‘আপনি বেসরকারি ব্যাংক ছেড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন আসতে চাইছেন’

মো. মাহমুদুল ইসলাম

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (সাধারণ) পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা আগামী ২ মে শুরু হবে। সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যাঁরা বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করছেন, পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতির সুবিধার্থে তাঁদের মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ পর্বে নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকে সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ পাওয়া মো. মাহমুদুল ইসলাম।

নিয়োগ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ২০তম হয়েছিলেন মো. মাহমুদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১৪ থেকে ১৫ মিনিটের মতো তাঁর ভাইভা নেওয়া হয়। ভাইভা বোর্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর, একজন ডিরেক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের দুজন সিনিয়র শিক্ষকসহ মোট চারজন সদস্য ছিলেন।  

মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ভাইভা শেষ হওয়ার পর খুব ভালো লেগেছিল। ভাইভা রুম থেকে বের হওয়ার সময় বাইরে অপেক্ষমাণ একজন পরীক্ষার্থী আমাকে কেমন হলো জিজ্ঞেস করায় বলেছিলাম, সুপার। মনে হয়েছিল, ইনশা আল্লাহ টিকে যাব। পরে তা সত্যি হয়ে যায় এবং ফাইনাল রেজাল্ট শিটে মেধাতালিকায় ২০তম স্থানে আমার নামটি দেখতে পাই।

মো. মাহমুদুল ইসলাম এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক। তিনি তাঁর মৌখিক পরীক্ষার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন।

প্রার্থী : May I come in, Sir?

বোর্ড চেয়ারম্যান: Off course. আসুন।

প্রার্থী: আসসালামু আলাইকুম স্যার। (আমি স্যারদের বসতে বলার অপেক্ষায়)...

বোর্ড চেয়ারম্যান: বসুন।

প্রার্থী: Thanks a lot Sir..

বোর্ড চেয়ারম্যান: তো মো. মাহমুদুল ইসলাম, আপনি কোথা থেকে পড়াশোনা করেছেন?

প্রার্থী : স্যার, আমি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (রুয়েট) থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি।

আরও পড়ুন

বোর্ড চেয়ারম্যান: আচ্ছা, ইঞ্জিনিয়ার। আপনি এখন কি কোথাও চাকরি করছেন?

প্রার্থী: জি স্যার, আমি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংকে অফিসার হিসেবে হেড অফিস জেনারেল সার্ভিস ডিভিশনে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছি।

সদস্য-১: ওহ, এক্সিম ব্যাংক হেড অফিস। বাহ, এক্সিম ব্যাংক তো ভালো ব্যাংক। আপনি এক্সিম ব্যাংক ছেড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন আসতে চাইছেন? ওইখানে বেতন বেশি না?

প্রার্থী: স্যার, বেতন মোটামুটি একই ধরনের। কিন্তু আমি দেশের অর্থনীতিতে বৃহদর্থে অবদান রাখতে চাই। এ ছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক দেশের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস জবগুলোর একটি। এ জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংকে আসতে চাই।

সদস্য-১: আচ্ছা বলুন তো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ কী কী?

প্রার্থী: বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের মুদ্রানীতি ও ঋণনীতি প্রণয়ন করে থাকে, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা ছাপানোর কাজ করে, বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের রেগুলেটরি বডি হিসেবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করে। ডিরেক্টর স্যার আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, এটাই শুনতে চাইছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের রেগুলেটরি বডি। এ জন্যই আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকে আসবেন।

প্রার্থী : জি স্যার। অবশ্যই।

বোর্ড চেয়ারম্যান: আপনি এক্সিম ব্যাংকে জেনারেল সার্ভিসেস ডিভিশনে কী ধরনের কাজ করেন?

প্রার্থী: স্যার, আমি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে নতুন ব্রাঞ্চ, সাব-ব্রাঞ্চের জন্য ফ্লোর ম্যাজারমেন্ট, অটোক্যাড-এ লে-আউট ড্রয়িং, সেখানে ফিজিক্যালি ভিজিট করি, জেনারেটরের পার্টটা দেখাশোনা করি। এ ছাড়া অফিস নোটিং, বোর্ড মেমো, ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া—এসব কাজও করে থাকি।

বোর্ড চেয়ারম্যান: So, you are an engineer in the bank.

প্রার্থী: জি স্যার।

বোর্ড চেয়ারম্যান: আচ্ছা, বলুন তো, দেশে মোট কয়টি ব্যাংক আছে?

