কেও। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কী কী চ্যালেঞ্জ আসছে, কোন কোন দক্ষতা ও যোগ্যতাকে বর্তমান ও আগামী দিনের জন্য অত্যাবশ্যক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে কোন কোন কাজের চাহিদা বাড়ছে ও কমছে সে সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান না থাকলে ছিটকে পড়তে হবে প্রথমেই। আর তাই নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে নির্দিষ্ট করার পাশাপাশি সেগুলোকে বাজারের উপযোগী করার দিকেও নজর দিতে হবে।

নিজেকে নমনীয় ও যেকোনো পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী রাখা

এই বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। এ পরিবর্তন হচ্ছে সময়ের প্রয়োজনে। তাই নিজেকে কখনোই সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে রাখা চলবে না। নতুন কিছু শেখা ও জানার চোখ এবং মন দুটোই খোলা রাখতে হবে। ‘আমার জানাই শেষ জানা বা শ্রেষ্ঠ’ এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সব সময় মাথায় রাখতে হবে আপনি যা জানেন সেটাই পরিপূর্ণ নয়। তাই অন্যের কাছে, পরিবেশের কাছে শেখার মতো মন থাকতে হবে। চাকরিদাতারা এখন একজন অতি দক্ষ কর্মীর চেয়েও নমনীয় ও পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারার মতো কর্মীদের বেশি প্রাধান্য দেন। তাই নিজেকে সব সময় শিক্ষানবিশ পর্যায়ে রাখাটাও এক ধরনের যোগ্যতা।

অভিজ্ঞতাকে মর্যাদা দেওয়া

সাধারণত মনে করা হয়, ছাত্রজীবন মানে কেবল বই পড়া ও পাস করা। এখন এ ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। পাঠ্যপুস্তকেই জ্ঞান সীমাবদ্ধ রাখলে পিছিয়ে পড়তে হবে। তাই পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক বা সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা দরকার এবং নিজের জীবনবৃত্তান্তে সেগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে ও যৌক্তিক আকারে উপস্থাপন করতে হবে। কে কতগুলো সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল বা আছে এবং কী কী কাজ করেছে—ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে সাধারণত অভিজ্ঞতা বলতে এগুলোকেই বোঝানো হয়ে থাকে। স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমের মাঝে গড়ে ওঠে নেতৃত্বের যোগ্যতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, দল পরিচালনা করার মতো দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা। একটি দল বা সংগঠন পরিচালনা মানেই হচ্ছে ন্যূনতম পেশাদারির সঙ্গে পরিচিতি, যেটি পেশাজীবীদের জন্য অত্যাবশ্যক।

জীবনবৃত্তান্তকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে হবে

সুন্দর বলতে ফুল–লতাপাতার ডিজাইন নয় বরং প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোকে ক্রমানুসারে নান্দনিক উপায়ে লেখাকে বোঝানো হয়। যেমন, সিভি শুরু করতে হবে আপনার যদি কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতা থাকে সেগুলো দিয়ে এবং সেখান থেকে কী কী কাজ শিখেছেন ও কত দিনের জন্য সে কাজটি পরিচালিত হয়েছে, আপনার নিজের ভূমিকা কী ছিল ইত্যাদি তথ্য। সঙ্গে থাকতে হবে কম্পিউটার ও ইনফরমেশন টেকনোলজি সম্পর্কে দক্ষতার পরিচয় এবং একদম শেষে দিতে হবে ব্যক্তিগত পরিচিতিমূলক তথ্য।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার

লিংকডিনের মতো পেশাদার সাইটগুলোতে উপস্থিতি বাড়াতে হবে যেখানে চাকরিদাতাদের ব্যাপক উপস্থিতি আছে। এখানে প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের পেশা–সম্পর্কিত প্রবন্ধ–নিবন্ধগুলো পড়লেও বৈশ্বিক বাজার সম্পর্কে জানা যায় এবং নেটওয়ার্কিং বাড়ে। আজকাল পেশাদারদের জন্য নেটওয়ার্কিং একটি জরুরি বিষয়।

উপস্থাপন কৌশল

উপস্থাপন কৌশল বা প্রেজেন্টেশন স্কিলস একটি মৌলিক গুণ। অপরিচিত লোকের সামনে নিজেকে তুলে ধরার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি বাজারে অনেক বেশি চাহিদার। এক কথায় নিজেকে অপরিচিত মানুষের সামনে যথাযথভাবে তুলে ধরার কৌশল শিখতে হবে।

তবে সবচেয়ে বড় দক্ষতা হচ্ছে সাধারণ জ্ঞান বা কমনসেন্স। যা কিছুই করবেন সেটাকে আগে নিজের বিবেক ও বুদ্ধি দিয়ে বুঝতে হবে, আয়ত্ত করতে হবে। কপি পেস্ট বা অন্যকে অনুকরণ করে নিজের জীবনকে সাজানো যায় না। কারণ প্রতিটা মানুষই অনন্য এবং নিজস্ব ক্ষেত্র নিয়ে বেড়ে ওঠে। তাই নিজেকে জানা, বোঝা এবং সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই। 

লেখক: মানবসম্পদ কর্মকর্তা