বছরে গড়ে একটি বিসিএস সম্পন্ন করেছি

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। সম্প্রতি দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে পিএসসির বর্তমান নিয়োগপ্রক্রিয়া, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতার নানা দিক উঠে এসেছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোছাব্বের হোসেন।

ড. মোহাম্মদ সাদিক

প্রশ্ন :

আপনি পিএসসিতে কত বছর ধরে আছেন? কটি বিসিএসের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন?

ড. মোহাম্মদ সাদিক: ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বরে আমি বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে যোগদান করি। এরপর ২০১৬ সালের ২ মে আমাকে পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে হিসাবে প্রায় ছয় বছর এই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে আসছি।

চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৩৫তম থেকে ৩৯তম পর্যন্ত মোট পাঁচটি বিসিএসের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা গেছে। এ ছাড়া বর্তমানে ৪০তম ও ৪১তম বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রম চলমান। গত পাঁচ বছরে পাঁচটি বিসিএস শেষ করায় প্রতিবছর গড়ে একটি বিসিএস সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।

প্রশ্ন :

এ সময়ে কতজন ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?

মোহাম্মদ সাদিক: ২০১৬ সালের ২ মের পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি বিসিএস পরীক্ষায় মোট ১৪ হাজার ৮১৩ জনকে ক্যাডার পদে এবং তিনটি বিসিএস থেকে ৫ হাজার ৪৬ জনকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

বিসিএস ছাড়া শুধু পৃথক নন-ক্যাডার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি মোট ৩০ হাজার ৯৭৮ জনকে বিভিন্ন নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রশ্ন :

পিএসসির কোন কোন দিকে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে? তথ্যপ্রযুক্তিতে কোন দিকগুলোর পরিবর্তন এসেছে?

মোহাম্মদ সাদিক: আপনারা জানেন, পিএসসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। যেহেতু প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি নির্বাচন করা এ প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক দায়িত্ব, সেহেতু নিয়োগপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি বিষয়ে উন্নতি করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। এ সময়ে আমরা বেশ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা বলি, শতভাগ ক্ষেত্রে আমরা অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা চালু করেছি। নিয়োগসংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র জমাদানের জন্য প্রার্থীদের এখন আর পিএসসিতে আসতে হয় না। আমরা সব ধরনের কাগজ অনলাইনে গ্রহণের ব্যবস্থা করেছি। মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে পরীক্ষার সময়সূচি ও আসন ব্যবস্থাপনা এবং নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল আমরা চাকরিপ্রার্থীদের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিতে পেরেছি।

প্রশ্ন :

আপনি থাকাকালে পিএসসির পরীক্ষাপদ্ধতির কোনো পরিবর্তন এসেছে কি?

মোহাম্মদ সাদিক: আপনারা জেনে থাকবেন, এর আগে বিভিন্ন সময়ে বিসিএসসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো। আমরা প্রশ্ন ফাঁস শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছি। পরীক্ষার ঠিক ৩০ মিনিট আগে লটারির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সেট নির্ধারণ করা হয়।

বিসিএস পরীক্ষার উত্তরপত্র পরীক্ষণের জন্য দুজন পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়নের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। এতে নিয়োগ পরীক্ষায় অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া নন-ক্যাডার পরীক্ষায় আরও স্বচ্ছতার জন্য চারটি ভিন্ন রঙের প্রশ্নের ওএমআর উত্তরপত্র ও প্রশ্নপত্র মুদ্রণের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে।

বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করায় ইংরেজি মাধ্যমের প্রার্থীরা নতুন করে বিসিএস পরীক্ষার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া নন-ক্যাডার পরীক্ষায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একই গ্রেডের বা কাছাকাছি পদের জন্য আমরা আলাদা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও আলাদা পরীক্ষা না নিয়ে একসঙ্গে নিয়োগের সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। এতে আমাদের অনেক সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়েছে।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রুতলেখক হিসেবে প্রশিক্ষিত রোভার স্কাউট টিম গঠনের মাধ্যমে আমরা তাঁদের পরীক্ষা নিয়ে থাকি। পাশাপাশি তাঁরা যেন সহজে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, এ জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষার হলের নিচতলাতেই তাঁদের আসন ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে। বিসিএস পরীক্ষা চলাকালে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, হল তত্ত্বাবধায়ক ছাড়াও কমিশনের বিশেষ ভিজিল্যান্স টিম কাজ করে থাকে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বিসিএস পরীক্ষার আগে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষক, হলপ্রধান, নিয়োগকৃত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে সেমিনার আয়োজন করা হয়।

