যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর করে কীভাবে চাকরিতে আবেদন শুরু করেন?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: আমি স্নাতকোত্তরের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ফেয়ারে অংশগ্রহণ করতাম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলতাম। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট নেয় কি না, চাকরির সুবিধা কেমন, ভবিষ্যতে ভিসা স্পনসর করবে কি না ইত্যাদি বিষয় জানার চেষ্টা করি। এসবের ওপর ভিত্তি করে আমি একটা কোম্পানি লিস্ট তৈরি করি, যেটা পরে আবেদন করতে বেশ সহায়ক ছিল। ক্যারিয়ার ফেয়ারে সিভি জমা দিয়ে রাখলে সবচেয়ে বেশি সাড়া পাওয়া যায়। এ ছাড়া লিংকডইন, ইনডিড ও গ্লাসডোরে প্রোফাইল আপডেট রেখেছি, এগুলোর মাধ্যমেও আবেদন করি। আমি শেষ বর্ষের শুরুতেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন শুরু করি।
চাকরির জন্য কতটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছিলেন?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করি। এর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে ডাক পাই। একাধিক ধাপে ইন্টারভিউ শেষে দুটি প্রতিষ্ঠান আমাকে চাকরি অফার করে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে আমি একটা অফার গ্রহণ করি।
যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি পেতে ইন্টারভিউয়ের ধাপগুলো কী কী?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমেই সিভির ওপর ভিত্তি করে একটি শর্টলিস্ট করবে। শর্টলিস্টেড হলে ফোন দিয়ে সাধারণ বিষয় নিয়ে আলাপ করবে ১০-১৫ মিনিট এবং একটি জুম ইন্টারভিউয়ের তারিখ ঠিক করবে। সেখানে তিন-চারজনের একটা প্যানেল থাকে। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, কেন চাকরিতে আগ্রহী ও আপনার দেশীয় সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ২ ঘণ্টার মতো আলাপ করে। এই ধাপ শেষে আপনাকে পছন্দ হলে সরাসরি তাঁদের অফিসে ডাকবেন। এ ক্ষেত্রে যাতায়াতভাড়া, থাকা-খাওয়া সব কোম্পানিই বহন করে। সেখানে আরও তিন-চার ধাপে প্রায় ৪ ঘণ্টা ইন্টারভিউ হবে।
আপনাকে কয়টি ধাপে ইন্টারভিউ দিতে হয়েছিল এবং ধাপগুলো কী কী?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: আমার ক্ষেত্রে প্রথমেই মানবসম্পদ কোম্পানি সামগ্রিক কাঠামো বর্ণনা করে। এরপর তিনজনের একটা প্যানেলের সঙ্গে ইন্টারভিউ হয় প্রায় ১ ঘণ্টা। একজন জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী পুরো প্রতিষ্ঠান আমাকে ঘুরে দেখান। শেষ পর্যায়ে আরও দুজনের সঙ্গে ইন্টারভিউ হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় সবাই অনেক বন্ধুসুলভ ছিলেন। খুব কঠিন প্রশ্ন করেনি। সিভিতে যা লেখা ছিল, সেটাই ধরে আলোচনা করেছিল। সব প্রক্রিয়া শেষে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা নিয়ে আলোচনা করেছিল। পরে ই-মেইলের মাধ্যমে অফার লেটার পাঠিয়ে দেয়।
চাকরিতে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেমন?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: বড় শহরে বেতন কিছুটা বেশি হয়। যেমন নিউইয়র্ক, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস ইত্যাদি শহরে শুরুতে একজন মাস্টার্স গ্র্যাজুয়েট ৮০-১০০ হাজার ডলার বাৎসরিক আয় করতে পারেন। ছোট বা মাঝারি শহরে ৭০ থেকে ৯০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। চাকরির জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে শিফট হতে হলে শুরুতেই একটা রিলোকেশন বোনাস দেয়, যেটা ২ থেকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে। কোম্পানিভেদে বাৎসরিক প্রফিট শেয়ার, হেলথ ইনস্যুরেন্স, পেনশন, গাড়ির ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি সুবিধা দিয়ে থাকে।
চাকরিতে ওভারটাইম (অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা) পেমেন্ট আছে কি না?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে প্রতি ঘণ্টার জন্য দেড় থেকে দুই গুণ বেশি পেমেন্ট করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা-খাওয়ার খরচ কেমন?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: শুরুতেই একটা বড় অংশ কর কেটে রাখে, অঙ্গরাজ্যভেদে যার পরিমাণ ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের (ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট) প্রথম পাঁচ বছর মেডিকেয়ার ও সামাজিক নিরাপত্তা (সোশ্যাল সিকিউরিটি) দিতে হয় না। সে হিসাবে ১৫-২০ শতাংশ কর আসবে। বাসাভাড়া বড় শহরে এক বেড রুম অ্যাপার্টমেন্ট ২ হাজার ৫০০ ডলার আর ছোট শহরে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
চাকরিতে ছুটি কেমন পাওয়া যায়?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: পেইড ছুটি প্রথম বছরে ১০-১৫ দিন থাকে। চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে ছুটি বাড়তে থাকে।
চাকরির শুরুতে প্রশিক্ষণ দেয় কি?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: প্রায় প্রতিটি কোম্পানিতেই শুরুতে একটা লম্বা প্রশিক্ষণের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এ ছাড়া বছরজুড়ে মাঝেমধ্যেই ১-২ দিনের ট্রেনিং চলতেই থাকে।
কাজের চাপ কেমন?
সৈয়দ তাহমিদ হোসেন: সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের অনেক বেশি ফিল্ডে যেতে হয়। সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বাইরেও প্রায় সময়ই ওভারটাইম করতে হয়। তবে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি থাকায় কাজের চাপ থাকলেও পরিবারকে সময় দেওয়া যায়।