প্রার্থী: স্যার মোট ৬৬টি ব্যাংক আছে। ৬১টি তফসিলি ও ৫টি অ-তফসিলি।

বোর্ড চেয়ারম্যান: দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোকে একটি দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করেন?

প্রার্থী: স্যার, দুই ভাগ। কনভেনশন ব্যাংক ও ইসলামি ব্যাংক।

বোর্ড চেয়ারম্যান: শুধু ইসলামি নাকি...

প্রার্থী: স্যার, শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংক।

বোর্ড চেয়ারম্যান: গুড। শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংক। কেন শরিয়াহভিত্তিক বলছি?

প্রার্থী: স্যার, এ ব্যাংকগুলো তাদের লেনদেনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়াহর পরিপালন করে।

বোর্ড চেয়ারম্যান: এমন ব্যাংক কয়টি?

প্রার্থী: স্যার, ১০টি।

বোর্ড চেয়ারম্যান: কয়েকটি নাম বলুন তো..

প্রার্থী: এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড...আমাকে থামিয়ে স্যার বললেন, আপনি আপনার এক্সিম ব্যাংকের নাম বললেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু আপনি সবচেয়ে পপুলার ইসলামী ব্যাংকটার নামই বললেন না...

প্রার্থী: সরি স্যার, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

আরও পড়ুন

বোর্ড চেয়ারম্যান: এটাই শুনতে চাইছিলাম। এটা তো আরও আগে বলার কথা ছিল (মুখে হাসি)...

প্রার্থী: জি স্যার।

সদস্য-২: আচ্ছা বলুন তো, বাংলাদেশে বিশেষ কোনো কাজের জন্য কয়টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও কী কী?

প্রার্থী: ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

সদস্য-৩: বাংলাদেশে সর্বশেষ আমরা দুইটা ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছি, কোনোটা কোনোটা?

প্রার্থী: স্যার বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক আর সিটিজেন ব্যাংক।

সদস্য-৩: বাংলাদেশে ফরেন ব্যাংক কয়টি আছে?

প্রার্থী: ৯টি।

সদস্য-৩: নামগুলো বলুন।

প্রার্থী: কয়েকটি বলতেই স্যাররা আমাকে বাকি কয়েকটিতে সাহায্য করলেন।
সদস্য-২: আচ্ছা বলুন তো, সিটি ব্যাংক বাংলাদেশে কয়টি?

আমি: স্যার, ২টি। একটি সিটি ব্যাংক লিমিটেড আর একটি সিটি ব্যাংক এনএ।

সদস্য-১: পরের সিটির বানান বলুন তো?

প্রার্থী : Citi...

(স্যারের মুখে হাসি)...

সদস্য-১: এনএ মানে কী বলুন তো?

প্রার্থী: ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন।

বোর্ড চেয়ারম্যান: এবার বলুন বাংলাদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান কতটি?

প্রার্থী: স্যার ৩৪টি।

বোর্ড চেয়ারম্যান: ৩৫টি হওয়ার কথা। কোনটি বাদ দিলেন?

প্রার্থী: সরি স্যার। আমি ৩৪টিই পড়েছিলাম। শেষেরটি আমার জানা নেই।

সদস্য-১: এখনো মনে হয় বইয়ে আসেনি, স্যার। আমরা অনুমোদন দিয়েছি।

বোর্ড চেয়ারম্যান: জেনে নেবেন। কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম বলুন।

প্রার্থী: আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি, উত্তরা ফাইন্যান্স...

বোর্ড চেয়ারম্যান: আচ্ছা বলুন, এই মাসে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি কত?

প্রার্থী: স্যার ৫.৭৮%।

বোর্ড চেয়ারম্যান: এটা কি ইয়ার অন বেসিসে, নাকি পয়েন্ট টু পয়েন্ট?

প্রার্থী: সরি স্যার, বিষয়টা আমার একটু জানতে হবে।

সদস্য-২: আচ্ছা আপনি তো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন, আপনি চাকরি হলে এখানে থাকবেন,  নাকি পিডিবি, পিজিসিবি এসবে চলে যাবেন?

প্রার্থী: স্যার, অবশ্যই থাকব। বাংলাদেশ ব্যাংকেই আমি ক্যারিয়ার গড়তে চাই।

সদস্য-১: তাইলে আপনাকে ভবিষ্যতে আরও অনেক ডিগ্রি নিতে হবে, অনেক পড়াশোনা করতে হবে, বুঝছেন তো?

প্রার্থী : জি স্যার। অবশ্যই। স্যাররা সবাই বললেন, আচ্ছা আপনি এখন আসতে পারেন।

প্রার্থী: আমি সবাইকে হাসিমুখে সালাম দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।