আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির কার্যকরী প্রস্তুতির জন্য করণীয়

দরজায় কড়া নাড়ছে ৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা। আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা ২৪ জুলাই শুরু হবে এবং কারিগরি বা পেশাগত ক্যাডারের বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা শুরু হবে ৫ সেপ্টেম্বর। পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার জন্য বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে চাকরি-বাকরি পাতায়। গত সংখ্যায় বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হয়েছিল। এবার থাকছে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি অংশে কার্যকরী প্রস্তুতির জন্য পরামর্শ। এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ৪০তম বিসিএসে (প্রশাসন ক্যাডার) সুপারিশপ্রাপ্ত আবদুল্লাহ-আল-মামুন

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ১০০ নম্বরের পরীক্ষাটি সাধারণত তিনটি অংশে ভাগ করা হয়ে থাকে
ছবি: সৌরভ দাশ

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির ১০০ নম্বরের পরীক্ষাটি সাধারণত তিনটি অংশে ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রথমত কনসেপচুয়াল বা ধারণামূলক বিষয়, দ্বিতীয়ত ইমপিরিক্যাল বা গবেষণামূলক বিষয় এবং সর্বশেষ প্রবলেম সলভিং বা সমস্যা সমাধান।

ধারণামূলক বিষয়

এই অংশে ভালো করতে প্রথমেই আগের দুই বছরের আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়তে হবে। যেমন: করোনার টিকার কূটনৈতিক বিষয়, জলবায়ু সম্মেলন, মুদ্রামান ও টিকাবিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি। এসব বিষয় পড়ার সময় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ভূরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত দিকগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পত্রিকা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ অংশে সাধারণত ১০টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয় এবং প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর থাকে চার। তাই এ ধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তর করার সময় সূচনা ও উপসংহারের মতো বাহুল্য জিনিস ব্যবহার করে সময় নষ্ট না করে বরং টার্মটির সংজ্ঞা, সমস্যা, সমাধান, ইউএন প্রেডিকশন, মতামত দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে লিখলে ভালো নম্বর পাওয়া যেতে পারে। সময় স্বল্পতা ও নম্বর বণ্টন বিবেচনায় এ অংশের প্রশ্নগুলোর জন্য মোটামুটি এক পাতাই যথেষ্ট। তাই কলেবর না বাড়িয়ে সরাসরি মূল কথায় লিখুন এবং উদ্ধৃত্ত সময় অন্য দুই অংশে ব্যবহার করুন।

গবেষণামূলক বিষয়

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসে যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, সম্মেলন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ইউএন কনভেনশন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে রেফারেন্স দিয়ে লিখতে সুবিধা হয়। এ অংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে—পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পদক্ষেপ, দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার রাজনৈতিক ইস্যু, বৈশ্বিক প্রধান প্রধান ইস্যু ও দ্বন্দ্ব, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংস্থার কার্যক্রম লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা ইত্যাদি। এ অংশে প্রশ্নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ম্যাপ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমন কিছু ম্যাপ যেমন বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কিত কোনো প্রশ্নের উত্তরে ভারতীয় উপমহাদেশের ম্যাপ, রোহিঙ্গা সমস্যার প্রশ্নে মিয়ানমারের ম্যাপ, মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্নে মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক ম্যাপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত প্রশ্নে রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ ও পোল্যান্ডকে চিহ্নিত করে পূর্ব ইউরোপের আংশিক ম্যাপ আঁকা শিখতে হবে। এসব জানা থাকলে এ অংশে খুব সহজেই ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। এই অংশে সাধারণত চারটি প্রশ্ন থাকে, যার মধ্যে তিনটির উত্তর দিতে হয়। মূল কথাগুলো পয়েন্ট আকারে এবং ঘটনা ও ঘটনা প্রবাহগুলো ফ্লোচার্ট এঁকে লিখলে পরীক্ষকের সহজে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে।

সমস্যা সমাধান

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির এই অংশে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো বৈশ্বিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা ইস্যু, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্যিক ও কারিগরি ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তা শীর্ষক আন্তর্জাতিক বিষয়ের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপ বিশ্লেষণ পূর্বক নীতিপত্র বা কৌশলপত্র আকারে লিখতে বলা হয়। এর ক্ষেত্রে নীতিপত্র বা কৌশলপত্র লেখার সঠিক বিন্যাস অনুসরণ করা উচিত। উত্তর করতে হবে ভাববাচ্যে, বক্তব্য হবে বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ। প্রথমে সমস্যাটির পটভূমি তুলে ধরে এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে হবে। এরপর সমস্যাটির বর্তমান অবস্থা, সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ এবং সমাধানের জন্য আরও কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বাতায়ন বা তথ্য কণিকা দেখে ধারণা নিয়ে রাখলে পরীক্ষার হলে ভালো লিখতে পারবেন।