বিসিএস প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার বোর্ড ওই দিন সকালে গঠন করা হয়ে থাকে। প্রথমবারের মতো চাকরিপ্রার্থীদের পরিচয় নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে, অর্থাৎ কেউ যাতে জালিয়াতি করার সুযোগ না পান, সে জন্য আবেদনপত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র সংযোজনের বিষয়টি আনা হয়েছে।

একটি ত্রুটিমুক্ত পরীক্ষা আয়োজনের লক্ষ্যে কমিশনের বিজ্ঞ সদস্যরা আমাদের প্রতিটি কাজে সহযোগিতা করেন। কমিশন সচিবালয়ের সচিব, সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আমাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। কমিশনের অভিজ্ঞ রিসোর্স পারসন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মডারেশন ও মূল্যায়নের কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, মিডিয়ার সহকর্মী, চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থী, তাঁদের শিক্ষক ও অভিভাবকেরা আমাকে আমার কাজে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বলেই আমি আমার কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারি। এ জন্য সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

প্রশ্ন :

তরুণদের প্রধান আকর্ষণ বিসিএস কেন?

মোহাম্মদ সাদিক: বেশির ভাগ মেধাবী শিক্ষার্থীর অন্যতম লক্ষ্য থাকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদানের মাধ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করা। সে জন্য তরুণদের স্বভাবতই বিসিএসের প্রতি ঝোঁক থাকে। সরকার ২০১৫ সালে নতুন বেতনকাঠামো প্রণয়ন করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে। বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সামাজিক মর্যাদা এবং সরাসরি জনগণের সেবা করার সুযোগ বেশি। ফলে, চাকরি হিসেবে তরুণদের মূল আকর্ষণ হয়ে পড়ে বিসিএস।

বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলে একজন চাকরিপ্রার্থীর জন্য অন্য যেকোনো চাকরি পাওয়া সহজ হয়। বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যেসব প্রার্থীকে পদস্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে সুপারিশ করা সম্ভব হয় না, তাঁদের সবাইকে নন-ক্যাডার বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এটাও চাকরিপ্রার্থীদের বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে থাকে।

এ ছাড়া কোনো ধরনের চেষ্টা–তদবির ছাড়াই যোগ্যতার ভিত্তিতে একজন পরীক্ষার্থী তাঁর পছন্দের ক্যাডার হতে পারছেন। স্বচ্ছতার কারণে পিএসসির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে। আর এ স্বচ্ছতার মূল কারণ হলো কাজের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। পিএসসির কাজে সরকার কখনো হস্তক্ষেপ করেনি বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে সরকার সব সময় আমাদের সহযোগিতা করেছে। যার ফলে যোগ্য প্রার্থীরাই চাকরি পাচ্ছেন। এটাও অন্যতম একটা কারণ বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন :

পিএসসির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন?

মোহাম্মদ সাদিক: স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীকে প্রজাতন্ত্রে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা পিএসসির সাংবিধানিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবাই আমাদের সবদিক থেকে সহযোগিতা করেছেন। সরকার কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে, আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি।

চাকরিপ্রার্থীরা জানেন যে এখানে মেধার মূল্যায়ন হয়। অন্য কোনো যোগ্যতা দিয়ে চাকরি হয় না। তাই তাঁরা আগে থেকেই বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। বিসিএস পরীক্ষার ভাইভায় পাস করে এখন আর কেউ চাকরি না নিয়ে ফেরেন না। এ জন্য সরকারি চাকরির জন্য মেধাবীদের অন্যতম ভরসাস্থল এই পিএসসি। সম্প্রতি সরকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সব পদে নিয়োগের সুপারিশ করার জন্য পিএসসিকে প্রস্তাব করেছে।

প্রশ্ন :

কবে থেকে অবসরে যাচ্ছেন? অবসরে কী করার পরিকল্পনা আছে?

