বিসিএস প্রিলিমিনারি: শেষ সময়ের প্রশ্নোত্তর

২৯ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে যাওয়া অনেক প্রার্থীই পরীক্ষার প্রস্তুতি, অংশগ্রহণ ও পরীক্ষা হলের করণীয় নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংগৃহীত সেই সব প্রশ্নের উত্তর জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা

প্রশ্ন :

কোনো প্রশ্নের অপশনে সঠিক উত্তর না থাকলে বা সঠিক উত্তর দুটি থাকলে করণীয় কী?

তাসফিয়া রাজ্জাক

উত্তর: প্রতিযোগিতামূলক যেকোনো পরীক্ষার প্রশ্নে অনিচ্ছাকৃত এ ধরনের কোনো ভুল হয়ে থাকলে কর্তৃপক্ষ সেই এমসিকিউর জন্য সবাইকে কমন নম্বর প্রদান করে, আপনি সেটি উত্তর করুন বা না করুন, উভয় ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। আবার এমসিকিউকে যেহেতু Choose the best answer ও বলা হয়, সে ক্ষেত্রে সঠিক উত্তর না থাকলে কাছাকাছি উত্তরকে সঠিক মনে করা হতে পারে। সবকিছুই নির্ভর করবে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর।

প্রশ্ন :

পরীক্ষার হলে টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং উত্তর করার টেকনিক জানাবেন প্লিজ।

চন্দন মজুমদার

উত্তর: তাত্ত্বিকভাবে বিসিএস প্রিলিমিনারিতে আপনি প্রতিটি এমসিকিউর জন্য ৩৬ সেকেন্ড সময় পাবেন। কিন্তু পরীক্ষায় ভালো করতে হলে আপনাকে ইংরেজি ও গণিত ছাড়া ১৩৫টি এমসিকিউ ১ ঘণ্টায় এবং বাকি ৬৫টি এমসিকিউ (ইংরেজি ও গণিত) ১ ঘণ্টায় উত্তর দেওয়া উচিত। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রথম দেখায় পারবেন না, সেগুলো প্রশ্নে মার্ক করে পরের প্রশ্নে চলে যাবেন। একটি প্রশ্ন নিয়ে বসে থেকে সময় নষ্ট করা যাবে না। উত্তর না করা প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবার জন্য শেষের ১০ মিনিট হাতে রাখুন।

প্রশ্ন :

উত্তরদানের সময় সাবজেক্টগুলোর কোন সিকোয়েন্স উত্তম? কোন সাবজেক্ট দিয়ে শুরু করে সহজ ও চাপমুক্ত পরীক্ষা দেওয়া যায়?

সাদাকাত হোসেন

উত্তর: মানসিক চাপমুক্ত থাকার জন্য সাধারণ জ্ঞান বা বাংলা দিয়ে উত্তর শুরু করা সর্বোত্তম। সবশেষে ইংরেজি ও গণিত উত্তর দিলে ভালো। এ ক্ষেত্রে উত্তরদানের সিকোয়েন্স হতে পারে সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, বিজ্ঞান, ইংরেজি, গণিত।

প্রশ্ন :

প্রশ্নপত্রে অজানা এমসিকিউটা কি পেনসিলে মার্ক করে রাখা যাবে/প্রশ্নে ম্যাথ রাফ করা যাবে?

আবদুল আজিজ

উত্তর: প্রশ্নে দাগ দেওয়া বা রাফ না করার ব্যাপারে পিএসসির কোনো নিষেধাজ্ঞা চোখে পড়েনি। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ছাড়া রাফ করার অন্য কোনো কাগজও দেওয়া হয় না (প্রবেশপত্রে দাগ দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা আছে)। তাই বিগত বিভিন্ন বিসিএসে প্রার্থীদের প্রশ্নপত্রেই ম্যাথ রাফ করতে দেখা গেছে। সেই অর্থে, প্রশ্নের অজানা এমসিকিউ মার্ক করা যেতে পারে।

প্রশ্ন :

নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন পড়তে গিয়ে বারবার হোঁচট খাই। সঠিক উত্তর নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকি। কীভাবে উত্তর দেওয়া যায়?

আমানুল্লাহ আকাশ

উত্তর: এই বিষয়ে প্রার্থীরা নম্বর যোগের আশায় উত্তর দিয়ে নেগেটিভ মার্কিংয়ের শিকার হয় প্রায়শ। তাই এই বিষয়ে সচেতনভাবে উত্তর দিতে হবে। দু-একটা নিশ্চিত প্রশ্ন ছাড়া কনফিউজড প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আপনাকে তো প্রিলিমিনারিতে ২০০-তে ২০০ পেতে হচ্ছে না।

প্রশ্ন :

৯ম-১০ম শ্রেণির ব্যাকরণ বইটিতে ২০২১ সংস্করণে অনেক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। ৪৩তম বিসিএসের জন্য নতুন বইয়ের নিয়ম অনুসরণ করব, নাকি আগের নিয়মগুলো অনুসরণ করব?

