বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ

পড়াশোনার পাশাপাশি যাঁরা খণ্ডকালীন চাকরি করতে চান, তাঁদের জন্য কাজের সুযোগ রয়েছে বাণিজ্য মেলায়

আগামী বছরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)। তবে এবার বাণিজ্য মেলা দীর্ঘদিনের পরিচিত স্থান রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নয়, হবে নতুন ঠিকানায়। ঢাকার অদূরে পূর্বাচল নতুন শহরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শন কেন্দ্রে হবে এবারের বাণিজ্য মেলা। প্রতিবছর মেলায় কয়েক শ প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়, যেখানে এক মাসের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ পান তরুণ-তরুণীরা। পড়াশোনার পাশাপাশি যাঁরা খণ্ডকালীন চাকরি করতে চান তাঁদের জন্য কাজের সুযোগ রয়েছে মেলায়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই খণ্ডকালীন কর্মী নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মী হিসেবে যোগ দিতে পারেন আপনিও।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মেলার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। এবার মেলায় মোট ২২৫টি স্টল থাকবে। অফিস চলাকালীন দিনগুলোতে মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং ছুটির দিনে মেলা চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এবার মেলা শহর থেকে একটু দূরে হওয়ায় দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে মেলা পর্যন্ত বিশেষ বাস সার্ভিস চালু থাকবে।

আবেদনের যোগ্যতা

কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাণিজ্য মেলায় বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা সাধারণত এইচএসসি পাস চাওয়া হয়। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারেন। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান বর্তমানে স্নাতক পাস প্রার্থী চায়।

মেলায় এক মাসের কাজের জন্য তেমন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। তবে অভিজ্ঞতা থাকলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। চাকরি পাওয়ার মূল যোগ্যতা বলতে সাক্ষাৎকারে প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে পরীক্ষা করা হয় তাঁর কাজের প্রতি আগ্রহ আছে কি না। যদি কোনো প্রার্থী দেখাতে পারেন তিনি কাজটা মন থেকে করতে চান, তাহলে তাঁকে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বাচনভঙ্গি, উপস্থিত বুদ্ধি, সহজেই মানুষের সঙ্গে মিশতে পারার দক্ষতা ও সহজ-সাবলীল উপস্থাপনা আছে কি না, তা খেয়াল করা হয়।

ওয়ালটন হাই-টেকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ূন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য মেলার জন্য কর্মী নেওয়ার পর আমরা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তাই প্রার্থীদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি নয়। কাজের প্রতি আগ্রহ থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া প্রার্থীদের চটপটে ও দীর্ঘক্ষণ কাজ করার মানসিকতা থাকতে হয়।

চাকরির খোঁজখবর

বাণিজ্যমেলায় নিয়োগের জন্য বিভিন্ন জব পোর্টাল ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমেও লোক নেওয়া হয়। বাণিজ্য মেলায় আগে কাজ করেছেন এমন পরিচিত বড় ভাই-আপুদের আগে থেকে বলে রাখলে তাঁরাও চাকরি পেতে সহায়তা করেন।

কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে জনবল চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। যেমন ইলেকট্রো মার্ট লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য মেলা-২০২২–এর জন্য সেলস এক্সিকিউটিভ চেয়ে বিডি জবসে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। ২৭ বছরের নিচের প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চেয়েছে তারা। আগ্রহী প্রার্থীরা এই ই-মেইলে ([email protected]) তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে পারবেন। আবেদন করা যাবে আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, এবার বাণিজ্য মেলায় নানা পণ্যের প্রদর্শনী হবে, বিক্রির সুযোগ কম। তাই বিক্রয়কর্মীও কম নেওয়া হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিক্রয়কর্মী নেই তাদের লোক লাগবে মেলায়। আর যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশ এবং ঢাকার বাইরে থেকে আসবে তাদের বেশি বিক্রয়কর্মী লাগবে মেলায়।

সুযোগ-সুবিধা

মেলায় যাঁরা এক মাসের জন্য কাজ করেন প্রতিষ্ঠানভেদে তাদের বেতন সাধারণত ২৫-৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাশতা ও মেলার জন্য প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়া হয়। এক মাসের কাজের অভিজ্ঞতা সনদও দেওয়া হয়। যা পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বা অন্য কোথাও চাকরির ক্ষেত্রে আবেদনপত্রে অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানো যায়। এ ছাড়া মেলা চলাকালে ভালো দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারলে অনেক প্রতিষ্ঠান কিছু বিক্রয় সহকারীকে স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে।

বাণিজ্য মেলায় দুইবার বিক্রয় সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন শাহিদা আক্তার অনি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন ইভেন্টে কাজ করার সুবাদে বাণিজ্য মেলায় যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। সেই সূত্রে বাণিজ্য মেলার কাজ পেয়েছিলাম। কর্মজীবনে প্রবেশ করার আগে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য মেলায় কাজের সুযোগ বড় প্রাপ্তি। বাণিজ্য মেলার মতো কোলাহলপূর্ণ জায়গায় ক্রেতাদের সামণে পণ্য উপস্থাপন বা বিক্রয় করা বিশাল চ্যালেঞ্জের কাজ। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারলে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ হয়ে যায়, যা পরবর্তী কর্মজীবনে কাজে লাগে।

শাহিদা আক্তার অনি আরও বলেন, শুধু টাকার জন্য নয়, হাতে-কলমে কাজ শেখার জন্য হলেও তরুণ-তরুণীদের বাণিজ্য মেলায় খণ্ডকালীন চাকরি করা উচিত।