মোহাম্মদ সাদিক: আশা করি, ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পিএসসি থেকে অবসরে যাচ্ছি। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে আগে থেকেই লেখালেখি করেছি। মাঝেমধ্যে সাহিত্যচর্চা করেছি। অবসর সময়ে সাহিত্য, গবেষণা ও লেখালেখির কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই।

প্রশ্ন :

ভাইভায় প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেওয়া দরকার? কিছু বিষয় বা আদবকেতা নিয়ে কিছু বলুন?

মোহাম্মদ সাদিক: বিসিএস পরীক্ষার ভাইভা খুব সহজ বা খুব কঠিন তা বলা যায় না। ভাইভা বোর্ডে একজন প্রার্থী সব কটি প্রশ্নের উত্তর জানা থাকবে, এমনটাও ভাবা হয় না। তবে ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতিতে একজন প্রার্থী কীভাবে নিজেকে সামাল দিচ্ছেন, সেটা বিবেচনা করা হয়। বোর্ডের সদস্যরা ভাইভার পুরোটা সময় ধরে একজন প্রার্থীর সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে থাকেন।

একজন প্রার্থী যে পদের জন্য আবেদন করেছেন, সে বিষয় সম্পর্কে তাঁর জানাশোনা কেমন, সেটাও দেখা হয়। এ ছাড়া ভাইভায় প্রার্থী কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন, বিশেষ করে তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর ভেতরের মানুষটাকে চেনার চেষ্টা করা হয়।

প্রশ্ন :

ক্যাডার–বৈষম্য নিয়ে আপনার অভিমত কী?

মোহাম্মদ সাদিক: পিএসসি ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে থাকে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাঁদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। বিসিএস আবেদনের সময় একজন প্রার্থী তাঁর ক্যাডার পছন্দক্রম পূরণ করে থাকেন। এরপর চূড়ান্ত ফলাফলে মেধা ও পছন্দ অনুযায়ী একজন প্রার্থী তাঁর পছন্দক্রম থেকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। বিসিএসের নিয়োগবিধিমালায় বিভিন্ন ক্যাডারের কার্যক্রম এবং কীভাবে পরিচালিত হবে, তা উল্লেখ আছে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই বিভিন্ন ক্যাডারকে বিভিন্ন দায়িত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে। বিদ্যমান ক্যাডারগুলোর মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন কমিটি সময়ে সময়ে সরকারকে সুপারিশ করেছে। কিছু কিছু কার্যক্রম সরকার বাস্তবায়ন করেছে। যদিও এতগুলো ক্যাডারের মধ্যে সমতা বিধান করা কঠিন কাজ; আরও কিছু কার্যক্রম নেওয়া হলে ধীরে ধীরে বৈষম্য কমে আসবে।

প্রশ্ন :

পিএসসির কোন কোন দিক পরিবর্তন হওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?

মোহাম্মদ সাদিক: দেখুন, পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ১০ বছর আগে পিএসসি যে রকম ছিল, আজ তেমন নেই। হয়তো আগামী ১০ বছর পর আরও পরিবর্তন হবে। আগে পিএসসির নিজস্ব কোনো ভবন ছিল না। সরকারের উদ্যোগে আমরা নতুন কমিশন ভবন পেয়েছি। এখন প্রতিবছরই বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে। আগে একটা বিসিএস শেষ করে পরের বিসিএস শুরু করা হতো। বর্তমানে আমরা একই সময়ে একাধিক বিসিএস নিয়ে কাজ করছি।

আমরা ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এ জন্য পিএসসিকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করা দরকার। পিএসসি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ প্রায় শেষের পথে।

আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো আরও সক্রিয় করার জন্য পিএসসির নিজস্ব জমিতে নিজস্ব ভবন নির্মাণের প্রকল্প চলমান। প্রতিটি বিভাগে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য একটি বৃহৎ মাল্টিপারপাস হলরুম স্থাপন করা হবে। বছরব্যাপী নিয়োগ পরীক্ষাগুলো এখানে আয়োজন করা যাবে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যাবে। আশা করি, এ প্রকল্প সমাপনান্তে পিএসসির সক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে।