রেজওয়ানা ইয়াসমিন

উত্তর: যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও ব্যাকরণবিদ ছাড়া এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সাধারণ অর্থে, সব জায়গায় আপডেটেড তথ্যকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রশ্ন :

বারবার ভালো প্রস্তুতি নিয়েও প্রিলিমিনারি ফেল করি কেন?

শরীফুল ইসলাম

উত্তর: পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েও দুর্ভাগ্যক্রমে প্রিলিমিনারি রেজাল্ট আশানুরূপ না-ই হতে পারে। কিন্তু একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি হলে বুঝতে হবে আপনার প্রস্তুতিতে পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে বা আপনার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি (রিভিশন) ঠিকঠাকমতো হচ্ছে না অথবা আপনি পরীক্ষার হলে সবকিছু গুলিয়ে ফেলছেন। আপনি হয়তো নেগেটিভ মার্কিংয়ের শিকার হচ্ছেন বা সময়ের অভাবে আপনার জানা সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসতে পারছেন না বা পরীক্ষার হলে আপনার নার্ভাসনেস বা অসুস্থতাজনিত কোনো সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা যেটিই হোক, সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন :

প্রশ্ন: প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং এড়ানোর উপায় কী?

নাদিয়া সাইফ নাসরিন

উত্তর: পরীক্ষার আগে বাসায় বসে নিয়মিত মডেল টেস্ট দিন। মডেল টেস্টের মাধ্যমে কনফিউজড প্রশ্নগুলো উত্তর করে নেগেটিভ মার্কিং কেমন হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করুন। নেগেটিভ মার্কিং বেশি হলে পরীক্ষার হলে কনফিউজড প্রশ্ন অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করবেন। প্রতি মডেল টেস্টে আগের মডেল টেস্টের চেয়ে কত কম নেগেটিভ মার্কিং হলো কাউন্ট করুন।

প্রশ্ন :

প্রশ্নের উত্তরের কনফিউশন কাটিয়ে উঠতে কী করা যেতে পারে?

বংশী দাস

উত্তর: কোনো টপিক সম্পর্কে ভাসা-ভাসা প্রস্তুতি পরীক্ষার হলে আপনাকে কনফিউজ করবে। তাই অগুরুত্বপূর্ণ টপিক একবার পড়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিক বারবার পড়ুন। এতে আপনার কনফিউশন কমে যাবে। উত্তরে কনফিউশন নেগেটিভ মার্কিং বাড়াতে পারে, তাই এ বিষয়ে সচেতন হোন।

প্রশ্ন :

অল্প সময়ে প্রস্তুতি নিয়ে কীভাবে ভালো করা যেতে পারে?

মিজান খন্দকার

উত্তর: বিসিএস প্রিলিমিনারিতে মোট প্রার্থীর ৪-৫% উত্তীর্ণ হন। তাই অল্প সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে প্রিলিমিনারি টেকা প্রায় অসম্ভব। আপনি বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির বিগত প্রশ্ন এবং বারবার পরীক্ষায় আসা টপিক থেকে নতুন প্রশ্নগুলো পড়ুন। বেসিক ভালো এবং ভাগ্য সহায় হলে অল্প প্রস্তুতিতেও ইতিবাচক ফল আসতে পারে।

প্রশ্ন :

বিসিএস প্রিলিমিনারিতে কি সাবজেক্ট ওয়াইজ আলাদা আলাদা পাস করতে হয়?

মোহাম্মদ তুহিন

উত্তর: প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণের বিষয়ে সাবজেক্ট ওয়াইজ পাসের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনার মোট নম্বর পিএসসির কাট মার্কের মধ্যে থাকলেই আপনি প্রিলিমিনারি উত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হবেন।

প্রশ্ন :

প্রিলিমিনারিতে কত নম্বর পেলে সেফ জোন বলা যেতে পারে?

স্বপন আহমেদ

উত্তর: বিসিএস প্রিলিমিনারিতে কোনো পাস নম্বর নেই, যেটি আছে, সেটি হলো কাট মার্ক। এই কাট মার্ক প্রশ্নের ধরন এবং কত প্রার্থী প্রিলিমিনারিতে টেকানো হবে, তার ওপর নির্ভর করে। বিগত বিসিএস প্রিলিমিনারিতে কাট নম্বর কত ছিল, সেটিও অফিশিয়ালি স্পষ্ট নয়। তবে বিগত বিসিএস প্রিলিমিনারির মান ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রিলিমিনারিতে ১২০+ নম্বরকে সেফ জোন বলা যেতে পারে।

প্রশ্ন :

কোভিড-১৯ টিকা সনদ ছাড়া হলে প্রবেশ করা যাবে, নাকি প্রবলেম হবে?

রাজিব হোসাইন

উত্তর: পিএসসি এ-সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিলে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আসন বিন্যাস ও নির্দেশনা নোটিশে অবশ্যই জানাবে। তাই সম্ভব হলে টিকা দিয়ে রাখা ভালো। কারণ, এখন এটি প্রযোজ্য না হলেও সামনের দিনগুলোতে এটি প্রযোজ্য হতেও পারে।