নতুন নিয়মে পুলিশে বড় নিয়োগ প্রার্থী বাছাই সাত ধাপে

চাইলে আপনিও হতে পারেন পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক শূন্য পদের বিপরীতে ৬৪ জেলায় তিন হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে। তাঁদের মধ্যে ২ হাজার ৫৫০ জন পুরুষ এবং ৪৫০ জন নারী। শূন্য পদ বেশি থাকায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা জেলায় সবচেয়ে বেশি কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে। উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী করে পুলিশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এ বছর কনস্টেবল পদের নিয়োগ পরীক্ষার আধুনিকায়ন করা হয়েছে। নতুন নিয়মে কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য সাতটি ধাপ অনুসরণ করে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা হবে। এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ এবং উন্নত দেশের নিয়োগপ্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে পুলিশের নতুন নিয়োগ নীতিমালা করা হয়েছে। নতুন নিয়মের ফলে মেধা ও শারীরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে যোগ্যতর লোক বাংলাদেশ পুলিশে সুযোগ পাবে।

যাঁরা আবেদন করতে পারবেন

বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক অবিবাহিত পুরুষ ও নারী, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর। যেসব প্রার্থীর বয়স ৭ অক্টোবর ২০২১ তারিখে এই বয়সসীমার মধ্যে থাকবে, তাঁরা আবেদনের যোগ্য। তবে ২৫ মার্চ ২০২০ তারিখে যাঁরা সর্বোচ্চ বয়সসীমায় পৌঁছেছেন, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের যোগ্যতা

প্রার্থীকে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ন্যূনতম জিপিএ ২.৫ থাকতে হবে। সাধারণ ও অন্যান্য কোটার ক্ষেত্রে পুরুষ প্রার্থীর উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হতে হবে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধা (মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সন্তান ব্যতীত) কোটার ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। নারী প্রার্থীর উচ্চতা সাধারণ ও অন্যান্য কোটার ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হতে হবে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। বুকের মাপ সাধারণ ও অন্যান্য কোটার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি এবং সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩৩ ইঞ্চি। মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি এবং সম্প্রসারিত অবস্থায় ৩১ ইঞ্চি।

আবেদনের শেষ সময়: ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে আবেদন শুরু হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে। আবেদনের শেষ সময় ৭ অক্টোবর।

যে সাত ধাপে প্রার্থী বাছাই

১. প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং

আগ্রহী প্রার্থীদের এই ওয়েবসাইটে (police.teletalk.com.bd) লগইন করে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। প্রার্থী মিথ্যা বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে আবেদন নিয়োগের যেকোনো পর্যায়ে বাতিল হবে। আবেদনপত্র যাচাই–বাছাই শেষে আবেদনকারীর মুঠোফোনে পরবর্তী ধাপে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে।


২. শারীরিক মাপ ও শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষা

এই ধাপে মোট তিন দিন প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা হবে। প্রথম দিনে ভেন্যুতে প্রবেশের পর প্রার্থীর উচ্চতা, ওজন ও বুকের মাপ এবং কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপর দুই দিনে প্রার্থীকে সাতটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে হবে। দ্বিতীয় দিনে হবে চারটি ইভেন্ট ২০০ মিটারের দৌড়, পুশ আপ, লং জাম্প ও হাই জাম্প। তৃতীয় দিনে হবে তিনটি ইভেন্ট ১৬০০ মিটারের দৌড়, ড্র্যাগিং ও রোপ ক্লাইমিং।

দ্বিতীয় দিনের প্রথম ইভেন্টে পুরুষ প্রার্থীকে ২৮ সেকেন্ডে ২০০ মিটার দৌড়াতে হবে এবং নারী প্রার্থীকে ৩৪ সেকেন্ডে ২০০ মিটার দৌড়াতে হবে। দ্বিতীয় ইভেন্টে পুরুষ প্রার্থীকে ৩৫ সেকেন্ডে ১৫ বার পুশ আপ দিতে হবে এবং নারী প্রার্থীকে ৩০ সেকেন্ডে ১০ বার। পুরুষ প্রার্থীকে ১০ ফুট উচ্চতায় লং জাম্প দিতে হবে এবং নারী প্রার্থীকে ৬ ফুট উচ্চতায়। পুরুষ প্রার্থীর জন্য সাড়ে তিন ফুট উচ্চতার হাই জাম্প এবং নারী প্রার্থীর জন্য আড়াই ফুট উচ্চতার হাই জাম্প।

শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষার তৃতীয় দিনে পুরুষ প্রার্থীকে ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে ১৬০০ মিটার দৌড়াতে হবে এবং নারী প্রার্থীকে ৬ মিনিটে এক হাজার মিটার দৌড়াতে হবে। ড্র্যাগিং ইভেন্টে পুরুষ প্রার্থীকে দেড় শ পাউন্ড ওজনের টায়ারকে টেনে ৩০ ফুট দূরত্বে নিতে হবে এবং নারী প্রার্থীকে ১১০ পাউন্ড ওজনের টায়ারকে টেনে ২০ ফুট দূরত্বে নিতে হবে। সপ্তম ইভেন্ট রোপ ক্লাইমিং। এই ইভেন্টে পুরুষ প্রার্থীকে দড়ি বেয়ে ১২ ফুট ওপরে উঠতে হবে এবং নারী প্রার্থীকে ৮ ফুট ওপরে উঠতে হবে। এই ইভেন্টে উত্তীর্ণ হলে প্রার্থী শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হবেন।

৩. লিখিত পরীক্ষা

শারীরিক মাপ ও শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞানের ওপর মোট ৪৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে।


৪. মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষা

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ১৫ নম্বরের মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।


৫. প্রাথমিক নির্বাচন

প্রতি জেলার শূন্য পদ ও কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।


৬. পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা

প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের সংশ্লিষ্ট জেলায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পাস করলে প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশন সন্তোষজনক হলে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হবে। তবে ভেরিফিকেশনে তথ্য গোপন বা মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থী অযোগ্য বিবেচিত হবেন।


৭. চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্তকরণ

প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত প্রার্থীরা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যোগদানের পর তাঁদের শারীরিক যোগ্যতাসহ অন্যান্য তথ্য আবার যাচাই করবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত পুনর্বাছাই কমিটি। এসব তথ্যা যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নির্ধারিত প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ছয় মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সাফল্যের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্রস্তুতি সহায়ক

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড পাবলিসিটি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগপ্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ রাখতে এবারে প্রথম অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কনস্টেবল পদে নিয়োগের নতুন নিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও ওয়েবসাইটে (www.police.gov.bd) একটি ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। ‘নতুন নিয়মে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষা’ শীর্ষক ভিডিওটি দেখে আগ্রহী প্রার্থীরা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেন। ভিডিওটিতে পরীক্ষার প্রতিটি ধাপ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।