চামড়াশিল্পে দেশ-বিদেশে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে

দেশে বর্তমানে ১১০টি রপ্তানিমুখী কারখানায় চামড়াজাত পণ্য তৈরি হয়। শুধু কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে, এমন ট্যানারির সংখ্যা ২২০ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৩ হাজার ৫০০টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়াজাত পণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাজে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ ছাড়া বিদেশেও রয়েছে চাকরির সুযোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি চামড়াশিল্পের দক্ষ কর্মী তৈরির কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক সরকার

ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

প্রশ্ন :

ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা চামড়াশিল্পের কোন কোন খাতে চাকরি পেয়ে থাকেন?

উত্তর: দেশে চামড়াশিল্পের তিনটি সাব-সেক্টর রয়েছে। ট্যানারি, লেদার প্রোডাক্টস এবং ফুটওয়্যার সেক্টর। এই তিন খাতেই লেদারের শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ রয়েছে। লেদার প্রসেসিং ও ফিনিশিং সেকশনে লেদার টেকনোলজিস্ট, চামড়াজাত পণ্য ও জুতা তৈরির কারখানায় প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, প্ল্যানিং, মার্চেন্ডাইজিং, প্রোডাকশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন, কমার্শিয়ালাইজেশন, টেস্টিং, কস্টিং অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং, কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স ও কোয়ালিটি কন্ট্রোলে চাকরি পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে প্রজেক্ট ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ রয়েছে।

প্রশ্ন :

চামড়াশিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কী আপনাদের কাছে আগে থেকেই কর্মী চায়?

উত্তর: বিভিন্ন চামড়াশিল্পজাত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছর আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সিভি চেয়ে থাকে। যার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা চাকরির সুযোগ পান। তা ছাড়া আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে অনেক প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাসে এসে প্রতিবছর চাকরির মেলার আয়োজন করে। মেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা চাকরি পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা চামড়াশিল্প–সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুই মাসের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান। প্রশিক্ষণ করা অবস্থাতেই অনেকে চাকরি পেয়ে থাকেন।

প্রশ্ন :

শিক্ষার্থীদের চামড়াশিল্পে উদ্যোক্তা হওয়ার সম্ভাবনা কেমন?

উত্তর: এই প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা অনেক শিক্ষার্থী চামড়াশিল্পে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা করে সফল হয়েছেন। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেশ–বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বর্তমানে আমাদের রপ্তানি আয় ১ বিলিয়নের বেশি এবং বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার রয়েছে। ফলে চামড়াশিল্পের উদ্যোক্তা হয়ে বিশাল এই বাজারে অনেক কাজ পাওয়া সম্ভব। এই শিল্পে উদ্যোক্তা হয়ে নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির পাশাপাশি জাতীয় রপ্তানিতেও আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশেষ অবদান রাখছেন।

প্রশ্ন :

লেদার টেকনোলজিতে যেসব বিষয় পড়ানো হয়, সেগুলো শিক্ষার্থীদের চাকরি পেতে কীভাবে সহায়তা করে?

উত্তর: বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে সর্বাধুনিক ও যুগোপযোগী কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা চামড়া প্রক্রিয়াকরণের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, ট্যানারি শিল্প থেকে প্রাপ্ত কঠিন ও তরল বর্জ্য নিষ্কাশন ও ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রযুক্তি, চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্যের ডিজাইন ও ম্যানুফ্যাকচারিং, মার্চেন্ডাইজিং, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, লাইফ সাইকেল অ্যান্ড কোয়ালিটি অ্যাসেসমেন্ট ও কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ফর লেদার অ্যান্ড লেদার প্রোডাক্টস বিষয়ে জ্ঞানলাভ করে থাকে। নতুন কারিকুলামে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে তারা ট্যানারি, ফুটওয়্যার ও লেদার প্রোডাক্টস কারখানায় গিয়ে হাতেকলমে কাজ শিখতে পারেন। এভাবে তারা কাজের বিষয়ে দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং কারখানাগুলোয় তাদের চাহিদা শীর্ষে।

প্রশ্ন :

বাটাসহ অন্যান্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে এখানকার শিক্ষার্থীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ কেমন?

উত্তর: বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে আমাদের শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট চাকরির সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ফুটওয়্যারের অনেক চাহিদা থাকায় বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বায়িং হাউস যেমন ডায়েচম্যান, হুগু বস, ডেকাথলন, পোমা ও টিম্বারল্যান্ডে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন।

প্রশ্ন :

বিদেশে লেদার টেকনোলজির শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ কেমন?

উত্তর: চীন, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের ট্যানারি, ফুটওয়্যার এবং লেদার প্রোডাক্টস–সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমাদের শিক্ষার্থীদের চাকরির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিশ্বখ্যাত ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড অ্যাডিডাসে এই ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। সেখানে তাঁদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

প্রশ্ন :

চামড়ার তৈরি পণ্য বিক্রয় ও বিপণন এবং গবেষণা ও ব্যবসা উন্নয়নে এখানকার শিক্ষার্থীদের চাকরির সুযোগ কেমন?

উত্তর: দেশে চামড়ার গবেষণা খাত হিসেবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের চামড়া গবেষণা ইনস্টিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে, সাভার সিইটিপিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, সাভারের ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টেট, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন এবং বাংলাদেশ এসএমই ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন পদে চামড়াশিল্পের গবেষণা ও ব্যবসায়িক উন্নয়নে চাকরির সুযোগ রয়েছে।