বর্তমানে কমিশনের নিজস্ব উদ্যোগে কমিশন ভবনে প্রস্তুতকৃত প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। গত বছরে এভাবে প্রায় ৭৫টি নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। আশা করি, আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হলে এ বিষয়ে কাজ করার সুযোগ থাকবে।

আমার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে বিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস ও কারিকুলাম যুগোপযোগী করার ইচ্ছা ছিল। শেষ দিকে এসে করোনার কারণে তা আর করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের একটি প্রকল্প চলমান আছে, যার মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ডিজিটাল প্রশ্নব্যাংক গঠনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়েও পরবর্তী সময়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। পরিবর্তন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমি আশা করব, পিএসসি ভবিষ্যতে আরও ভালো করুক আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাক।

প্রশ্ন :

আপনার সময়ে সবচেয়ে সফল কাজ কী? কোনো অতৃপ্তি আছে কি না?

মোহাম্মদ সাদিক: সফলতার কথা যদি বলতেই হয়, তাহলে আমি বলব, স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে মেধাবী, যোগ্য ও উপযুক্ত প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা। এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকার আমাকে যেমন পুরোপুরি স্বাধীনতা প্রদান করেছে ও আস্থা রেখেছে, তেমনি আমার সহকর্মীরা সব সময় আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এ জন্য আমি উভয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

২০১০ সালের নন-ক্যাডার নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী বিসিএস থেকে উত্তীর্ণ কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে যাঁদের ক্যাডার পদে সুপারিশ করা যায়নি, তাঁদের বেশির ভাগ প্রার্থীকে আমরা কোনো না কোনো চাকরিতে সুপারিশ করতে পেরেছি। ফলে, এ প্রক্রিয়ার প্রতি চাকরিপ্রার্থীদের আগ্রহ, ভালোবাসা ও আস্থা সৃষ্টি করা গেছে। এটি সম্ভব হয়েছে আমার সহকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতার ফলে।

অতৃপ্তির বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। আসলে আমি চেষ্টা করেছি আমার অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে। বিসিএস সিলেবাস পুনর্বিন্যাসের কাজটি করার ইচ্ছা থাকলেও করোনার জন্য কাজটি করা হয়ে ওঠেনি। করোনা পরিস্থিতি না হলে হয়তো আমরা আরও কিছু কাজ সম্পন্ন করতে পারতাম।

প্রশ্ন :

যখন এসেছিলেন, তখন কেমন ছিল? আর যখন চলে যাচ্ছেন, তখন কেমন রেখে যাচ্ছেন?

মোহাম্মদ সাদিক: যখন এসেছিলাম, তখন পিএসসি ভালোই চলছিল। আমি প্রথমে এ কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করি। এর দেড় বছর পর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। তাই অতীত অভিজ্ঞতা আমাকে আমার কাজে সহযোগিতা করেছে।

আপনি যদি লক্ষ করেন, দেখবেন যে ২০০১-০৮ সাল পর্যন্ত ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ১৬ হাজার ৩৬৫ জনকে পরে ২০০৯-১৯ সাল পর্যন্ত ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ৩১ হাজার ৪৩৭ জনকে, যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া নন-ক্যাডার পদে ২০০১-০৮ সাল পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ২০ হাজার ২৫৫ জনকে, পরে ২০০৯-১৯ সালে নিয়োগ দেওয়া হয় ৬৭ হাজার ৪৭১ জনকে, যা আগের তুলনায় প্রায় তিন গুণ।

পিএসসি অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো ভালো কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণের যে আস্থার জায়গা আমরা তৈরি করতে পেরেছি, সেটি অক্ষুণ্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট সবার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রশ্ন :

কাজের বাইরে আপনি কবিতা লেখেন, সাহিত্যচর্চা করেন। সেটা নতুন করে শুরু করবেন কি না?

মোহাম্মদ সাদিক: আমি সাহিত্যের ছাত্র। সৃজনশীল লেখা ও আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে কিছু গবেষণা করার সুযোগ আমার হয়েছিল। সরকারি চাকরির দায়িত্ব পালনকালে আমি এগুলোয় সময় কম দিতে পেরেছি। মানুষের পেশা বা দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তিগত কিছু আগ্রহ থাকে। ভবিষ্যতে সৃজনশীল লেখালেখি ও কিছু গবেষণার কাজ করার আগ্রহ আছে।