নিজের ও প্রতিষ্ঠানের সফলতায় ‘টিমওয়ার্ক’

কার্যকর টিম তৈরি করতে হলে অবশ্যই একজন যোগ্য লিডার থাকতে হবে

যখন একাধিক ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের বা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করে, তখন তাদের একটি টিম বা দল বলা হয়। দলের প্রত্যেক সদস্যের নির্দিষ্ট কাজের দায়িত্ব থাকে এবং প্রত্যেক সদস্যের সম্মিলিত কাজের ওপর নির্ভর করবে পুরো টিমের সাফল্য বা ব্যর্থতা।

টিম গঠনের প্রয়োজনীয়তা

টিম নিয়ে কথা বলা শুরু করার আগে চলুন জেনে নিই কেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টিম গঠন করা প্রয়োজন পড়ে। যখন কোনো একজন ব্যক্তির পক্ষে সব কাজ সামলে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না বা একজনের দক্ষতা দিয়ে পুরো কাজটি সম্পাদন করা সম্ভব হয় না, তখন প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন দক্ষতার একাধিক লোক নিয়ে কাজ করার।

ভালো টিমের উদাহরণ হতে পারে একটি খেলার টিম। ধরুন, বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট টিম। টিমের খেলোয়াড়দের সামনে থাকে একটি লক্ষ্য। তা হলো জয়লাভ করা।

একটি ক্রিকেট টিমে বোলার আছেন, ব্যাটসম্যান আছেন, ফিল্ডার আছেন ও উইকেট কিপার আছেন। বোলাররা চেষ্টা করেন ভালো বোলিংয়ের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপকে বিপর্যস্ত করতে। ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা করেন ভালো ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে রানের খাতা ভারী করতে। ফিল্ডাররা চেষ্টা করেন রান কম দিতে ও প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের আউট করতে। উইকেট কিপারও উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

আর দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক দলের নেতৃত্ব দেন এবং ভালো খেলার জন্য সবাইকে উজ্জীবিত রাখেন।

এবার এমন একটি দল ভাবুন তো, যে দলে সবাই শুধু ভালো ব্যাটিং করতে পারে অথবা সবাই শুধু ভালো বোলিং করতে পারে। তাহলে কী সেই দলটিকে একটি ভালো দল বলা যায়? যে দলে কোনো ফিল্ডার নেই অথবা উইকেট কিপার নেই, তারা কী জয়ী হতে পারবে? তেমনি কোনো প্রতিষ্ঠান বা উদ্যোগেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন দক্ষতার কর্মীর সমাহার থাকা উচিত।

টিমওয়ার্কের ধাপগুলো

যদিও কাজের ধরন বা লক্ষ্যমাত্রার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন টিমের কাজের ধরন ভিন্ন রকম হতে পারে, তারপরও প্রতিটি টিমের কাজগুলোকে সাধারণত তিন ধাপে ভাগ করা যায়।

● পরিকল্পনা ধাপ

পরিকল্পনা ধাপটি সাধারণত টিম তৈরি করার সময়ই করা হয়। এই পর্যায়ে টিমের মিশন-ভিশন ও কৌশল নির্ধারণ করা হয়। যেমন কোনো প্রতিষ্ঠান শুরুতেই নির্ধারণ করে তার কী কী টিম দরকার। প্রয়োজন আনুসারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেলস টিম, মার্কেটিং টিম, রিসার্চ টিম, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট টিম, প্রশাসন টিম, মানবসম্পদ টিম ইত্যাদি গঠন করা হয়।

● কার্যসম্পাদন ধাপ

এই ধাপে পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যসম্পাদন করা হয়। লক্ষ্যে পৌঁছানর জন্য কাজের কতটুকু শেষ হলো, লোকবল, প্রযুক্তি ও তথ্যের কতটুকু ব্যবহার করা হচ্ছে, কাজের সমন্বয়, মতামত, ট্রেনিং, নিরীক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করা হয়।

● পরিচালনা ধাপ

পরিচালনার কাজটি পরিকল্পনা ও কার্যসম্পাদন ধাপ থেকেই করা হয়। কাজ করতে গিয়ে টিমের সদস্যদের মধ্যে মতের অমিলের জন্য যেন কাজের বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখা, সদস্যদের আত্মবিশ্বাস ও উদ্যম বজায় রাখা, সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার মানসিকতা বজায় রাখা ইত্যাদি কাজগুলো করা হয় পরিচালনা ধাপে।

ভালো টিম তৈরির উপায়

● একটি কার্যকর টিম তৈরি করতে হলে অবশ্যই একজন যোগ্য লিডার থাকতে হবে, যিনি পুরো টিমকে সঠিক পথে পরিচালিত করে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করবেন।

● চাকরি চলাকালে ব্যবহারিকভাবে বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে টিমের সদস্যরা নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে টিমের সাফল্য অর্জনে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন।

● টিমের সদস্যদের দক্ষতার মধ্যে বৈচিত্র্য থাকতে হবে। তাহলে একেকজন সদস্য একেকটি বিষয় ভালোভাবে সামাল দিতে পারবেন এবং টিমের পারফরম্যান্স ভালো হবে।

● প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও লক্ষ্য অর্জনের মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

● প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

● সদস্যদের দায়িত্ব নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।

● টিমের সবার মতামতকে মূল্যায়ন দিতে হবে, যেন সবাই তাঁদের ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা বলেন।

● ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে এবং সম্ভব হলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে টিমের সদস্যরা ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবেন।