অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি পড়লে আছে দেশি-বিদেশি ভালো চাকরির সুযোগ

অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে অনেকে বড় বড় দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পান। যাঁরা শিক্ষার্থী, তাঁদের অনেকেই এ বিষয়ে জানেন না। এ ছাড়া দেশের বাইরে কোথায় এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে, তা-ও অনেকে জানেন না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোছাব্বের হোসেন

প্রথম আলো:

অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি বা ফলিত রসায়ন বিষয়ে কিছু বলুন। এখানে কী কী পড়ানো হয়?

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি বিভাগের লক্ষ্য ছিল এমন জনবল তৈরি করা, যাঁরা দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করবে এবং বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিয়ে আসবে। সেই ভাবনা মাথায় রেখেই এ বিভাগের সিলেবাস এমনভাবে সাজানো হয় যে কেমিস্ট্রি এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি বিস্তারিত পড়ানোর সুযোগ আছে। যেসব ইন্ডাস্ট্রি পড়ানো হয়, ওগুলোর মধ্যে সার, কাগজ, সিমেন্ট, রং, চামড়া, বস্ত্র, পানি পরিশোধন, ব্যাটারি, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প উল্লেখযোগ্য।

প্রথম আলো:

অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রিতে পড়লে কোথায় কোথায় চাকরির সুযোগ আছে?

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: এ বিভাগ থেকে পাস করে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বিসিআইসির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সার কারখানা (আশুগঞ্জ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার), কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি (বিএএসএফ), বেক্সিমকো, স্কয়ার, ইনসেপটা, বার্জার, বাটা, নেসলে ইত্যাদি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরিরত আছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ এ বিভাগে এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি, কেমিস্ট্রি, টেক্সটাইল বিভাগ, লেদার ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। কিছু ছাত্রছাত্রী আবার বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। দেশের বাইরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিতে বিজ্ঞানী হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো, শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে থাকেন। অনেকেই ইদানীং উদ্যোক্তা হওয়ার দিকেও ঝুঁকছেন। এককথায় আমাদের ছাত্রছাত্রীরা অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা কাজে লাগিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন রকম চাকরি সুনামের সঙ্গে করে যাচ্ছেন।

প্রথম আলো:

এ বিষয়ে পড়লে নতুনদের চাকরির সুযোগ কোথায়?

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি বিষয় পড়লে দেশের ভেতরে ও বাইরে সরকারি-বেসরকারি নানা চাকরির সুযোগ আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, বিসিএস ক্যাডার, ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, বহুজাতিক কোম্পানি (বার্জার, বাটা, নেসলে) ইত্যাদি। এ ছাড়া বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক্টরাল ফেলো, বিজ্ঞানী ও শিক্ষক হিসেবে চাকরির সুযোগ আছে।

প্রথম আলো:

অভিজ্ঞদের চাকরির সুযোগ কোথায়? বেতন কেমন?

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: আসলে চাকরির ক্ষেত্র সবার জন্য প্রায় একই। সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীরা যেসব ফিল্ডে জব করছেন, অভিজ্ঞরাও একই ক্ষেত্রে চাকরি করছেন। পার্থক্য হচ্ছে, অভিজ্ঞদের জন্য এক চাকরি থেকে আরেক চাকরিতে যাওয়া অনেকটাই সহজ। আর এর থেকেও বড় ব্যাপার হচ্ছে বেতনের স্কেল। দেশের ভেতরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি পে-স্কেলে বেতন ভোগ করে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনেকেই ৫-৬ সংখ্যায় বেতন ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। বিদেশে পিএইচডি করে অনেকেই বার্ষিক ৯০,০০০-১২০,০০০ ইউএসডি ডলার বেতনে চাকরি শুরু করে থাকেন। অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে বেতন ও চাকরিজনিত সুযোগ-সুবিধা বাড়তে থাকে। তবে ইদানীং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার এবং স্টার্টআপ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

প্রথম আলো:

দেশের বাইরে পড়াশোনার জন্য কোথায় কোথায় সুযোগ আছে?

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কারিকুলাম ডিজাইন করা হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। আমাদের এ প্রোগ্রামে কেমিস্ট্রির সব ফিল্ড, যেমন সাধারণ কেমিস্ট্রি, অর্গানিক, ইন-অর্গানিক, ফিজিক্যাল, অ্যানালাইটিক্যাল কেমিস্ট্রি সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়। এ ছাড়া কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল টেকনোলোজি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স ও পলিমার সায়েন্স বিস্তারিত পড়ানো হয় এবং এসব বিষয়ের ব্যবহারিক ক্লাস করানো হয়। ফলে এই ডিপার্টমেন্ট থেকে পাস করে দেশের বাইরে বিভিন্ন ফিল্ডে মাস্টার্স এবং পিএইচডি করার সুযোগ আছে। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্নাতকোত্তর উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পড়তে যাচ্ছেন। অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি থেকে স্নাতক শেষ করে শিক্ষার্থীরা কেমিস্ট্রি, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফাইবার অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স, ফরেস্ট বায়োম্যাটেরিয়ালস, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড সায়েন্স ইত্যাদি বিভিন্ন প্রোগ্রাম থেকে মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করছেন। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের সিংহভাগ ইউএসএর বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে যাচ্ছেন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনে, যেগুলোর মধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা, ভার্জিনিয়া, আটলান্টা, সাউথ ডাকোটা, ফ্লোরিডা, কানসাস, শিকাগো, কানেটিকাট, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস উল্লেখযোগ্য।

প্রথম আলো:

এ থেকে অন্য পেশায় যাওয়ার প্রবণতা কেমন?

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: দেশে ও বিদেশে অ্যাপ্লায়েড কেমিস্ট্রি এবং কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিসিএস ক্যাডার ছাড়া সাধারণত কেউ এ পেশা থেকে অন্য পেশায় যায় না। চাকরি পরিবর্তন করার সময়ও সবাই ক্ষেত্র ঠিক রেখে চাকরির প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেন।

প্রথম আলো:

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ। আশা করি, এ সাক্ষাৎকারের তথ্য আগ্রহীদের কাজে লাগবে।